মাত্র দুই মিনিটে যেভাবে আদর্শ ব্লগীয় নাস্তিক হবেন
ব্লগের একজন তথাকথিত বিশিষ্ট নাস্তিক হবার জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন-
১. বেশ কয়েকটি ই-মেইল আইডি (একাধিক নিক রেজিস্ট্রেশনের জন্য)
২. বেশ কয়েকটি ব্রাউজার (একই সময় একাধিক নিকে অনলাইন হবার জন্য)
৩. কয়েকটা বোতল (বোতল শেষ করেই পরে লিখতে বসবেন )
৪. লজিক (এই জিনিসটা একেবারেই থাকা যাবে না )
৫. বাংলার অশ্লীল গালি-অভিধান (আপদে-বিপদে আপনার আসল অস্ত্র )
ইতিহাস
এমন একটা সময় ছিল যখন ব্লগের নাম শুনলেই চোখে ভেসে উঠৎ ভয়ংকর একটা ওয়েবপেইজের ছবি, যেখানে আতেলসদৃশ ব্লগার রা চশমার ওপর দিয়ে চোখ বের করে দিয়ে কিবোর্ড টিপে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছেন ব্লগ কি- বিশেষ করে বাংলা ব্লগিং কি এ নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণও আমার মাঝে ছিল না। আস্তে আস্তে ব্লগে এলাম। ব্লগ পড়া শুরু করলাম। পড়েই যেতাম। কবিতা আর রোমান্টিক টাইপ লেখালেখিগুলো সাবধানে এড়িয়ে চলতাম অল্প কিছুদিনের মাঝেই ব্লগ জিনিসটার সাথে সখ্য হয়ে গেল। অন্যদের কমেন্ট দেখে নিজের ভেতরের কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য মন আকুপাকু করতে করতে একদিন রেজিস্ট্রেশন করেও ফেললাম। এর মাঝেই ব্লগীয় নাস্তিকতার স্বরূপটা আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে।
আচ্ছা, নাস্তিকতা মানে কি? আমার জানা মতে বিষয়টা এরকম- সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে অবিশ্বাস। এর মানেই যদি নাস্তিকতা হয়, তবে ব্লগীয় নাস্তিকতা নিয়ে আমার কিছু মতবাদ আছে। আর যদি আমি নাস্তিকতার সংঞ্জাই ভুল ধরি, তাহলে নিচের কথাগুলো অর্থহীন।
ব্লগে মার্কামারা কতগুলো নিক নাস্তিকতা বিষয়ক আলোচনাগুলো করে থাকে। নিকগুলো আমার আর লিখার দরকার নাই, সবাই ভালোমতই চিনে নিয়েছে এদের। একটা জিনিস আমি বুঝি না, পৃথিবীতে ধর্ম কিন্তু একটা না, বেশ কয়েকটাই আছে। তার মধ্যে একটা ইসলাম। (যদিও ইসলাম ধর্ম না, পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, সেটা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছি না ) ব্লগীয় নাস্তিকগুলো অন্য কোন ধর্ম নয়, বারবার ইসলামের পেছনেই লেগে থাকে। এর অবশ্য সম্ভাব্য যুক্তি হতে পারে- ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, তাই ইসলামকে ভুয়া প্রমাণ করাই যথেষ্ট, বাকি সব ধর্ম আপনা-থেকেই ভুয়া প্রমাণিত হয়ে যাবে। এটা যদি ইসলামের পেছনে লাগার পেছনের কারণ না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে এরা আসলে ইসলামের পেছনে লাগা ব্যক্তিবিশেষ, নাস্তিকতার আড়ালে যার আসল উদ্দেশ্য ইসলাম কে হেয় করা ছাড়া কিছুই না।
আমি দীর্ঘ সময় পরেই এই পোস্ট টা দিলাম। এই লম্বা সময়ে ব্লগের বিশিষ্ট কয়েকজন নাস্তিকের জীবনাদর্শ দেখার পরই এই পোস্ট লিখছি। মজার ব্যাপার হল, এরা আস্তিকতা-নাস্তিকতা ছাড়া অন্য কোন পোস্ট দেয় না, বা অন্য কোন থিমের পোস্টে মন্তব্যও করে না। এর পেছনের কারণ হতে পারে দু'টি - (১) এরা খুব ভাল নাস্তিক, নাস্তিকতা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না (২) এগুলোর সবগুলোই আসলে ফেইক (ভুয়া) নিক, এসব নিকের আড়ালে হাতে গোণা ২-৩ জনই ব্লগীয়ে যাচ্ছে। বলাই বাহুল্য দুই নম্বর কারণটাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
নাস্তিক হতে পারার অনেক ফায়দা। নাস্তিকতা এক ধরণের স্মার্টনেস, সবার কাছ থেকে অন্যরকম হওয়া যায়। কিছু অতি-পাকনা আর আধুনিক "মননের" তরূণী সমাজের কাছেও হট-কেক হতে পারবেন নাস্তিক হয়ে। আপনার পোস্টে যারা কমেন্ট দিয়ে যাবে এরকম - "এতটা গুছিয়ে কিভাবে যে লিখলেন! +++++++++" পারলে এরকম কিছু নারীর নিক নিজেই তৈরি করুন। এসব স্মার্টনেসের ঠেলায় নবীন কিছু ব্লগার আপনাদের নাস্তিকমহলে ঢুকে পড়লেও পড়তে পারে।
রাজনৈতিক দল জামাতকে আমি ঘৃণা করি। কষ্ট লাগে যখন দেখি ইসলাম নিয়ে কিছু উল্টাপাল্টা লিখার পরও পুরাতন, নামী দামি ব্লগার-রাও ধর্মের সাথে রাজনীতি মিলিয়ে ফেলে। জামাত একটা সুবিধাবাদী রাজাকার পার্টি, ইসলামের সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়?
যেভাবে হবেন আদর্শ ব্লগীয় নাস্তিক
উপরের প্যাচালগুলো পড়ে বুঝে ফেলেছেন ব্লগের নাস্তিকতা আসলে কি জিনিস। কাজেই আপনার আসল উদ্দেশ্য যদি তাই হয়, চটজলদি সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়া, আর এই চামে ইসলামেরও গুষ্টি উদ্ধার করা, তাহলে আজই হয়ে যান ব্লগের নাস্তিক পরিবারের একজন সম্মানিত সদস্য
১। ব্লগে কিছু নিবেদিতপ্রাণ নিক পাবেন যারা ইতোমধ্যেই আদর্শ নাস্তিক হিসেবে খ্যাতির শেষ সীমায় । নিক কথাটা কেন বললাম বুঝতেই পারছেন, এইসব মালটিপল নিকের আড়ালে ব্যাক্তি আসলে এক-দুইজনই। নাস্তিক হবার শুরুতেই এসব মার্কামারাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলুন। আজেবাজে পোস্ট দিয়ে পাবলিকের নেক নজরে পড়লে এরাই আপনার পিঠ বাচাতে এগিয়ে আসবে।
২। নিকটা অবশ্যই হতে হবে তাৎপর্যপূর্ন। পৌরাণিক নিকের আশ্রয় নিতে পারেন। 'গণাধা' টাইপ নাম হতে পারে এক্ষেত্রে আপনার প্রথম পছন্দ। সবচেয়ে ভালো হয় বাংলা ডিকশনারী দেখে দাত-ভেংগে-যায় এমন কিছু কঠিন কিন্তু ভালো ভালো বাংলা শব্দ খুজে নিন। যেমন- "সত্যান্বেষণ", "অগ্নিশিখা", "ভালো-মানুষ"। টাইটেলে মারাত্বক ডায়ালোগ দিয়ে দিন - "ঘিলু খুড়ে সত্য খুজুন" - এই জাতীয়। আর পায় কে! আপনি তো হিট! আরেকটা পদ্ধতি হতে পারে লুল জাতীয় নিক খুজে বের করুন। "দূরপাখি" এই জাতীয় আধা-ভাবীয় নিক দিয়ে একদিকে যেমন নাস্তিকতা করতে পারবেন, আবার লুল-জাতীয় কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে পারবেন। আপনার নিকের জন্যই নারী মহলে আপনি হিট হয়ে যাবেন যদি এই টাইপ নিক লাগাতে পারেন।
৩। আর কিছু পারেন আর না পারেন, গালিগালাজের ডাটাবেস আপনার টইটম্বুর রাখতে হবে। মনে রাখবেন, আপদে বিপদে এইসব অশ্লীল গালিভাণ্ডারই আপনার বন্ধু। আপনি উল্টাপাল্টা লেখা দিয়ে পাবলিকের নজরে পরবেন এটাই স্বাভাবিক, আর বেকুব পাবলিক ও আপনার যুক্তি (!) খন্ডন করতে এসে পড়বে। যখন আর পারবেন না, সুযোগ বুঝে গালিভাণ্ডারের সদ্ব্যবহার করুন। আস্তিকরা আর যাই হোক, আপনার এডভান্সড গালিমালার সাথে না পেড়ে লজ্জা শরম নিয়ে পালাবে । তখন লিখে দেবেন - "ওমুক ব্লগার সাহেব আমার যুক্তির সাথে না পেড়ে পলায়ন করিয়াছেন।"
৪। তৈরি করুন একাধিক নিক। এতে করে দুটি লাভ হবে। (১) - নিজের লিখায় নিজেই নিজের তেল মারতে পারবেন, আবার আপনার লেখায় প্রতিপক্ষ কেউ কমেন্ট করে কিনা ওত পেতে থাকুন। একবার কমেন্ট করলেই হোল, আর পায় কে! নিজের নিকগুলো কাজে লাগিয়ে ব্লগার বেটার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলুন। ৩ নং টিপস অনুযায়ী গালি লাগাতে ভুলবেন না।
৫। তৈরি করুন নিজের প্লাস বাহিনী। নিজে কোন লিখা দেবার পর পরই প্লাস বাহিনীর বদৌলতে অটোমেটিক আপনার লিখা প্লাসে ভরে যাবে। একই সাথে কমেন্টও জুড়ে দিন - "বরাবরের মতই অসাধারণ। আপনার যুক্তিগুলোর জবাবে আমড়া কাঠের ঢেকি কি বলে দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।" একই সাথে প্রতিপক্ষ ব্লগার পোস্ট দিলে মাইনাস দেয়া সহ গালিগালাজে এই বাহিনী কাজে আসবে। এক্ষেত্রে ৪ নং ধাপে তৈরি করা একাধিক নিকগুলো কাজে আসবে।
৬। ভুংচুং মার্কা পোস্ট দিন। "আমি আজ শুকর খেয়ে নাস্তিক হয়েছি" - এই জাতীয়। আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, আপনার লেখালেখিতে অবশ্যই লজিক থাকতে হবে। কারণ নাস্তিকতা মানেই হল যুক্তি। শুকরের মাংস খেলে রোগশোক হয় তো কি হয়েছে, "আমি নাস্তিক হৈছি, আমার পয়সায় আমি শুকর কেন পারলে তোরেও খামু তোর বাপের কি" - যুক্তির ঠেলায় প্রতিপক্ষ ব্লগার ব্লগ ছেড়ে পালাবে।
