ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ী এসো
খাট নাই পালং নাই চোখ পেতে বস
বাটা ভরা পান দেব গাল ভরে খেয়ো
বিন্নি ধানের খই দেবো আঁচল পেতে নিও...
ছড়াটা এক্সেক্টলী এইরকম কিনা মনে করতে পারছিনা।
গতকাল এক পিচ্চি এসেছিলো তার বাবা মা'র সাথে অমি ভাইদের বাসায়। পাশের বাসা, অতএব আমি তো আছিই। বিশেষ করে কোথাও বিরানী'র গন্ধ পেলে আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারিনা ......... পিচ্চির মা খায়, আর পিচ্চি আমাদেরকে ছড়া গান শোনায় "গিম্মী হোম এমাং দ্য গাম ট্রীজ/ উইদ লটস অব পাম ট্রীজ..." পিচ্চি মাথা দোলায় আর ছড়া গান গায়। পিচ্চির মা খুবই গর্বিত ভংগিতে বিরানী খান আর পিচ্চিকে উৎসাহ দেন।
আমার গলায় কেনো যেনো বিরানী আটকে যায় বার বার। ব্রাদার-ইন-ল'র দুই বাচ্চা মাহির মালিহা'র কথা মনে পড়ে। মাহিরকে আমি খুব চেষ্টা করছিলাম আকাশ চেনাইতে। 'বাবা, ঐ দেখো আকাস! বলো বলো আকাস!' আকাশ বলা সম্ভব না, অন্ততঃ 'আকাস' বলুক! সে তখন নতুন নতুন 'বাবা' বলে শুধু। একদিন, দুইদিন, তিনদিন... প্রতিদিন আমি তাকে আমার জানালা দিয়ে আকাশ দেখাইতাম আর বলতাম 'বাবা বলো বলো, ঐইইইইই যে আকাস!' মাহির খুব বিটলা। অতএব আকাস দেখতো একবার, নীচের রাস্তা দেখতো একবার, তারপর আমার দিকে তাকায়ে এমন একটা হাসি দিতো যেনো সে সবই চিনে, কিন্তু নাম বলবেনা! অবশেষে প্রচুর সাধ্যসাধনার পর একদিন যখন এইরকম আকাশ চিনাচ্ছি, ছোট ছোট আংগুল তুলে রাস্তার দিকে ইংগিত করে খুব সাধ্য সাধনা করে মাহির বলেছিল ‘গালী!’ (গাড়ি!)
গাড়ি, গাম ট্রীজ, পাম ট্রীজ সব আমার বিরানীর সাথে মশলার মত একাকার হয়ে যায়। নিজেকে সেঁকেলে লাগে। সব বাবা-মাই বাচ্চাদের ইংলিশ বুলিতে গর্বিত, কম্পিউটারের এমন সব অপশন দুই/তিন বছরের পিচকি জানে, যা বাবা মাও জানেনা- এই নিয়ে তাদের গর্বের আর আনন্দের শেষ নেই। দাদার মোবাইলে কী সমস্যা তা সবার আগে ক্লাস টু-এ পড়া মঈন ঠিক করে দেয় নিমিষেই- এই নিয়ে তার দাদা দাদীরও গর্ব- এই ছেলে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাই ভবিষ্যতে নাতী ইঞ্জিনিয়ার হবে এই খুশীতে তাকে নতুন নতুক কম্পিউটার গেম এনে দেয়া হয়। কম্পু আর বিভিন্ন চ্যানেলের কার্টুন সিরিয়াল, মইন যখন খাটের উপর ‘ইয়াআ হু’ ‘ওয়া হু আ’ম দ্য ভ্যাম্পায়ার!’ বলে বিভিন্ন পোজ দেয় লাফ মেরে মেরে, আমি ওকে দেখানোর জন্যে আতংকিত হওয়ার ভান করতে গিয়ে আসলেই আতংকিত হয়ে পড়ি। সবাই আজকালকার বাচ্চাদের অগ্রগতিতে মহা খুশী, কেবল আমিই কী হতাশাবাদীদের দলে পড়ে গেলাম?
নিজের ছোটবেলার কথা তেমন মনে নেই। যতটুকু মনে আছে তা এইসব ছড়াগুলোর মধ্যেই। ক্লাসে একটা কবিতা আমার খুব পছন্দের ছিলো ‘রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও/ বাঁকা গাঁয়ের পথটি ধরে কোথায় চলে যাও?’ সবচে মজার লাইন ছিলো যখন রাখাল ছেলে বলতো তার সময় নেই, ক্ষেতে নিড়ানী দিতে হবে, ঘাস তুলতে হবে, কত কাজ! ( লাইনগুলো ভুলে গেছি ;( !) …… আম্মু একটা ছড়া বলতো ‘আল্লাহ আমার রব/ রাসূল আমার নেতা/ আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নোয়াই নাকো মাথা!’ … ফুয়াদকে ঘুম পাড়ানোর সময় গুন গুন করতে হতো ‘নোটন নোটন পায়রা গুলো ঝোঁটন বেঁধেছে……’ অথবা ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ/ ঐ আমাদের গাঁ….’
সময় বদলাচ্ছে, এখন তালগাছের বদলে ওরা গাম ট্রীজ আর পাম ট্রীজ চিনবে- এইতো স্বাভাবিক, আমার তাও যে কেনো বাচ্চাগুলোকে দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ;(
কালকে ‘ট্রেইটর’ মুভিটা খুঁজতে খুঁজতে ভিডিও দোকানের এক কোনায় গিয়ে দেখি, বেশী হলে বাচ্চাটার তিন থেকে চার বছর হবে, নীচের তাক থেকে নেংটাপুটু মেয়েদের ছবিওয়ালা ডিভিডি হাতে নিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে। আমাকে পাশে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কোনো পাত্তা দিলোনা। খুব ভালো করে দেখে আবার রেখে দিলো। আরেকটা হাতে নিলো। তাতেও নেংটা পুটু মেয়েদের দল।
আমার মন আর ভালো হয়না।
নিষ্পাপ শিশুদের নিষ্পাপ সবুজ-লাল-নীল ছড়াগুলোকে খুব মিস করি। কিন্তু ছড়াগুলো যে বেশীরভাগই ভুলে গেছি! ;( কারো কালেকশানে কী কিছু আছে? আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে। আগের কালের সেই ছড়াগুলো নিয়ে একটা ওয়েবসাইট বানানো দরকার। আপনাদের মধ্যে যার যে ছড়াই মুখস্ত আছে, এখানে লিখে দিয়ে যাবেন প্লীজ? অন্ততঃ যদি দুইলাইন মুখস্ত থাকে, সে দুইলাইন হলেও… আর কাউকে পারি না পারি, ভবিষ্যতে অন্ততঃ নিজের বাচ্চাকে হলেও তো একটা নিষ্পাপ শৈশব দেয়ার চেষ্টা করা দরকার। কী বলেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৭:৪৬