আজ পহেলা বৈশাখ ১৪১৯। বাংলা সনের প্রথম দিন। একটি নতুন বছরের প্রথম দিনটি অন্যান্য দিন থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যে পরিমাণ বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে, বিশেষত: মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর অর্থায়নে আমাদের দেশের কর্পোরেট মিডিয়াগুলো যা করছে, এক কথায় তা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সকল টিভি চ্যানেল মুখ থুবড়ে পরেছে বৈশাখ উদযাপনের নামে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি ও হারমোনিয়াম, তবলা গিটারের ধ্বনি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে। সকাল থেকে চলছে এই অত্যাচার।
বাংলাভিশন টেলিভিশন রমনা পার্ক থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী রবির সহযোগিতায়।
স্কয়ার কনজ্যুমার গ্রুপের অর্থায়নে ‘পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ প্রাঙ্গনে’ অনুষ্ঠিত তবলা-হারনোমিয়াম আর নৃত্যানুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে এনটিভি।
‘রবি বাংলা বর্ষবরণ’ ধানমন্ডি ২/এ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করছে একুশে টেলিভিশন। বিশেষ স্পন্সর হিসেবে আছে মিনা বাজার।
বৈশাখি টেলিভিশন মোবাইল ফোন কোম্পানী বাংলালিংকের অর্থায়নে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’ এর ব্যানারে চট্টগ্রামে আয়োজন করে নাচ-গানের।
‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’ আয়োজিত বৈশাখী গানের উৎসব রমনা শিশুপার্ক থেকে সরাসরি সম্প্রচার করছে আরটিভি। স্পন্সরে আছে ক্রাউন সিমেন্ট।
এটিএন বাংলা এনসিসি ব্যায়ক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অর্থায়নে ‘ধানমন্ডি রিক্রিয়েশন ক্লাব আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে।
চ্যানেল ৯ পোলার আইসক্রিমের সহায়তায় ধামরাই হাই স্কুল মাঠ থেকে ‘ধামরাই সাংস্কৃতিক পরিষদের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত শাখা-সিঁদূর আর ধূতি উৎসব সম্প্রচার করছে মহাসমারোহে।
যশোর পৌরপার্কে উদীচির অনুষ্ঠান দেশময় প্রচার করার মহান ব্রত পালন করছে মাছরাঙ্গা টেলিভিশন। তাদেরকে অর্থায়ন সহযোগিতা করছে তালুকদার গ্র“প।
শাহবাগের চারুকলা ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গন থেকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করছে। বার্জার পেইন্টস আছে তাদের সহযোগিতায়। এবারের এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ, ঘোড়া, পেঁচা, ইত্যাদির সাথে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আছে এক অসুর আকৃতির এক কল্পিত কালো অবয়বের কদাকার প্রতিকৃতি। তবে আশ্চর্যজনক হলো এবার হিন্দুয়ানী কালচারের এই মঙ্গলশোভাযাত্রার আয়োজকরা তাদের এই কল্পিত অসূর আকৃতির কালো অবয়বের উপর খুবই পরিকল্পিত ও সূচিন্তিতভাবে চাঁদ তাঁরা এঁকে দিয়েছেন।
আমরা জানি যে, মুশরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণী আছে যারা সূর্যের পূজা করে থাকে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি যেহেতু সূর্যের উপর নির্ভর করে প্রণীত তাই অনেক হিন্দুও একে একটি বিশেষ উপলক্ষ হিসেবে পালন করে থাকে। হিন্দু ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার উন্নতির আশায় পালন করে গণেশ পূজা। এবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানাবিধ পূজাও উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে ভয়ংকর ও বিকৃত মস্তিস্কের ‘চড়ক পূজাও’ উল্লেখযোগ্য।
আমরা এটাও জানি যে, আরবী বর্ষপঞ্জিকা চাঁদের উপর নির্ভরশীল। চাঁদ উঠা-নামার উপর ভিত্তি করে আরবী মাস গণনা করা হয়। তাই বলে কোনো মুসলিম কিন্তু কখনও চাঁদের ইবাদত করে না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত ও বন্দেগী ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই চাঁদের পূজা বা উপাসনা বলেও ইসলামে কিছু নেই। মুসলিমদের কাছে চাঁদ এবং সূর্য মহান আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে দু’টি সাধারণ মাখলুক মাত্র। যা মানুষের সেবা ও কল্যাণের জন্যই মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর নির্দেশে চাঁদের উপর ভিত্তি করে মুসলিমরা তাদের রোযা, হজ্জ, ঈদ এবং অন্যান্য কিছু ইবাদতের দিনকে সনাক্ত করেন আর সূর্যের উপর ভিত্তি করে নামাজের সময় সাব্যস্ত করেন। মুসলিমদের কাছে চাঁদ এবং সূর্যের ব্যাপারে এর চাইতে বেশি কোনো গুরুত্ব নেই।
কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং সাম্রাজ্যবাদের দোসরদের হয়তো বিষয়টি জানা নেই। তারা যেমন সূর্যের পূজা করে তাই মনে করেছে মুসলমানরাও হয়তো চাঁদ-তাঁরার পূজা করে। ব্যস এবার অসূরের গায়ে চাঁদ-তারা এঁকে শয়তানী মনে যদি কিঞ্চি বিকৃত সুখ পাওয়া যায়, তো মন্দ কি!
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিমাদের তাবেদার মুহাম্মাদ আলি জিন্নাহ এবং সে সময়কার দুর্নীতিবাজ শাসকরা ক্ষমতায় যেতে মুসলিমদের সরল আবেগকে ব্যবহার করার জন্য একদিকে যেমন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা বলে প্রতারণাপূর্ণ প্রচারণা চালিয়েছিলো, একইভাবে তারা পাকিস্তানের পতাকায় চাঁদ-তাঁরা এঁকে সাধারণ মুসলমানদের সস্থা সমর্থন লাভের পথটিও সুগম করেছিলো।
ইসলাম বিরোধীদের যারা বর্তমানে পাকিস্তানকে ইসলামের মডেল হিসেবে তুলে ধরে কুফুর শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত পাকিস্তানের অপকর্মগুলোকে ইসলামের উপর চাপিয়ে দিতে চায় তাদেরও একটি বাড়তি মনোযোগ থাকে যে কোনো মূল্যে জনগণের সামনে পাকিস্তান বিরোধী একটি মনোভাব জিঁইয়ে রাখার। এবার অসূরের গায়ে চাঁদ-তাঁরা অঙ্কনের মাধ্যমে তাদের কেউ কেউ নিজেদের সেই পূরণো স্বভাবের পূনরাবৃত্তির স্বাদ নিতেও হয়তো ভুল করে নি।
ইসলামকে বিশ্বের বুকে একটি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহকে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যেই মহান দায়িত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ ন্যস্ত ছিলো এই উম্মাহর যুব-তরুণদের উপর, তা তাদেরকে ভুলিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
একটি দেশ ও জাতির মুসলিম পরিচয় ও তাওহীদী চেতনাকে নি:শেষ করে দেয়ার জন্য সেই জাতির যুব সমাজকে নিজ আত্ম পরিচয় ভুলিয়ে দেয়া এবং অশ্লীল-পাপাচারে লিপ্ত করানো হচ্ছে প্রথম এবং প্রধান কাজ। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে পশ্চিমাদের বৈতনিক এবং অবৈতনিক এজেন্ট, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগী কর্পোরেট মিডিয়াগুলো এ মহান দায়িত্ব পালন করছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী গুলো দেদারছে বিলাচ্ছে টাকা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতাও তাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল ধরণের ইউনিট আজ তাদের নিরাপত্তা বিধান করছে। আজ শাহবাগ, কাকরাইলসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক গুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এই অপরিহার্য্য (?) পূজা নির্বিঘেœ উদযাপনের জন্য।
সাংস্কৃতির মোড়কে আজ দিনভর চলবে হিন্দুয়ানী অপসংস্কৃতির এই মহোৎসব। বিশেষত: দুপুরের পর থেকে উন্মাতাল তরুণ-তরুণীদের ঢল নামবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে।
এভাবে ধীরে ধীরে মুসলিম যুব-তরুণরা ওয়ারিশানা সম্পদের মতো পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ‘মুসলিম’ নামের একটি খেতাব ধারণ করে থাকলেও, বাস্তবে তারা দিন দিন সরে যাচ্ছে ইসলাম থেকে দূরে, বহু দূরে। আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি। দেখেই চলেছি...।
জানি না কতদিন চলবে এই নীরব প্রদর্শনী। কতকাল অব্যাহত থাকবে বিবেক বিবর্জিত এই অপকর্মের মহড়া। উম্মাহর দায়ীগণ আর কতকাল নিজেদের দায়িত্ব পাশ কাটিয়ে শুধু দেখেই যাবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শুভবুদ্ধি দান করুন। মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান এই যুব-তরুণদেরকে বিজাতীয় আগ্রাসী থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু করার তাওফীক দিন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪২