somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি.........

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ী এসো
খাট নাই পালং নাই চোখ পেতে বস
বাটা ভরা পান দেব গাল ভরে খেয়ো
বিন্নি ধানের খই দেবো আঁচল পেতে নিও...

ছড়াটা এক্সেক্টলী এইরকম কিনা মনে করতে পারছিনা।

গতকাল এক পিচ্চি এসেছিলো তার বাবা মা'র সাথে অমি ভাইদের বাসায়। পাশের বাসা, অতএব আমি তো আছিই। বিশেষ করে কোথাও বিরানী'র গন্ধ পেলে আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারিনা ;) ......... পিচ্চির মা খায়, আর পিচ্চি আমাদেরকে ছড়া গান শোনায় "গিম্মী হোম এমাং দ্য গাম ট্রীজ/ উইদ লটস অব পাম ট্রীজ..." পিচ্চি মাথা দোলায় আর ছড়া গান গায়। পিচ্চির মা খুবই গর্বিত ভংগিতে বিরানী খান আর পিচ্চিকে উৎসাহ দেন।

আমার গলায় কেনো যেনো বিরানী আটকে যায় বার বার। ব্রাদার-ইন-ল'র দুই বাচ্চা মাহির মালিহা'র কথা মনে পড়ে। মাহিরকে আমি খুব চেষ্টা করছিলাম আকাশ চেনাইতে। 'বাবা, ঐ দেখো আকাস! বলো বলো আকাস!' আকাশ বলা সম্ভব না, অন্ততঃ 'আকাস' বলুক! সে তখন নতুন নতুন 'বাবা' বলে শুধু। একদিন, দুইদিন, তিনদিন... প্রতিদিন আমি তাকে আমার জানালা দিয়ে আকাশ দেখাইতাম আর বলতাম 'বাবা বলো বলো, ঐইইইইই যে আকাস!' মাহির খুব বিটলা। অতএব আকাস দেখতো একবার, নীচের রাস্তা দেখতো একবার, তারপর আমার দিকে তাকায়ে এমন একটা হাসি দিতো যেনো সে সবই চিনে, কিন্তু নাম বলবেনা! অবশেষে প্রচুর সাধ্যসাধনার পর একদিন যখন এইরকম আকাশ চিনাচ্ছি, ছোট ছোট আংগুল তুলে রাস্তার দিকে ইংগিত করে খুব সাধ্য সাধনা করে মাহির বলেছিল ‘গালী!’ (গাড়ি!)

গাড়ি, গাম ট্রীজ, পাম ট্রীজ সব আমার বিরানীর সাথে মশলার মত একাকার হয়ে যায়। নিজেকে সেঁকেলে লাগে। সব বাবা-মাই বাচ্চাদের ইংলিশ বুলিতে গর্বিত, কম্পিউটারের এমন সব অপশন দুই/তিন বছরের পিচকি জানে, যা বাবা মাও জানেনা- এই নিয়ে তাদের গর্বের আর আনন্দের শেষ নেই। দাদার মোবাইলে কী সমস্যা তা সবার আগে ক্লাস টু-এ পড়া মঈন ঠিক করে দেয় নিমিষেই- এই নিয়ে তার দাদা দাদীরও গর্ব- এই ছেলে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাই ভবিষ্যতে নাতী ইঞ্জিনিয়ার হবে এই খুশীতে তাকে নতুন নতুক কম্পিউটার গেম এনে দেয়া হয়। কম্পু আর বিভিন্ন চ্যানেলের কার্টুন সিরিয়াল, মইন যখন খাটের উপর ‘ইয়াআ হু’ ‘ওয়া হু আ’ম দ্য ভ্যাম্পায়ার!’ বলে বিভিন্ন পোজ দেয় লাফ মেরে মেরে, আমি ওকে দেখানোর জন্যে আতংকিত হওয়ার ভান করতে গিয়ে আসলেই আতংকিত হয়ে পড়ি। সবাই আজকালকার বাচ্চাদের অগ্রগতিতে মহা খুশী, কেবল আমিই কী হতাশাবাদীদের দলে পড়ে গেলাম?

নিজের ছোটবেলার কথা তেমন মনে নেই। যতটুকু মনে আছে তা এইসব ছড়াগুলোর মধ্যেই। ক্লাসে একটা কবিতা আমার খুব পছন্দের ছিলো ‘রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও/ বাঁকা গাঁয়ের পথটি ধরে কোথায় চলে যাও?’ সবচে মজার লাইন ছিলো যখন রাখাল ছেলে বলতো তার সময় নেই, ক্ষেতে নিড়ানী দিতে হবে, ঘাস তুলতে হবে, কত কাজ! ( লাইনগুলো ভুলে গেছি ;( !) …… আম্মু একটা ছড়া বলতো ‘আল্লাহ আমার রব/ রাসূল আমার নেতা/ আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নোয়াই নাকো মাথা!’ … ফুয়াদকে ঘুম পাড়ানোর সময় গুন গুন করতে হতো ‘নোটন নোটন পায়রা গুলো ঝোঁটন বেঁধেছে……’ অথবা ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ/ ঐ আমাদের গাঁ….’

সময় বদলাচ্ছে, এখন তালগাছের বদলে ওরা গাম ট্রীজ আর পাম ট্রীজ চিনবে- এইতো স্বাভাবিক, আমার তাও যে কেনো বাচ্চাগুলোকে দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ;(

কালকে ‘ট্রেইটর’ মুভিটা খুঁজতে খুঁজতে ভিডিও দোকানের এক কোনায় গিয়ে দেখি, বেশী হলে বাচ্চাটার তিন থেকে চার বছর হবে, নীচের তাক থেকে নেংটাপুটু মেয়েদের ছবিওয়ালা ডিভিডি হাতে নিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে। আমাকে পাশে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কোনো পাত্তা দিলোনা। খুব ভালো করে দেখে আবার রেখে দিলো। আরেকটা হাতে নিলো। তাতেও নেংটা পুটু মেয়েদের দল।

আমার মন আর ভালো হয়না।
নিষ্পাপ শিশুদের নিষ্পাপ সবুজ-লাল-নীল ছড়াগুলোকে খুব মিস করি। কিন্তু ছড়াগুলো যে বেশীরভাগই ভুলে গেছি! ;( কারো কালেকশানে কী কিছু আছে? আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে। আগের কালের সেই ছড়াগুলো নিয়ে একটা ওয়েবসাইট বানানো দরকার। আপনাদের মধ্যে যার যে ছড়াই মুখস্ত আছে, এখানে লিখে দিয়ে যাবেন প্লীজ? অন্ততঃ যদি দুইলাইন মুখস্ত থাকে, সে দুইলাইন হলেও… আর কাউকে পারি না পারি, ভবিষ্যতে অন্ততঃ নিজের বাচ্চাকে হলেও তো একটা নিষ্পাপ শৈশব দেয়ার চেষ্টা করা দরকার। কী বলেন?

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৭:৪৬
৪৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুন্নী না হয়ে জান্নাতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫৯



সূরাঃ ১৭ বনি ইসরাঈল, ৭৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৭। আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে পাঠিয়ে ছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও সুন্নাত (নিয়ম) এরূপ ছিল। আর তুমি আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকৃতপক্ষে একক কোনো কাহিনী নির্ভর বই না। 'ময়মনসিংহ গীতিকা' হচ্ছে কবিতা বা গানের সংকলন, যা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মুখেমুখে প্রাচীন কাল থেকে ভিন্নভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×