অপরবাস্তবের মূল তিনটি সমস্যা
১. প্রকাশক জোগাড় করতে না পারা অপরবাস্তবের সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা। প্রথম আলো ব্লগের পুরোপুরি হাস্যকর একটি প্রকাশনার জন্য পাঠসূত্রের মতো প্রকাশক এগিয়ে আসে, সচলায়তনের একেবারে গড়পড়তা মানের বইয়ের জন্য যদি পেশাদার প্রকাশক পাওয়া যায়, অপরবাস্তব কেন তিন তিনটি বছর পার করেও পেশাদার প্রকাশক পেল না? প্রকাশক বলতে আমি বোঝাতে চাইছি এমন একটি পেশাদার প্রকাশনা সংস্থা, যারা নিজেদের খরচে অপরবাস্তব প্রকাশ করবেন, বিপণন করবেন এবং নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেই বই সারা দেশে ছড়িয়ে দেবেন। এই কাজগুলো ব্লগারদের আওতার বাইরে।
২. ভালো লেখা নির্বাচন- দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা। প্রতি বছরই অপরবাস্তবের লেখা নির্বাচন করা হয়ে থাকে ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে। প্রকৃতপক্ষে, যতো মনোযোগী ব্লগারই হন না কেন, বছরের শেষ দিকে এসে সারা বছরের ভালো লেখা মনোনয়ন আসলে অসম্ভব একটি ব্যাপার। এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, মে-জুনে সম্পাদকমণ্ডলী নির্বাচন হয়ে গেলে তারা লেখা নির্বাচন শুরু করে দিতে পারেন। বছরের শেষদিকে এসে ব্লগারদের কাছ থেকেও মনোনয়ন আহবান করা যেতে পারে। সম্পাদকমণ্ডলীর মনোনয়ন ৫০ : ব্লগারদের মনোনয়ন ৫০ - এই ভিত্তিতে বইয়ের জন্য লেখা চূড়ান্ত করা যেতে পারে।
৩. আরেকটি সমস্যা হল বইয়ের ধরন বা প্রকৃতি নির্বাচন। অপরবাস্তব-৩ ছাড়া এ পর্যন্ত বেরুনো সবকটি পর্বই মূলত মিশ্র সংকলন। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ সবকিছুই একসঙ্গে একই মলাটের ভেতর প্রকাশ পেলে সেটা ভালো 'সংকলন' হয় বটে, কিন্তু সেটাকে 'বই' ভাবতে অস্বস্তি বোধ করি। এ নিয়ে ব্লগে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে দ্রুতই একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি।
ভবিষ্যতের অপরবাস্তব নিয়ে কিছু প্রস্তাব
অপরবাস্তবের মতো প্রকাশনায় কেন বারবার একই লোক, একই লেখক- সেটা নিয়ে সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার বছরের পর বছর এই লোকগুলোই কেন অপরবাস্তবের বোঝা বয়ে বেড়াবে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে- সেটাও একটা জরুরি প্রশ্ন। অপরবাস্তবের শুরু তো হয়েছিল এই ধারণা নিয়েই যে, প্রতি বছর নতুন নতুন ব্লগার এসে অপরবাস্তবের ভার বয়ে নিয়ে যাবেন, সোৎসাহে। সেটা হচ্ছে না, এ বলাই বাহুল্য। এই পরিস্থিতিতে আমার প্রস্তাবটি এরকম-
আগ্রহী যেসব ব্লগার অপরবাস্তবের সঙ্গে জড়িত হতে চান, তারা জানাবেন। আগের সম্পাদকমণ্ডলী সেখান থেকে যোগ্য লোক নির্বাচন করে তাদের হাতে পরবর্তী অপরবাস্তবের দায়িত্ব তুলে দেবেন। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অতীতে অপরবাস্তবের সঙ্গে যুক্ত সম্পাদকদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা যেতে পারে। তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শই শুধু সরবরাহ করবেন। তবে যারা যুক্ত হবেন, তাদের শুরুতেই মনে রাখতে হবে, অপরবাস্তবের কাজটি পুরোপুরি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। থ্যাঙ্কলেস জব। বইয়ের জন্য টানা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সামান্য একটি দীর্ঘ ই-কারের জন্য গালাগাল শোনার আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে আপনার। অপরবাস্তবের পেছনে নিজের কষ্টার্জিত টাকা জলাঞ্জলি দিলেও চাহিবামাত্র যে কাউকে পূঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে আপনি বাধ্য। কেউ যদি দু ফর্মার তেল ছিটছিটে লিগলম্যাগের চেয়েও ব্লগারদের ভালোবাসামাখা বইকে তুচ্ছ মনে করেন, সেটাও আপনাকে মানতে হবে হাসিমুখে। মোট কথা, এইসব নির্মমতা আর বাস্তবতা সহাস্যে মেনে নেওয়ার ধৈর্য্য যদি থাকে আপনার, পরবর্তী অপরবাস্তবের জন্য আপনিই যোগ্য লোক। এ বিষয়ে ব্লগারদের সুচিন্তিত মতামত জানতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবো।
পরবর্তী ও শেষ পর্বে থাকছে সম্পাদকমণ্ডলীর স্বাধীনতা বনাম ব্লগারদের অধিকার এবং প্রকাশনা বিষয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হতে পারে- এ নিয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা।