অন্যদিকে যারা জাফর ইকবালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারা জাফর ইকবালকে প্রায় নবীর মর্যাদা দিয়ে পোস্টে পোস্টে কেঁদেকেটে মরছেন। লক্ষ্য করে দেখলাম, এদের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এরা কী বলতে চান, বুঝে উঠতে পারি না। একজন আবার সচলায়তন থেকে লেখা ধার করে এনে জ্ঞানের স্বল্পতা মেটানোর চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কুকর্ম প্রকাশ পেলে যেমন "ইহা ডিজিটাল সরকারের বিরুদ্ধে সুগভীর চক্রান্ত" বলে পুরনো রেকর্ড বাজানো হয়, জাফর ইকবালকে রক্ষা করতে গিয়েও মোটের ওপর তার সমর্থকরা প্রায় ওই রেকর্ডই বাজিয়ে চলেছে। অথচ যে উত্তরটি বলিষ্ঠভাবে বলা উচিত ছিল, সেটা কাউকে বলতে দেখছি না- 'কন্যার সঙ্গে নাচা অপরাধ নয়, অভব্যও নয়।' বিদঘুটে রক্ষণশীলতার মুখের ওপর এর চেয়ে ভালো জবাব আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু না, যে কোনো কিছুতেই তাদের এক চিমটি মুক্তিযুদ্ধ, আধা চামচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার লাগবে। শ্লার, বাঙালির স্পর্শকাতর জায়গাগুলো পীড়নে মহাসুখ আছে মনে হয়!
ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমার মনে হচ্ছে, জাফর ইকবালের যেন কোনো দোষত্রুটি থাকতে পারে না। উনি যেন নবীর আসনে সমাসীন! হাস্যকর এই প্রবণতা আগেও দেখেছি এই ব্লগে। জাফর ইকবালের পাবলিকেশন স্বল্পতা নিয়ে কেউ একজন প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রগতিশীলরা দল বেঁধে তেড়ে গেছেন সেদিকে- এটা এই সেদিনের দৃশ্য। তাতে বলাইবাহূল্য, জাফর ইকবালের ভাবমূর্তি (যদি আদতেই হৃত হয়ে থাকে) খুব সামান্যই উদ্ধার হয়েছে। নৃত্যঘটিত জটিলতায় অনেকে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলছেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হবার প্রাক্কালে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ইহা একটি সুগভীর...!" অথচ চুলচেরা অনুসন্ধান চালালেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শাহজালালে একটা স্বাক্ষর দেওয়া ছাড়া জাফর ইকবালের তেমন কোনো ভূমিকা বোধহয় আবিস্কার করা যাবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এরপরও জাফর ইকবালের ভাবমূর্তি কি এতোটুকু ম্লান হয়? হয় না, কারণ তার আরো অনেক অর্জন আছে। যে জাফর ইকবালের লেখায় একালের তরুণরা আলোড়িত হন, অথচ কিনা বাংলা ব্লগে তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হচ্ছে প্লাস-মাইনাস দিয়ে! ব্লগে প্লাস-মাইনাস দিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি, সোজা কথায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যে চেষ্টা আমরা করে যাই, দিনশেষে এটা যে কতোটা হাস্যকর ও অসুস্থ সংস্কৃতি, তা আর বলতে! এটাও এক ধরনের নপুংসকতাই নির্দেশ করে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:২০