
নটরডেমে যেদিন প্রথম ক্লাস করতে ঢুকলাম, মন মেজাজ খুব একটা ভালো ছিল না। তার একটা প্রথম কারণ পুরা স্কুল জীবন বয়েজ স্কুলে পড়ার পর আবার সেই সৌন্দর্য বিবর্জিত বয়েজ কলেজেই পাইনসা লাইফ কাটাইতে ঢুকলাম। আরেকটা কারণ যেটা সেটা অবশ্য বেশি ভয়াবহ, আমার ধারণা ছিল নটরডেমে যাদের সাথে ক্লাস করতে যাচ্ছি তারা সবাই চশমা চোখে ভয়াবহ-দর্শন আতেল টাইপ হবে, বুকপকেট ফুটো করে কম্পাস বেড়িয়ে থাকবে। কারণ আমার সঙ্গীসাথী যে কয়টা চরম বান্দর ছিলো তার একটাও নটরডেমে আসতে পারে নাই। ক্লাসরুমে ঢুকে আক্কেল পুরোপুরি গুডুম, ১৬০ জনের ক্লাসরুম, সবার সিট ফিক্সড আর লোকজনে ভরপুর পুরো ক্লাসরুম গমগম করছে। কিছুই করার নেই, তাই আমার সিট টা খুজে বের করে ভয়েভয়ে সামনে পাশের ছেলেগুলোর দিকে তাকালাম। দেখলাম তারাও আমার দিকে ভয়েভয়েই তাকাচ্ছে। এর মাঝে স্যার আসলো, ক্লাসও কয়েকটা হল, ছেলেগুলোর সাথে একটু আধটু মিশে আমার ভয়ভীতি কাটতে শুরু করেছে। এরমাঝেই পেছন থেকে খোচাখুচি শুরু হল, আর পাশের ছেলেটা 'আমার' 'নায়িকার' নাম জানতে চাইলো

নায়িকা টার্মটার সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না, শিখলাম! সামনের পেছনের চারপাশের ছেলেদের মাঝ থেকে বিশেষ প্রতিভার অধিকারী ছেলেদের সন্ধান পাওয়া যেতে লাগলো এবং কোন একটা বোরিং ক্লাসে চিরায়ত গার্লফ্রেন্ডকেন্দ্রীক আলোচনার মধ্যদিয়ে আমার কলেজের প্রথম দিনটা শেষ হল, আর বুঝতে পারলাম এখানে দু'বছর খুব একটা খারাপ কাটবে না।
নটরডেমে আসার পর ছেলেরা দু'টো মোহের প্রতি অসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। একটা হল, কলেজের আইডি কার্ড! কি জন্য, সেটা দুই নাম্বার মোহটার কথা শুনলেই ক্লিয়ার হবে - একজন (একের বেশি হলেও সমস্যা নাই) 'ভিকি' গার্লফ্রেন্ড। ঈদের চাদ আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে বেইলী রোডে একবারো ঘোরাফেরা করেনি এমন ছেলে মনে হয় হাজারে একটা হবে। আমরা কলেজে আসার পর আজব নিয়ম করলো, যার কয়েকটা অংশ এরকম: টি-শার্ট, হাফপ্যান্ট, থ্রিকোয়ার্টার কিনবা ডিজাইন করা 'দাড়ি' পরে ক্লাসে আসা যাবে না। সবই বুঝলাম, কিন্তু দাড়ি কিভাবে পরে আসা যায় সেইটা মাথায় ঢুকলো না। সম্ভবত আমাদের ব্যাচের 'ইয়ো' পোলাপানের সংখ্যাধিক্যের কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাথায় দাড়ি 'পরে' আসার চিন্তা ঢুকেছিল।
নটরডেমে ঢোকার পরে প্রথম দিকে মোটামোটি ইন্টারেস্টিং একটা কাহিনী হইছিল, যেটা নিয়ে এই পোস্টে হালকা পাতলা বলেছি। (বেশি না বলাই ভালু) । সায়েন্স ক্লাবের একটা মজার কাহিনী বলি। কলেজে আমার দেখা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ক্লাব, যেটা থেকে আমি শিখেছি 'ত্যাল' এর উপরে বাংলাদেশে কিছুই নাই! এই ক্লাবের এডমিনিস্ট্রেশনে যেতে বড়ভাই দের যে কি হারে পাম্পিং করতে হয়, সেটার খবর পেলে বুশ সাদ্দামরে হুদা না জ্বালায়া তেলের জন্য বাংলাদেশ আক্রমণ করতো। যে কারণে এই তেলাতেলি আর ক্লাবে ভালো পজিশনে যাবার জন্য ফাইট: সেটা হচ্ছে 'ইন্টার কলেজ সায়েন্স ফেয়ার'। আন্ত: কলেজ শুনেই আপনার বুঝে ফেলার কথা, কোন কোন কলেজের কাদের জন্য ছেলেদের এত এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিস!


আমি তেলবাজির দৌড়ে অনেক পেছনে, তাও মুখচেনা বইলা মোটামোটি একটা রুমের ভলানটিয়ার হয়ে গেলাম। কোন রুম সেটা আর বলছি না। তো একটু পরে দেখি নাইন-টেনের ছেলেমেয়েরা প্রজেক্ট নিয়া আইসা পড়ছে। স্কুলও ছিল আরকি আমরা যেই বয়েজ স্কুলে পড়তাম, পাশেই ছিলো গার্লস স্কুল একখান, যারা আমাদের স্কুলের সুবোধ ছেলেদের কাছ থেকে ভালোই সমীহা পেয়েছে





সায়েন্স ফেয়ারের সেই দুই দিন আমি দু'তিন ঘন্টা পর পর ওদের স্টলে ঘুরান দিয়া একটা কইরা চুইংগাম নিয়া আসতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:১৫