এবার ফেরার পালা....চূড়ায় উঠার আনন্দে সব ক্লান্তি যে কোথায় হারিয়ে গেলো নিমিষে...
আক্ষেপ একটু রয়ে গেলো জাদিপাই ঝরনার জন্য.....সেই আক্ষেপটা নিয়েই ফিরতি পথ ধরলাম....আবার পাহাড় বেয়ে চলা....তবে এবার নামার প্রবনতাই বেশী....তাই পা চললো দ্রুত....
(পাহাড়ি ফল.....এর স্বাদ অনেকটা কামরাঙ্গার মত....হাঁটার পথে এগুলো খেয়েছিলাম)
অতি আনন্দে....আমরাও দ্রুত চলতে শুরু করলাম....আর ভুলে গেলাম...নামার সময়ের সতর্ক বানী....ফলে যা হবার তাই হলো....দ্রুত নামতে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারালাম খানিকটা....আর সেই হারানো নিয়ন্ত্রন ফিরে পেতে গিয়ে পাঁয়ে ব্যাথা পেলাম





চলার পথে পাহাড়ের ছবি
এখন যেখানে নামার প্রবনতাই বেশী...সেখানে যখনই নামতে যাচ্ছি ডাঁন হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি...অনেকটা খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে নামতে হচ্ছে......তাই লাঠির উপর ভর দিয়েই. চলতে শুরু করলাম...সবার পিছনে.....
চলার পথে পাহাড়ের ছবি
এভাবেই একসময় চলে এলাম আবার চিংড়ি ঝরনার কাছে.....ব্যাথা পা নিয়েই বড় বড় পাথর টপকে চলে এলাম ঝরনার মূল স্রোত ধারার কাছে.......
চিংড়ি ঝরনার পথে
পানি পান.....স্নান সেরে নিলাম বরফ ঠান্ডা পানিতে......ক্লান্তি যেন কোথায় হারিয়ে গেলো....আর ক্ষুধা চেপে বসলো ভালো ভাবেই.....পুরো আধা ঘন্টা এখানে ব্যয় করলাম.....
(চিংড়ি ঝরনা ও আমাদের স্নান)
আবারও ফিরে চলা...যথারীতি ...৩.১০-এ চলে আসলাম বকা লেক.....এখানে পেঁপে আর কলা গোগ্রাসে খেয়ে আবার চললাম ছুটে....আবারও পাহাড় বেয়ে নামা




বিদায় বগা লেক
চলে এলাম বকা লেকের পাহাড়ের পাদদেশে যেখান থেকে চাঁদের গাঁড়িতে উঠতে হবে....এই পর্বে যে আরো কিছু ভান্ডারে যুক্ত হবে তা ভাবিনি.....
গাঁড়িতে যে পরিমান জায়গা আছে তাতে তিনজনের বেশ কষ্টই হলো....তথাপিও উঠে পড়লাম শেষ ট্রিপ হিসাবে.....কিন্তু যেই গাঁড়ি তার যান্ত্রিক শব্দ তুলে গর্জন শুরু করলো ওমনি ৬/৭ জনের একটি দল মাথার উপরে গ্রীলে অবস্থান করলো......একদিকে কেমন একটা উৎকট গন্ধ অন্যদিকে চিল্লাচিল্লি.....বিরক্তি চরমে......তার মাঝে ২০/২৫ বছরের এক নেংটি উপজাতি সারাক্ষন যে পরিমান কিচকিচ করেছে তাতে বানরও তার কাছে হার মানবে.....চেহারায় সেই রকমই ছাপ পাওযা গেছে....আর য়োল কলা পূর্ন করলো তার কাজকর্মে.....আর মুথের ভাষায়....
মনে মনে খিস্তি করলাম.....গায়ের গরম কাপড় কোমর থেকে খুলে, গন্ধ আর শব্দ নিবারনে নাকে আর মুখে পেঁচিয়ে রাখলাম....


এ তো গেলো এক কাহানি ....

চলতি পথেই চলতে চলতে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো...


এবার ড্রাইভার ভাড়ার জন্য পাহাড়ের উপরে এসে গাঁড়ি থামিয়ে বান্দর এর মত ঝুলতে ঝুলতে কখনো পাশে কখনো মাথার উপরে গ্রীল এ দাঁড়িয়ে ভাড়া আদায়ে ঝগড়া করে যাচ্ছে........



কাহানির যেন শেষ নেই....
চলতি পথে হঠাৎ ড্রাইভার ঘোষনা করলো ভাইয়েরা উপরে ও গাঁড়ির আশেপাশে যারা আছেন তারা সবাই নেমে যান.... সামনে খাড়া ঢাল.....আর গাঁড়ির ব্রেক ফেল.....ভিতরের লোকজন বসে থাকুন। এ কথা শুনে ভিতরে বসে থাকা আমাদের তিনজনের কলিজার পানি অর্ধেক হয়ে গেলো....বলে কি ব্যাটা....




