বাংলা ভাষার প্রথম এবং এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় ব্লগ হচ্ছে আমাদের এই সামু। সামুতে বিভিন্ন ধরনের ও মতাদর্শের ব্লগাররা ব্লগিং করেন। এই পোস্টে একজন ব্লগারের জীবনচক্র নিয়ে একটু গেজানোর ট্রাই মার্তাছি। এইটারে আপনি স্যাটায়ার বা সিরিয়াস পোস্ট- যা ইচ্ছা তাই ভাবতারেন। এই পোস্টটা দেয়ার কারন হচ্ছে কয়েকদিন পর একটা পোস্ট দিতে যাইতাছি, যার পরে হয়ত ব্যান খাইতারি তাই।
একজন ব্লগারের জেনারেলাইজড জীবনচক্রঃ
প্রথম ধাপঃ সামুর সাথে পরিচয়
একজন ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে ব্লগের সাথে পরিচিত হতে পারে।উপায়গুলো হতে পারেঃ
ফেইসবুকের শেয়ার করা পোস্টে ক্লীক করে সামুতে এসে তার সামুকে ভালো লেগে যায়।
গুগলে সার্চ দিয়ে কোন তথ্য খোজার মাধ্যমে সামু ব্লগের সাথে পরিচয়।
কোন বন্ধুর কাছ থেকে জেনে।
রেডিও, টিভি কিংবা পত্রিকা মারফতে।
দ্বিতীয় ধাপঃ নিক ওপেনিং
কয়েদিন ঘুরে-ফিরে সামুকে দেখে, আলোচ্য ব্যক্তিটি সামুতে নিক ওপেন করে ফেলে। এবং একজন ব্লগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তখন নবীন ব্লগারটি অবাক হয়ে দেখে তাকে সাতদিন সময় দেয়া হয়েছে, এরপরই কেবল সে অন্যের ব্লগে মন্তব্য করতে পারবে, তার লেখা প্রথম পাতায় আসবে। সে ভাবে, খালি সাতদিন যেতে দে, তারপর ফাটিয়ে দেবো। সাধারনত দেখা যায় সবারই প্রথম ধারনা থাকে, ব্লগ মানেই গল্প-কবিতা। নবীন ব্লগারটিও এর ব্যতিক্রম নয়। সেভাবে গল্প-কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যের আজকে যেই ভগ্নদশা সব কাটীয়ে দিবে।
তৃতীয় ধাপঃ অপেক্ষা এবং অপেক্ষা
সাতদিন পার হয়ে যায়, কিন্তু নবীন ব্লগার তো আর জেনারেল হয়ে না। সে অবাক হয়ে দেখে সামু ব্লগের সাতদিন আর সাহারা খাতুনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু নবীন ব্লগারটি ব্যাপক আগ্রহ আর উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। আর বিভিন্ন ব্লগারের ব্লগ চষে বেড়ায়, মন্তব্যে করতে না পাড়ার আফসোসে পুড়ে মরে।
এই ধাপের সুত্রঃ ওয়াচে থাকার সময় বাড়ার সাথে সাথে, ব্লগের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা ব্যস্তানুপাতিক হারে কমে।
এইধাপে ব্লগারটির লেখার পাঠক কেবল মডু-আল্লাহ-আর সে নিজে। মাঝে মাঝে কিছু অতি উৎসাহী সেইফ ব্লগার তার ব্লগে পা দিয়ে তাকে ধন্য করে। আর সে আল্লাদে গদ্গদ হয়ে ভাবে, আমি সেইফ হলে প্রত্যেকদিন ডানের পাশের এই নতুন ব্লগ অপশনটিতে আসব (জীবনের অন্যান্য প্রতিজ্ঞার মতই এই প্রতিজ্ঞাটিও সে কখনো রাখতে পারে না)
।
ভালো লিখুন, জেনারেল হবেন, মডুর এই আশ্বাসে সে ব্যাপকভাবে পোস্ট করতে থাকে। কপি-পেস্ট যার অন্যতম।
চতুর্থ ধাপঃ জেনারেল হওয়া
তিন/চার মাস এমনকি একবছর ধৈর্য্যের পরীক্ষায় দিয়ে ব্লগারটি এক সময় জেনারেল হয় (মডুর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে)। এই ধাপের প্রথম পোস্ট হচ্ছেঃ আমি জেনারেল হয়েছি,মিষ্টি খান। এইটাপের কিছু একটা।