৭। গালি সিস্টেম সবসময় যে কাজ করবে - এমনটা নাও হতে পারে। কিছু রক্ত গরম পাবলিক আপনার অশ্লীল গালিগালাজের জবাবে হালকা পাতলা মধুবর্ষণ করলেও করতে পারে। তার সাথে পেরে না উঠলে ব্লক বোতামটির সদ্ব্যবহার করুন।
৮। সবসময় কথাবার্তা পেচিয়ে ফেলার অভ্যাস তৈরি করুন। বিশাল বিশাল পোস্ট দিয়ে বিষয়বস্তু আরো ঘোলাটে করতে পারবেন। লম্বা বাক্য লিখবেন সবসময়। বাংলা অভিধান ঘেটে জুড়ে দিন দুর্বোধ্য সব শব্দ। বলাই বাহুল্য, আপনার সব পোস্টেই রেফারেন্স থাকবে আর তা হতে হবে কুরআন বা হাদীস - নিজেই তৈরি করুন। স্রষ্টা কেন আছে বা নেই - এ জাতীয় আলোচনায় আস্তিকদের যুক্তিগুলো একবাক্যে খণ্ডন করে দিতে পারবেন এভাবে - "আপানার যুক্তি গতানুগতিক আস্তিকতার মূলেই যার পেছনে আচে বিশ্বাস, আর আপনার জবাবের পেছনে আমার যুক্তি দিলে আপনি বলবেন স্রষ্টা আছেন আমাদের জগৎের বাইরে যাকে আমাদের নোলেজের বাইরে ...... ....... ....... তখন আমি বলব ........... যার জবাবে আপনি বলবেন ............" এভাবে পেচিয়ে ফেলে আপনি প্রতিপক্ষকে হয়রান করে ফেলতে পারবেন। আর বলাই বাহুল্য, চাপা মারার মত কিছুই না পেলে লাফ দিয়ে অফটপিকে চলে যাবেন। "আল্লাহ কে" - এই টাইপের আলোচনা বা "ইসলামে পানশালা ও পতিতালয় আসছে" - এই টাইপের নিত্য নতুন পোস্টও দিতে পারেন।
৯। নতুন ব্লগারদের কনফিউজড করে ফেলুন। নতুন ব্লগার রা নিশ্চিতভাবেই আপনার স্বরূপ জানে না, আর এটাই আপনার সুযোগ। জনৈক ভট্টাচার্য সাহেবের মত "ইসলামের হারানো গৌরব ফিরে আনার দায়িত্ব আপনারই" - এইজাতীয় পোস্ট দিয়ে দিন। আর এর পেছনে লিংকে দিয়ে দেবেন ফেইসবুকের ইসলাম-বিরোধি কোন গ্রুপের সদস্যপদের লিংক। আমাদের ব্লগেরই জনৈক ভট্টাচার্য সাহেব এই কাজটি করে রীতিমত সারা তুলেছিলেন! এরপর ব্লগারদের ধোলাই খেয়ে সব পোস্ট মুছে দিয়ে লিখে দিলেন - "কারো মনে কষ্ট দিতে চাইনি" (বলাই বাহুল্য ধোলাই খেলে আপনিও একই পন্থা অবলম্বন করতে পারেন)
১০। শেষ টিপস: তৈরি করুন সেনসিটিভ পোস্ট। ইসলামে নারীদের শেকল পড়ানো হয়েছে - এ টাইপের বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে অল্প-শিক্ষিত পাবলিকদের পেচে ফেলতে পারবেন, সুরসুর করে এরা আপনার লেখায় প্লাস দিয়ে যাবে। একই সাথে কিছু নাম সর্বস্ব নেত্রী-টাইপ ব্লগারও পেয়ে যাবেন নিজের কাছে। রেফারেন্স নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেন না। নিজে বানিয়ে কুরআন-হাদিসের নামে চালিয়ে দিন। আর ভুলেও মহানবী (স) এর প্রতি কোন সম্মান দেখাবেন না, মোহাম্মদ বলে চালিয়ে দেবেন, যেন আপনার কতকালের দোস্ত।
আশা করা যায় এভাবেই আপনি আদর্শ ব্লগীয় নাস্তিক হতে পারবেন...