
যাহোক আমার আজকের বিষয়বস্তু শমী কায়সার। যার মা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত মহিলা এমপি হয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের গর্ব। যিনি একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর হাতে প্রান হারান। প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে যার কথা আমরা স্বরণ করি।
১৯৯৬ সাল। তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষ চলছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা পাওয়ার পর প্রথম বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করছে। সেই উপলক্ষ্যে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরীতে বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষ্যে এক সেমিনার টাইপের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। তারিখটা ঠিক মনে নেই তবে সেটা মনে হচ্ছে ডিসেম্বরের ১ বা ২ তারিখ হবে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী যাকে চট্টগ্রামের ‘মাহাথীর মোহাম্মদ’ বলা যায়। আর অতিথী হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শমী কায়সার ও তার মা পান্না কায়সার। পান্না কায়সারকে উপলক্ষ্য করে এই প্রোগ্রাম হলেও সবার নজরে ছিলেন শমী কায়সার। তখনকার নাটকে নায়িকা ছিলেন মাত্র দুইজন- শমী কায়সার ও বিপাশা হায়াত। অতিথীদের বক্তৃতায় শমী কায়সার যে হৃদয় বিগলিত বক্তৃতা দিলেন তাতে ওই প্রোগ্রামে এমন কোন দর্শক ছিল না যার চোখ দিয়ে পানি পড়েনি। শমী কায়সার অদ্ভূত দক্ষতায় সৃতিচারণ করে আমাদের জানালেন কীভাবে তার বাবা শহীদুল্লাহ কায়সারকে মাওলানা মান্নান বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। সেই মাওলানা মান্নানের সাথে ছিল লন্ডন জামাতের নেতা খালেক মজুমদার (নামটা শিউর না)। সেমিনারের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অভিনীত একটা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। কিন্তু কারো নজর ওই নাটকের দিকে ছিল না। সবার চোখের সামনে ভাসছিল এক বাবা হারানো মেয়ের কান্নার ছবি। এমনকি নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রীরাও ঠিক মত অভিনয় করতে পারেনি। তাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল।
মাওলানা মান্নান ছিলেন তৎকালীন বিএনপি ও জামাতের মূখপাত্র রাজাকার আদর্শের দৈনিক পত্রিকার মালিক যার টাকা সম্ভবত সৌদি বা পাকিস্তান থেকে আসত। ‘ইনকিলাব’ ছিল সেই পত্রিকার নাম। মাওলানা মান্নান যখন এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন তখন দেশের বিভিন্ন মসজিদের বরাদ্দ টাকা আত্মসাত করে ইনকিলাব পত্রিকা চালু করেন। বিএনপি’র আমলে এই পত্রিকা সরকারের অনুকূল্য পায়। প্রচুর সরকারী বিজ্ঞাপন ছাড়াও এই পত্রিকা নিউজপেপারেও অনেক ছাড় পেত যদি তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় বহুল প্রচারিত দৈনিক ছিল ‘জনকন্ঠ’। ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিটি কলামে তখন আওয়ামীলীগের কড়া অন্ধ সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই থাকত না। এমনিতে আমরা আগেই জানতাম শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যাকান্ডের সাথে মাওলানা মান্নান জড়িত। তার পরে শমী কায়সারের মুখে সেইদিন শহীদুল্লাহ কায়সারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা শোনার পরে রাজাকারের বাচ্চাটাকে খুন করার একটা নেশা মাথায় উঠে গিয়েছিল।
মাঝখানে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। সেই দিকে আমরা না যাই। শুধু বলব মাওলানা মান্নান রাজাকার সাঈদীর সাথে গেঞ্জাম করে কীভাবে যেন আওয়ামীলীগার হয়ে গেলেন। তিনি এবং তার পুত্র বাহাউদ্দিন কড়া আওয়ামীলীগার। মাওলানা মান্নান মারা যাওয়ার পরে ইনকিলাবের প্রধান হর্তাকর্তা হন মান্নানের পুত্র বাহাউদ্দিন। মাওলানা বাহাউদ্দিন এখন শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের সঙ্গী! সেই সফরে পান্না কায়সারও যায়!! গত নির্বাচনে চাঁদপুরের একটা আসন থেকে বাহাউদ্দিন আওয়ামীলীগে নমিনেশন চ্যেছিলেন যদিও দীপু মনির চেষ্টায় তা হয়নি।

গত বছর রাজধানীর একটা হোটেলে ব্যবসায়ীদের সম্মানে আয়োজিত আওয়ামীলীগের এক ইফতার পারটিতে শমী কায়সারের সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে চিনতে পারেন নি। চেনার কথাও নয়। আমিতো আর বিখ্যাত কেউ নই। একটু পরে সেখানে বাহাউদ্দিন সাহেব এলেন। আমি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি কী হয়। বাবার খুনির পুত্রের সাথে দেখা। দল এখন ক্ষমতায়। দু’জনই ক্ষমতাসীন দলের লোক।
সে আরেক ইতিহাস! দু’জনই হাসিমুখে দুজনকে সম্ভাষন জানালেন! এর পরে এক টেবিলে বসে পিতার হত্যাকারীর পুত্রে সাথে ইফতার করলেন।
এই লেখার প্রথম কলামটা শুধু বামপন্থী ব্লগারদের জন্য। তারা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না কেন আমি এই ‘অপ্রাসঙ্গিক প্যারা’টা এই লেখায় যোগ করেছি!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৩