একই ভাবে আরো দুইবার সবাইকে নামিয়ে উঠিয়ে.....চারবারের মাথায় খাড়া ঢাল দেখে রুমা বাজার কাছাকাছি হওয়ায় আমরাই নেমে হাঁটা শুরু করলাম....
এতক্ষন বসে থাকায় আমার পায়ের অবস্থা আরো খারাপ হলো....এবার সমান্তরাল পথে হাঁটতেও ব্যাথা পাচ্ছি....১৫ মিনিটের রাস্তা পেরোতে আমার আধাঘন্টা শেষ........তারপর রেয়েছে হোটেল খোজার পর্ব.....আজ রাত এই রুমা বাজারেই কাটাতে হবে.....এই কাজটা আমি ভাইগনাদের উপর ছেড়ে দিলাম....কারন আমার পক্ষে হাঁটা কষ্টকর হয়ে উঠেছে.......
৫০০টাকার বিনিময়ে ডাবল বেডের একটা রুমও পেয়ে গেলাম...তবে ৩য় তলায়.....রুমে ঢুকে ভাইগনাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম....এখানে এতটা ভালো একটা হোটেলের রুম পাবো ভাবতে পারি নাই....টাইলস রুম, দু্টো সিঙ্গেল সোপা, দুটো খাট(১টা সিঙ্গেল, ১টা ডাবল) একটা ড্রেসিং টেবিল,টিভি, জেনারেটর সুবিধাসহ....আহা আর কি চাই...এক রাতের জন্য এত কিছু!!!








রুমে ঢুকে সবার আগে ফ্রেশ হওয়ার কাজ .....কেননা ঘামের গন্ধ নিজেদেরর নাকেই খানিকটা সাড়া দিচ্ছে..........




তিনজনের পুরো দেড় ঘন্টার উপরে ......গোসলে এত সময় জীবনেও লাগেনাই.....




অত:পর শরীরের মাঝে যেন হাজারো ঝড়তার ঢেউ.....নাহ আর পারলাম না......এত সুন্দর করে বিছানা পাতা....যেন শরীরটাকে ঢাকছে.....ঠিক তাই, আর পারলাম না....পুরো ১.৩০ঘন্টা ঘুমের রাজ্যে কাটিয়ে দিলাম...................পেট ব্যাটা সাড়া না দিলে মনেহয় খবরই পেতাম না......পেটের ক্ষুদা এবার ঘুম কেড়ে নিলো......ততক্ষনে রাত ৮.০০ টা।
যাওয়ার পথে সিয়াম দিদির দেখিয়ে দেওয়া হোটেলটাই খুজে বের করলাম.......এখনকার সবজির রান্নার বেশ প্রশংসা শুনলাম এবার সুযোগ চেখে দেখার.....তাই অর্ডার দিলাম....রুটি আর সবজির......যথাসময়ে চলে এলো খাবার.........
মুখে দিয়েই আত্বতৃপ্তির ঢেকুর তুললাম....স্ববজি রান্নাটা আসলেই জোশ হইছে.....খেয়েই চলছি....ক্ষুদা না সুস্বাদু রান্নার গুনে জানিনা....তবে তিনজনে ১৫টা তন্দুল রুটি সাবাড় করে ফেলেছি......যে মানুষগুলো সচরাচর ৩টা পাতলা রুটির বেশী খাই না....





পুরাই খাদক হয়ে গেছি........
সবজি রান্না সম্পর্কে জানতে চাইলে যা জানা গেলো তা হলো ২০টার বেশী আইটেম এতে সংযুক্ত আছে.....

খাওয়ার পাট চুকিয়ে আবার প্রত্যাবর্তন হোটেলে.....খুব সকালেই আবার উঠতে হবে ......৭টার প্রথম নৌকাটা ধরতে হবে ...
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরীই হয়ে গেলো........তাই ৭টার নৌকা যথরীতি মিস করলাম......ধীরে সুস্থে আবার সেই হোটেলে .....হোটেলের পিচ্চিটা আমাদের দেখেই বলে উঠলো স্যার গরম গরম রুটি তৈরীই আছে....




আমরা তিনজিনই হেসে উঠলাম.....



ঘন কুয়াশার মাঝে এবার নৌকাঘাটের দিকে রওনা দিলাম.......মুখের উপর কুয়াশার ঝাপটা লাগছে.........নদীর ওপার তো থাক দূরের কথা সামন্য দূরে থাকা নৌকাটাকেও ঠিক মতো দখো যাচ্ছে না.....নৌকাতে করে শাক-স্ববজি নিয়ে আসছে....কেউ বা পিঠে করে......এই শীতের মাঝে.......
নৌক ছেড়ে দেওয়ার আগ মুহুর্তেই হঠাৎ মনে হলো এখানে একটা ছবি না নিলেই নয়.....নিয়ে নিলাম.....
এ যেন স্বপ্নপুরীর মাঝে নৌকার আবছা অবয়ব
শুরু হলো ফিরে চলা......রুমা বাসস্ট্যান্ড....সেখান থেকে বান্দরবন শহরে.......রাত দশটায় ঢাকার গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে..........আবার সেই যান্ত্রিক জীবন......
মন চাইছে না ফিরে যেতে.....মনে চাইছে এখানেই থেকে যেতে......হারিয়ে যেতে প্রকৃতির মাঝে...
৭ম পর্ব