আমিও তো করেছি পুজা
দিয়েছি অঞ্জলি, করেছি আরাধনা
ঘুচেছি সাধ্যমতো সমাজের বঞ্চনা।
খেয়েছি প্রসাদ, দিয়েছি ভোগ
প্রতিবেশি হাসি কান্না যোগ বিয়োগ।
এইতো গত ফেব্রুয়ারিতে ছিলোনা হাতে টাকা
কিনতে হবে মায়ের ঔষধ,
শ্যামলাল তুমি দেবতা হয়ে দিলে দেখা।
তোমার ধারের টাকায় কিনলাম ঔষধ,
রহিম ভাইয়ের দোকান হতে কিছু বাকি কিছু নগদ।
মনে আছে গত বছর,
পরিমল পারছিলোনা তার মেয়েকে কলেজে ভর্তি করতে
আমরা প্রতিবেশি পাচ ঘর দিলাম সাধ্যমতে।
আমি দিলাম আমার সাইকেলটি সুকন্যার যাতায়াতে,
এই নিয়ে তোমার বৌদির ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান প্রতি রাতে।
হাহা থাক সেসব কথা।
মনে আছে এই শীতে,
ফুটবল খেলায় জিতলো আমাদের গ্রাম।
কি আনন্দ, কি আনন্দ
গরু খাসিতে হিন্দু মুসলিমে
প্রীতি ভোজ সারারাত চালালাম।
মনে আছে এই বছর,
আসন্ন বর্ষায় আমাদের মরা নদি ভরে যাবে পানিতে।
এই ভেবে আগাম ব্যাবস্থা,
নইলে কোমড় পানি হবে সদরে যেতে।
এই জানুয়ারিতে আমরা বানালাম সাকো মরা নদির বুকে
আমি দিলাম দড়ি, হারাধন দিলো বাশ,
মনিলাল দিলো কাঠ, জব্বার দিলো দুপুরের খাবার।
মিলে মিশে দুই গ্রাম বানালাম আমরা সাকো আগাম বর্ষার।
হঠাত কোথা হতে কি হয়ে গেলো, দেশে এলো করোনা।
তুমি আমি হাসাহাসি, আরে এ কিছুনা।
চলছিল যেমন, চলেছে তেমন সকাল সন্ধ্যায় আড্ডা,
এর মধ্যে ঢাকা হতে এলো তোমার স্বজন, যে থাকত বাড্ডা।
গত সপ্তাহে গার্মেন্টসের কাজে যেতে হবে তাকে ফিরে
আমাকেই দিয়ে আসতে হবে তাকে,
আমার মটর বাইকে
অনুরোধ করলে বারেবারে।
তাকে পৌছে দিয়ে আসলাম যখন ঘরে
একটু কাশি, একটু জ্বর আমার দেহ জুরে।
আজ সকালে দেখি, সাদা কাপড়ে উঠোনের কোনায় আছি পরে।
দুরে কোথাও হচ্ছে জটলা, মিলিত সবার একমত এক কথায়,
কোনোভাবেই এই গ্রামে হবেনা আমার শ্রাদ্ধ, আগুন হবেনা চিতায়।
আমার সকল পুণ্য পাপ,
হাসি খুশি দুখের ভাগ,
এক নিমিষেই মুল্যহীন,
এই সমাজে, তোমার কাছে,
নেই কি আমার মৃত্যু ঋণ?!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৯