কোন একটা ব্লগীয় আড্ডায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল অনেকদিন থেকেই। ভার্চুয়াল জগতে যে মানুষগুলোর সাথে রোজ উঠাবসা, এত সুন্দর সম্পর্ক (কারো কারো সাথে খারাপ সম্পর্কও!), তাদেরকে সামনাসামনি রিয়েল লাইফে দেখার বা তাদের সাথে কথা বলার লোভ সামলানো আসলেই অনেক কঠিন।
তবে যাই যাই করেও কোন আড্ডায় আর যাওয়া হচ্ছিল না। অন্যরা ফ্রি থাকলে আমি ব্যস্ত থাকি আর আমি ফ্রি থাকলে অন্যরা ব্যস্ত থাকে!
যাই হোক, শেষপর্যন্ত আমার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে গতকালের ব্লগ ডে’র অনুষ্ঠানে গিয়ে।
অনেক ব্লগারের সাথে দেখা হল, কথা হল, আড্ডা হল। ব্লগারদের পোস্ট পড়ে বা কমেন্ট পড়ে তাদের সম্পর্কে যে ধারনা ছিল মনে মনে, তা অনেকের সাথেই মিলে গেছে, আবার অনেকের সাথে একদমই মেলেনি!
তো যাদের সাথে দেখা হল তাদের সম্পর্কে আগে কি ধারনা ছিল আর দেখা হওয়ার পর কি ধারনা পোষন করছি, আর সেই সাথে তাদের সম্পর্কে দুই-এক লাইন লিখে রাখা দরকার বলে মনে করায় এই পোস্ট দিলাম।
তার আগে বলে নেই, আমি কিছুটা অমিশুক আর লাজুক টাইপের, নতুন মানুষের সাথে এডজাস্ট হতে সময় লাগে, তবে যাদের সাথে একবার এডজাস্ট হয়ে যাই তারা জানেন আমি কেমন মজা করতে পারি! যথারীতি কালও সবার সাথে খুব বেশি কথা বলা হয়নি, শুধু চুপচাপ সবার কথা শুনেছি, কে কি বলে তা খেয়াল করার চেস্টা করেছি। অনেকে হয়ত ভেবেছেন আমি অনেক মুডি, ভাব ধরে আছি, তাদের কাছে আমার এই আচরনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি আরো ২-১ বার দেখা হলেই অনেক ফ্রি হয়ে যেতে পারব সবার সাথে।
নিচের ব্লগারদের নামের ক্রম তাদের সাথে দেখা হওয়ার ক্রম অনুযায়ী দিলাম, মানে যার সাথে আগে দেখা হয়েছে তার নাম আগে।
শিপু ভাই-- কালকে সবার আগে পরিচয় হয় তার সাথেই। তাকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই! ব্লগে তিনি ঠিক ততটাই উচ্ছ্বল যতটা রিয়েল লাইফে। অনেক মিশুক।
কালকে স্যুটেড-বুটেড হয়ে এসেছিলেন তিনি, গলায় টাই চুলে জেল-টেল মেরে একাকার অবস্থা! পরে খাওয়ার সময় ঠান্ডা পুরি-বড়া চাবানোর সময় তাকে বলতে শোনা গেছে,”ধুরররর, এই পুরি আমার স্যুট-টাইয়ের ইজ্জত মাইরা দিল!!”
রুদ্রপ্রতাপ-- তার ব্লগিং দেখে তার সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল তিনি সিরিয়াস বিষয়ে অনেক সিরিয়াস, আবার মজার সময়ে অনেক মজা করেন। আমার ধারনা মিথ্যা ছিল না। অনেক ভাল লেগেছে তার সাথে পরিচিত হয়ে। যদিও খুব বেশি সময় তার সাথে থাকা হয়নি।
তার সম্পর্কে শুধু বলতে চাই- সব প্রতিবন্ধকতাকে দুরে ঠেলে আপনি যেভাবে নিরন্তর ব্লগিং করে যাচ্ছেন তাতে আমি নিজে অনেক উৎসাহ পেলাম। আপনাকে স্যালুট বাধন ভাই।
মিরাজ is-- মিরাজ ভাইকে আমি ভাবতাম কিছুটা বয়স্ক ও গুরুগম্ভীর টাইপের কেউ। এখন দেখি এইটুকু একটা পিচ্ছি এসব কঠিন কঠিন পোস্ট দেয়, গুরুগম্ভীর কমেন্ট করে!
তারসাথে আড্ডা দিয়ে বেশ লেগেছে। অনেক আড্ডা দিলাম আমরা, মানে তিনি বল্লেন আর আমি শুনলাম আরকি!!
জাহাজী পোলা-- তার ব্লগিং দেখে তার সম্পর্কে আমার যা ধারনা ছিল তা পুরোপুরি মিলে গেছে। প্রানচঞ্চলে ভরপুর একজন মানুষ। যদিও তার সাথে খুব বেশি কথা বলা হয় নাই।
যে ২-১ জন ব্লগার এবারের সেরা ব্লগারের তালিকায় বিনা আপত্তিতে অবস্থান করছেন তাদের একজন হলেন জাহাজী পোলা। তাকে অভিনন্দন।
রাজসোহান-- আগে ওনাকে ব্লগে অনেক একটিভ পাওয়া যেত, প্রানচঞ্চলে ভরপুর মনে হত তাকে। এখন পোস্টগুলায় ওনাকে অনেক গম্ভীর মনে হয়। যদিও এখনো অনেক ফানি কমেন্ট করেন ফান পোস্টগুলায়। কালকে ওনার সাথে তেমন কথা বলা হয়নি, প্রায় পুরো সময় তিনি বিজি থাকলেন ল্যাপটপ নিয়ে, লাইভ ব্লগিং করছিলেন কিনা জানি না। আর বাকি সময়টা বিজি থাকলেন অন্য একজনকে নিয়ে!!
আশা করি পরে আর কথা হবে ওনার সাথে।
ইশতিয়াক আহমেদ চয়ন-- তার পোস্ট পড়লে তাকে অনেক ফানি মনে হয়, আবার কমেন্ট পড়লে কিছুটা লাজুক ও অন্তর্মুখী মনে হয়। বাস্তবে তিনি আসলেই কিছুটা লাজুক, শুরুতে কিছুটা আঢ়ষ্ট মনে হলেও পরে বেশ সাবালীল ছিলেন।
চয়ন ভাই, আপনার সাথে জমবে ভাল!!
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়-- এই কবিকে মনে হয়েছিল অনেক সরল, মনে কোন প্যাচগোচ নাই। আসলেও তিনি অনেক সহজ-সরল মানুষ, অনেক মিশুক। ভালো লেগেছে ওনাকে।
আরজুপনি-- ওনার পোস্ট আগে খুব বেশি পড়া হয় নাই। যে ২-১টা পোস্ট পড়েছি তাতে ওনাকে অনেক সিরিয়াস মনে হয়েছিল। কিন্তু কালকে দেখি তিনি অনেক ফান করেন, অনেক মিশুক, সবার সাথে মজা করে কথা বলেন।
ভালো লেগেছে আপুর সাথে কথা বলে।
উনি চলে যাওয়ার পর ওনার লিখা বই দেখলাম তন্ময় ভাইয়ের কাছে, ওনার এই অন্য পরিচয়টা পেয়ে বেশ ভাল লাগল।
আরিফ রায়হান মাহী-- মাহী ভাই সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিল না আগে, আমি ব্লগে আসার পর ওনার তেমন কোন একটিভিটি চোখে পরেনি, জুলভার্ণ বিতর্কে একবার তাকে দেখেছিলাম আর গতকাল সকালে তার একটা জ্বালাময়ী পোস্ট দেখলাম। ভেবেছিলাম বয়স্ক কোন ব্যাক্তি, অথচ পরে দেখি আমাদের বয়সীই একজন, কালকের আড্ডার অন্যতম উচ্ছ্বল তরুন।
ভালো লেগেছে তাকে। তার সাথে আবার দেখা করার ইচ্ছা পোষন করছি।
ফারজুল আরেফিন-- তার পোস্ট ৩-৪ দিন আগে থেকে পড়া শুরু করেছি, যথেস্ট ভাল লেখেন তিনি। তাকে কেন ৯ মাস ধরে ওয়াচে করা হয়েছে তা কারোই বোধগোম্য নয়!
অনেক সহজ-সরল মানুষ বলে মনে হয়েছে তাকে।
সুপান্থ সুরাহী-- এই কবির কবিতা বেশি পড়া হয়নি আগে। তবে তার সাথে পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লেগেছে। কবিদের মতই কিছুটা কাব্যিক ঢং-এ কথা বলেন তিনি।
রোকন রাইয়ান-- ওনাকে যেমনটা ভেবেছিলাম উনি তেমনি, বেশ গম্ভীর। বেশি কথা হয়নি ওনার সাথে।
সরল মানুষ-- সমা’র পোস্ট আগে পড়া হয়নি আমার, উনি খুব সম্ভবত সামুতে নিয়মিত নন। তবে ওনাকে দেখে অনেক সরলই মনে হল আমার।
সহচর-- ভার্চুয়াল জগতে উনি যতটা ফানি, বাস্তবে আরো বেশি ফানি! অনেক ভাল লেগেছে ওনার সাথে পরিচিত হয়ে।
বেচারা তার প্রোপিকের হলুদ গেঞ্জিটা পরে এসেছিলেন যাতে সবাই তাকে চিনতে পারে, কিন্তু কেউ তাকে চেনেনি শুরুতে! আফসুস!!
নষ্ট কবি-- তার পোস্ট ও কমেন্ট দেখে আমি ভাবতাম অনেক মুডি একজন মানুষ। কিন্তু আসলে তিনি অনেক মজার মানুষ। অনেক মজা করে কথা বলেন। অনেক আড্ডা দিলাম আমরা। তার উপরে তিনি আবার আমার ভার্সিটির বড় ভাই!
ছোট মির্জা-- সরাসরি অফিস থেকে স্যুটেড-বুটেড হয়ে চলে আসা এই মানুষটি সম্পর্কে আগে তেমন ধারনা ছিল না, তবে আমি তাকে যতটা বয়স্ক ভেবেছিলাম আসলে তার বয়স ততটা না।
তিনি একটা ডায়রিতে সব ব্লগারের ফোন নাম্বার লিখে নিয়েছেন। আমিও দিয়েছি, এখন মনে হচ্ছে কোন বিপদে না পরি আবার!
নোমান নমি-- এই কবির সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল অনেক। ভার্চুয়ালি তার সম্পর্কে যা ধারনা ছিল বাস্তবেও তিনি ঠিক তেমনি, অনেক ভালো মানুষ!
আপনার সাথে আবার দেখা করতে চাই নোমান ভাই!!
প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার-- ওর কবিতা ও কমেন্ট পড়ে ওকে কিছুটা গম্ভীর ভাবতাম, ও আসলেই কিছুটা গম্ভীর, তবে ওর সেই বিখ্যাত (না কুখ্যাত?) ছবিটা দেখে বয়স যতটা আন্দাজ করেছিলাম, তারচেয়ে ওর বয়স কম।
ওর সাথে আড্ডা দিয়ে ভাল লেগেছে। জুনিয়র হিসেবে সিনিয়র ব্লগারের কাছ থেকে ব্লগের অজানা কিছু কথা জানতে পেরেছি।
আর.এইচ.সুমন-- সুমন যত সুন্দর ছবি তোলেন ঠিক তেমনি সুন্দর মনের মানুষ তিনি! বেচারা এই ঠান্ডার মধ্যে অডিটরিয়ামের বাইরে দাড়িয়ে আড্ডা দিতে গিয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মনসুর-- ওনার পোস্ট বা কোন কমেন্ট পড়েছি বলে মনে পরে না, এমনকি তার ব্লগও খুজে পেলাম না! নামের বানান ভুল হচ্ছে মনে হয়। তবে ওনার সাথে পরিচিত হয়ে দারুন লাগল। দারুন মজার মানুষ তিনি। তার সেন্স অফ হিউমার অসাধারন। যেকোন আড্ডা জমাতে তার মত একজনই যথেস্ট!
আশা করি আমাদের আরো দেখা হবে।
রেজওয়ান মাহবুব তানিম-- তানিম ভাইয়ের সাথে আগে দেখা না হলেও ফেবুতে প্রায়ই কথা হয়, বেশ ভাল সম্পর্ক। ভালো লেগেছে ওনার সাথে কথা বলে। তবে বরাবরের মত অন্য প্রায় সব কবিদের মতই তিনিও কিছুটা কাব্যিক ঢং-এ কথা বলেন!
চে গুয়েভেরা ২-- ওর সম্পর্কে যা ধারনা ছিল বাস্তবে ও সেটাই! পুরা পাগল!
জিশান সা ইকরাম-- মামার কথা আর কি বলব। সবাই জানেন তিনি কেমন। পরিচয় হতেই বুকে জড়িয়ে নিলেন।
ব্লগিং বিষয়ে কিছু কথা হল ওনার সাথে। কিছু পরামর্শ পেলাম। আশা করি কাজে লাগাতে পারব।
আপনার সাথে আবার দেখা হবে আশা করি মামা।
সাকিন উল আলম ইভান-- যা ধারনা করেছিলাম তারচেয়ে অনেক পিচ্ছি! কিউটি কিউটি! আমার সাথে বেশ মিল আছে চেহারা-শরীরে, আমার ছোট ভাই বলে নিশ্চিন্তে চালিয়ে দেয়া যাবে!
