somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশযাত্রা || প্রথম পর্ব : অবতারণা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা একটা গল্প। মনে মনে এ গল্প বহু আগে লেখা শেষ হয়ে গেছে। এরকম অসংখ্য গল্প মনে মনে লেখা শেষ হয়ে জড়ো হয়ে আছে অনেক বছর ধরে। সেগুলো খাতায়, ব্লগে বা ফেইসবুকের পাতায় কখনো লেখা হয় নি, কোনোদিন হবে বলেও মনে হয় না। সময় নেই। সময় পেলেই ওগুলো মনে মনে পড়ি। অনেক গল্প মুহূর্তে সৃষ্টি হয়ে একটু পরই হারিয়ে যায়, অর্থাৎ, ওটা কী গল্প কোন গল্প ছিল তা নিজেই ভুলে যাই। ওটার কথা ভাবতে ভাবতে আরো অনেক গল্প লেখা হয়ে যায়, কিন্তু হারানো গল্পটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, এমন থিমের উপর একটা কবিতাও আছে আমার। কবিতার নামটা অবশ্য এখন মনে পড়ছে না।

কিন্তু আপনারা ভাবুন তো, ‘আকাশযাত্রা’ শব্দটি দ্বারা আপনাদের মনে আদৌ কোনো গল্পের চিত্র ফুটে ওঠে কিনা। কিংবা, আপনারা ঠিক কী ধরনের গল্পের কথা কল্পনা করতে পারছেন, তা আমাকে বলুন। আপনাদের চিন্তার সাথে আমার চিন্তাপথের একটা সামঞ্জস্য কিংবা বৈসাদৃশ্য বোঝার জন্যই সবিনয়ে এটা জানতে চাইছি।

পুরোনো গল্পগুলো সচরাচর রাতে শুয়ে পড়ার পর, যখন দৃশ্যমান বস্তুগুলো ধীরে ধীরে চোখের ভেতর ডুবে যেতে থাকে, তখনই উদ্ভাসিত হতে থাকে। একটার পর একটা, উপর্যুপরি গল্পগুলো মগজে ভিড় করে, কিলবিল করে মগজের তন্তুগুলোর ভেতর, কামড়ায়, সুড়সুড়ি দেয়। আমাকে লিখে রাখার জন্য প্রণোদিত করে। কিন্তু, আমি ঘুমোতে চাই। এবং চোখ বন্ধ করি।

বাইরের ঝলমলে আলো থেকে সুমিহি রশ্মিগুলো চাঁদের জোসনার মতো, কিংবা রোদের ঝিকিমিকিতে বাতাসে বাঁকখাওয়া বৃষ্টির ঝাঁকের মতো আমার ছিমছাম অন্ধকার ঘরের জানালা দিয়ে নরম নীরব শব্দে ঢুকে পড়ে এক মনোরম দোদল্যমান আলো-আঁধারীর সৃষ্টি করে। সফেদ মশারি আচ্ছাদিত আমার নির্জীব খাটিয়ার চারপাশটা তখন রাজকীয় পালঙ্কের মতো মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।

গতরাতে শুতে একটু দেরি হলো। গতরাতটা ছিল আমার গজলের রাত। আমার একেকটা রাত, একেকটা সময়, বলা চলে একেকটা সপ্তাহ একেক ধরনের গানের ভেতর প্রবাহিত হয়। গানে আমি সর্বভুক। সব ধরনের গান থেকেই আমি নির্যাস পেতে ভালোবাসি। তবে, রাগপ্রধান গানে আমার অনুরাগ সবচাইতে বেশি। ধীরলয়ে গান বাজতে থাকবে। সুরে সুরে অন্ধকার জীবন্ত হবে; আমার ঘরের শূন্যতা দুলে উঠবে সুরের মূর্ছনায়; আমি জেগে থাকবো, কিংবা ঘুমিয়ে- গানে গানে আমারও সর্বাঙ্গ দুলবে। আমার মনে হবে, আমি বেহেশতখানায় সুখনহরের উপর শুয়ে আছি। সুখে উপচে পড়ছে পৃথিবীর হৃদয়। আমার খুব ভালো লাগে। আমি হারিয়ে যেতে থাকি, জাগরণে, কিংবা স্বপ্নের ভেতরে।

