ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক ব্যক্তির বদ্ধ ঘরে মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে পরিবারের লোকজন তাঁকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে রাখে। মৃত্যুর পরও তাঁরা কাছে আসেননি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন।
গতকাল রোববার রাতে নিজ বাসায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে অনেক ডাকাডাকি করলেও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতারা। পরে প্রশাসনের সহায়তায় পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে তাঁর দাফন হয়।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সাহাব উদ্দিন (৫৫)। তিনি জ্বর, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
সাহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে একটি পেট্রলপাম্পে চাকরি করতেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত বুধবার রাতে বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাত থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি বেড়ে যায়। এর পরদিন সকালে তিনি হাসপাতালে গিয়ে কোভিড–১৯ আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। দুপুরে বাড়িতে আসলে পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন এবং তাঁকে এক ঘরে বদ্ধ করে রাখেন। সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা রয়েছেন। দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। মৃত্যুর সময় বাকিরা সবাই বাড়িতে ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মৃত সাহাব উদ্দিনের ছোট ছেলের বরাত দিয়ে জানান, গতকাল হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে পরিবারের কেউ সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুরে তাঁকে খাবারও দেননি। বিকেলে তাঁর শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি।তাঁকে শয়নকক্ষে রেখে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রাখেন পরিবারের সদস্যরা। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাঁকে বোনেরা বাধা দেন। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যু হয়। রাতে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন। এরপর সবাই যাঁর যাঁর ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে ছোট ছেলে 'বাবা মারা গেছে' বলে চিৎকার শুরু করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আশপাশের অন্য লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্রামপুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে ছুটে যান। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর পরিবারের একজন দরজা খুলে দিয়ে নিজ কক্ষে চলে যান। এরপর তিনি লাশ দাফন করার জন্য স্থানীয় মসজিদ থেকে খাটিয়া আনতে লোক পাঠালে মসজিদ কমিটির লোকজন খাটিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান ও কবর দিতে বাধা দেন। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গভীর রাতে পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করেন।
খবরের লিনক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:৫০