ওর সাথেই মনে হয় সবচেয়ে বেশি আড্ডা দিলাম। ভালো লাগল পিচ্ছিটাকে!
ছাইরাস হেলাল-- ওনাকে এতদিন হেলাল ভাই ডাকতাম, কিন্তু দেখা হওয়ার পর বুঝতে পারছিলাম না ভাই ডাকা উচিত হবে কিনা!
ওনার সাথে বেশি কথা বলার বা ওনার সাথে থাকার সুযোগ হয়নি। তাই আর বেশি কিছু লিখলাম না।
মনিরুল ইসলাম বাবু-- যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনি, নিপাট ভদ্রলোক!
নিশাচর ভবঘুরে-- ওনাকে বেশ মজার মানুষ মনে হয়েছিল ওনার পোস্ট পড়ে, আসলেই উনি খুব মজার মানুষ। বেশ লাগল ওনার সাথে পরিচিত হয়ে, আড্ডা দিয়ে।
রাস্ট্রপ্রধান-- উনি ক্যাম্রাম্যানের ভাব লয়, আসলে উনার ক্যাম্রা বালো না, ঝাপ্সা ফডু উডে, পরে দেখলাম ক্যাম্রা টিস্যু দিয়া পেচাইয়া ফডু তুলার ট্রাই নিল!
অনেক মজার মানুষ এই রাস্ট্রপ্রধান ভাই, মনসুর ভাইয়ের সাথে ওনার জুটিটা ভালোই!
আশকারি রহমান-- জানতাম অনেক ছোট ছেলে ও, তাই দেখে তেমন চমকাইনি।
ওর সম্পর্কে একটা কথাই বলা যায়-- সময়ের অনেক আগেই পেকে যাওয়া ফল!
অন্যমনস্ক শরৎ-- ওনার ভয়েস পুরাই সেরাম! ভাল উপস্থাপনা করেন। সেন্স অফ হিউমারও বেশ। ভালো লেগেছে ওনার সাথে পরিচিত হয়ে।
তন্ময় ফেরদৌস-- ভবিষ্যত মুভি ডিরেক্টর এই মানুষটির সাথে আমার দেখা হয়েছে অনুষ্ঠানের একদম শেষে এসে। বেশি কথা বলার সুযোগ পাইনি। তবে যতটুকু দেখলাম তার মধ্যেই অনেক আন্তরিক ও সদালাপী বলে মনে হয়েছে। আশা করি আবার দেখা হবে!
অণুজীব-- অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয় ওনার সাথে। তেমন কোন কথা হয়নি, তাই ওনার সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছি না। বেশ চুপচাপ মনে হল, যেটা আমি আশা করিনি! হয়ত তিনি আমার মতই কিছুটা লাজুক। আশা করি আবার দেখা হবে।
এর বাইরে পরিচয় না হলেও কয়েকজন বিখ্যাত ব্লগার(?) সম্পর্কে দুটি লাইন লেখার লোভ সামলাতে পারছি না! যদিও জানি না উনারা আমার পোস্টে আসবেন কিনা!
জানা-- আমি ভাবতাম তিনি মনে হয় অনেক ঝগড়াটে টাইপের মহিলা, ঝগড়া করতে করতে ভোকাল কর্ড খসখসে হয়ে গেছে। কিন্তু ওমা, কাল তার ভয়েস শুনে তো আমি অবাক! অনেকটা কাব্যিক ঢং-এ সুমধুর কন্ঠের কথাগুলো শুনতে বেশ লেগেছে।
অরিল-- তার মুখের বাংলা শুনে অনেক মজা পেয়েছি!
কৌশিক-- আপনার পারসোনালিটি, উপস্থাপনা এবং আপনার ভয়েস অসাধারন! উপস্থাপনায় আপনার ভবিষ্যত উজ্জল!!
জীবনানন্দদাশের ছায়া-- উনার পোস্ট আর কমেন্ট পড়ে ভাবতাম থুরথুরে বুড়ো টাইপের কেউ হবেন। আর যে যাই হোক আপনি এত কম বয়েসী এটা ভাবতেই পারিনি! কালকে আপনার সাথে কথা হয়নি, আশা করি সামনে আবার দেখা হবে, তখন কথা হবে।
----------------------------------
আর কারো কথা এই মূহুর্তে মনে পরছে না, সম্ভবত কারো নাম বাদ দেইনি আমি, যদি বাদ পরে যায় সেজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।