এমন সময় আমার খাটিয়াটি দুলে উঠলো। আমার চোখ মুদে আসছে ঘুমে, কিংবা আবেশে, সুখের আতিশয্যেও হতে পারে। আমি দেখতে পাই, দক্ষিণ দিকের দেয়ালটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে খুলে গেল, যেমন বিরাটকায় ফটকের দরজা দুজন প্রহরী দু’দিকে টেনে খুলে দেয়। আমি খাটিয়ার আরামপ্রদ শয্যায় শুয়ে আছি। খাটিয়াটি ধীরে ধীরে বের হয়ে এলো। ধীরে ধীরে...
ধীরে ধীরে ধীরে...
আকাশে মেঘ নেই। চাঁদ নেই। আছে শুধু অগুনতি তারারা। শহরের সর্বোচ্চ অট্টালিকার ছাদ পেরিয়ে আমার আকাশযান খাটিয়া আমাকে নিয়ে নভোবিহারে উড়ে চলছে। মন্থর গতি আস্তে আস্তে বাড়ছে।। বাড়ছে। বাতাস কেটে উড়ে যাচ্ছি।
আমি উড়ে যাচ্ছি, উড়ে যাচ্ছি…
শো শো শব্দে বাতাস কেটে, দু’দিকে উচ্ছ্বসিত তরঙ্গ তুলে উড়ে যাচ্ছি…
সুদৃশ্য গ্রামগুলো দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আকাশের ভেতর ভেসে আছে গ্রামগুলো; গ্রামগুলো বসে আছে ঢেউতোলা নদীর পাড় ধরে। ছুটে চলছে নদী কলকল সঙ্গীতের ছন্দে। গ্রামের মাথা ছাপিয়ে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেবদারু, বটগাছ, এক-মাথা তালগাছ। এগুলো আলোর গাছ। ঝলমল করছে আলোর নানাবাহারের গাছগুলো। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ নানান রঙের আলোয় ভরা গাছের পাতাপল্লব। বনের পর বন। সুঠাম দেহে সটান দাঁড়িয়ে থাকা অজস্র ঘন গাছের পায়ের ফাঁক গলে বহুদূর আমার দৃষ্টি চলে যায়। ধু-ধু, ধু-ধু দৃষ্টি চলে যায়, শুধু গাছ আর গাছ, গাছের পর গাছ, ঝলমলে আলো গাছ, চোখ-ধাঁধানো স্বপ্নের মতো গাছ।

বন-বনানির উপর দিয়ে আমি খাটিয়ায় ভেসে চললাম। আলোর সমুদ্র থই থই করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে পরীরা। ওরা যখন আমার পাশ দিয়ে উড়ে যায়, ওদের পাখার নরম ঝাপটায় আমার মন আন্দোলিত হয়। এমন সময়, অনেক পরীর মাঝখান থেকে পাখির মতো নেমে এসে আমার পাশে বসলো হেলেনা। হেলেনাকে দেখলাম কত বছর পর তা আমার হিসাবে নেই। কিন্তু ও আমাকে মিষ্টি হেসে বললো- এখানে সময়ের হিসাব রাখে না কেউ। তুমিও সময় ভুলে যাও।

১৫ আগস্ট ২০১৯

চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শুভ নববর্ষ। শুভ কামনা সব সময়।

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫০

শহুরে মঙ্গলের বলি, পল্লির হালখাতা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫১





ছবি টি সফিকুল আলম কিরন ভাইয়ের তোলা।

আজ পহেলা বৈশাখ মানেই শহরের রাস্তায় মুখোশ, কাগজের ঘোড়া, আর লাল-সাদা শাড়ির বাহার। তার নাম—মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতিসংঘ স্বীকৃত, উৎসবমুখর, মিডিয়ায় আলোচিত। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২০

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

তালাক হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল কাজগুলোর একটি। পারিবারিক জীবনে বিশেষ অবস্থায় কখনও কখনও তালাকের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যায় না বিধায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৪৩২ বয়স!

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪



বাংলা নববর্ষ নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস -
উন্মাদনা বিশেষত যারা একদিনের জন্য নিখাঁদ বাঙালি হয়ে 'মাথায় মাল' তুলে রীতিমতো উত্তেজনায় তড়পাতে থাকেন তাকে খাস বাংলায় বলে ভণ্ডামি!

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×