তারপর ব্লগারটি ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে মন্তব্য আর পোস্ট করতে থাকে।তার লিখা ক্রমানুসারে পোষ্ট পাতায় প্রকাশিত হয়। ভালো লিখলে সবার কাছ থেকে, সকল মতের কাছ থেকে প্রশংসা পায়।আর সেইফ হবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মোটামুটি নিরুত্তাপভাবে তার এই ধাপ কাটে।
পঞ্চম ধাপঃসেইফ হওয়া
এটাই হচ্ছে একজন ব্লগারের ব্লগ জীবনের চুড়ান্ত ধাপ। ব্লগারটি তার মেধা-মনন দিয়ে সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিতে থাকে। গল্প-কবিতা-রাজনীতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে সে লিখতে থাকে।
কেউ কেউ ব্লগ সংকলন করে, সামু নিয়ে রিভিউ পোস্ট দেয়, রাজনৈতিক খেলায় মাতে, ১৮+ পোস্ট দেয়।
কেউ কেউ আবার এই ধাপে এসে মনে করে মুই কি হনুরে। আর তার এই হনুভাব তাকে এক সময় ক্যাচালে জড়িয়ে পড়তে, সিন্ডিকেটবাজীতে মেতে উঠতে বাধ্য করে।
ষষ্ঠ ধাপঃ ব্যান
ক্যাচালবাজ, সিন্ডিকেটবাজ ব্লগারটি তখন আমি কাউরে পুছি না, কাউরে চু*র টাইম নাই, আমিই সব এই টাইপের মন্তব্য ও পোস্ট করতে শুরু করে।এতদিনে গালিবাজী আর ট্যাগবাজীতে সিদ্ধহস্ত ব্লগারটি নিজেও অনেক গালাগালি এবং ট্যাগের স্বীকার হয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত চলে যায়। এমনকি মৃত্যুর হুমকি পর্যন্তও দেয়ার নজির আছে।
চুড়ান্ত পর্যায়ে শুরু হয় রিপোর্টিং-এন্টি রিপোর্টিং । যেহেতু সামু ব্লগে জাতীয়তাবাদীরা বৈমাত্রেয়, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাতীয়তাবাদীরা ব্যান খায়। আবার যে রিপোর্ট করেছে, আর যার বিরুদ্ধে করা হয়েছে দুইজনই ব্যান খেয়েছে, এমন রেকর্ডও ভুড়িভুড়ি।মডুরদের নিয়ে স্যাটায়ার লিখেও অনেকেই ব্যান হয়েছে।
আবার রিপোর্টিং ছাড়াও আপত্তিকর পোস্টের জন্য একজন ব্লগার ব্যান হতে পারে।
হাই-প্রোফাইল ব্লগার হলে, তার আনব্যান চেয়ে অন্য ব্লগাররা পোস্টও দিতে পারেন।
যেমন, প্রিয় মডারেটর ওমুকের ব্যান তুলে নিন।
কিংবা ব্লগার ওমুক আনব্যান না হলে, আগুন জ্বলবে ব্লগে।
ব্যান বিভিন্নপ্রকারের হতে পারে। ব্যানের প্রকারের উপর ডিপেন করে কিংবা অনেক দিন অপেক্ষায় থাকার পরও যখন ব্লগারটি দেখে যে, সে আর আনব্যান হচ্ছে না, তখন সে নতুন নিক খোলে কিংবা মাল্টিতে আবার ব্লগে ফিরে আসে।
কিন্তু তার স্বভাব-চরিত্র একটুও বদলাবে না।
সপ্তম ধাপঃ চিরবিদায়
কয়েকবার এইরকম ব্যান-আনব্যান-নিউ নিক-মাল্টি খেলায় মেতে ব্লগারটি যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন সে অনেক কষ্ট নিয়ে সামুকে বিদায় জানিয়ে অন্য ব্লগে কিংবা ফেইসবুকে চলে যায়।
অবশেষে সেই ব্লগার বলিতে থাকে, সামু আর আগের মতো নাই সামু এখন এত্তগুলা পচা। (*কুনোব্যাঙ* ভাইয়ের মন্তব্য থেকে)।
আর এইভাবেই শেষ হয়, একজন মহান ব্লগারের ব্লগ জীবন।