আমার ছোট বেলা কেটেছে বাংলার একটি নিভৃত পল্লী গ্রামে পুরোদস্তুর গ্রামের একজন দস্যি ছেলের মত । সে সময়ের বিভিন্ন মধুর স্মৃতি এখনও আমাকে বার বার ছুঁয়ে যায় । আজ এমনি একটি ঘটনা বলব যেটা শুনলে অনেকে ভয় পাবেন আর আমার মত যারা গ্রামের কাদাজলে আ্যডভেন্চার করে বেড়িয়েছেন তারা হাসবেন আর নিজের অতীতে ডুব দিতে চাইবেন।।
তখন বর্ষকাল । আমাদের থাকার ঘর এর পেছনেই ছিল বিরাট পুকুর । বর্ষাকালে পানি একদম আমাদের দুয়ার পর্যন্ত উঠে আসত । তাতে আমার মায়ের ভোগান্তি বাড়লেও আমারা দুইভাই এর হত পোয়াবারো । সাহসের কমতি ছিলনা আমাদের । অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমরা করতে পারতাম অনায়াসেই।যেমন জোঁক হাতের তালুতে নিয়ে খেলা, পানি সাপ এর লেজ ধরে ঘোরানো, সোনাব্যাঙ্ ধরা ,গাছের মগডাল থেকে পানিতে ডিগবাজি দেওয়া ইত্যাদি। হয়ত তখন এত বিচার বুদ্ধি ছিলনা বলেই এমন করতাম। এমনি কোন এক বর্ষায় আমারা দুইভাই নেমে পরলাম সাপ ধরার প্রতিযোগিতায়। অনায়াসে পানি সাপ এর লেজ ধরে শুণ্যে ঘোরাতাম আমরা। এরপর সাপটাকে ছুড়ে দিতাম অনেক দুরে । এমনকি গর্তে থেকে পানি সাপ এর লেজ ধরে টেনেও বের করতাম আমরা। এমনি খেলার একসময় আমার আগ্রজ একবার একটা বড় সাপের পেছনে ছুটল । ও জানতনা যে ওটা সাধারণ পানির সাপ নয়। অভ্যাস মত যেইনা ও সাপের লেজটা ধরেছে ওমনি সাপটা জোরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ফনা ধরল। একটু ঘাবরে গেলেও হার মনার পাত্র নয় আমার ভাই। সে আবার আমাদের গ্রামের হাটে সাপ খেলা দেখেছিল একদিন । কাজেই সে তার কসরত নিয়ে নেমে গেল সেই মেছো গেখরা সাপের সামনে । সাপের সামনে পাকা সাপুরের মত একটা হাটু দোলাতে শুরু করল । আমিও ছিলাম তার এ বীরত্বের একজন অভিভূত দর্শক । মনে মনে আমিও ওর মত করে খেলা দেখানোর পরিকল্পনা করছিলাম। সাপটাও কেনজানি ওকে ছোবল মারছিল না । হয়তবা গ্রাম্য বালকের সাহস দেখে সেও ছিল হতভম্ব। পরে আমার এক চাচা এসে পেছন থেকে সাপটাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে । ফলে সে যাত্রা রক্ষা । এর পর থেকে আমারা আর এমন করে সাপ ধরতে সাহস করিনি । মায়ের বকুনি আর আমার বাবার উত্তম মধ্যম খেয়ে আমাদের এ প্রতিভার সেদিনই করুণ মৃত্যু হয়।
তানা হলে এতদিন এ হয়ত আমরা পুরো দস্তুর সাপুরে কেও হার মানাতাম। আসলে জানলেই ভয় না জানলে কিছূই নয় । সাপ যে বিষধর বা কোন সাপ বিষধর তা জানতাম না বলেই হয়ত আমরা সাপ নিয়ে এমন খেলতে পারতাম। এখন জানি বলেই ভয় পাই।