somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনসিসি এবং একটি বিয়ের গল্প

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--কি চাচা......শুনলাম আপনি নাকি মনির ভাইয়ের বিয়ে ভাইঙ্গে দিছেন?
--আরে আর বইলো না ভাইস্তা......মাইয়া হইল গিয়া নোয়াখালীর। তুমিই কও, বিএনসিসি’র মানুষ কোনদিন ভাল হয়??? তোমার মনির ভাইরে এইকথা বুঝাইতেই পারতেছি না! তোমরা ওরে একটু বুঝাও......

কি বলব আমি? এলাকার বড় ভাইয়ের আব্বা যখন আমার আমার সামনেই চারটি জেলার মানুষের পিঠে “খারাপ মানুষ” এর সিল মেরে দিচ্ছেন, তখন লজ্জায় আমি বলতে পারি না যে আমার নিজের বাড়িও ওই চার জেলার একটিতে!!!

নোয়াখালীর ওই মেয়ের সাথে মনির ভাইয়ের বিয়ের সব কথাই পাকা হয়ে গিয়েছিল। মেয়ে সবদিক দিয়েই ভাল। নামাজী, মাস্টার্স পাশ, দেখতে মোটামুটি সুন্দরী, বাবার ঢাকায় ৫ তলা বাড়ি—বলা যায় বিয়ের বাজারের টপ ক্লাস পাত্রী!!! মনির ভাইয়ের খুবই পছন্দ হয়েছিল মেয়েটিকে। যেদিন দেখে এসেছেন তার পর থেকেই ওর সাথে রেগুলার ফোনে কথা বলে মোটামুটি দুইজনে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ পৌছেছিলেন। সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎই বেকে বসেন মনির ভাইয়ের আব্বা। তাকে নাকি তার অফিসের কলিগরা বলেছেন,
--আরে মতিন সাহেব, আপনি এত ভাল মানুষ, আর আপনি কিনা ছেলে বিয়ে করাচ্ছেন নোয়াখালীতে!! জানেন ওরা কত খারাপ!! বিএনসিসি’র মানুষ কোনদিন ভাল হয় না!!!

এমন উদ্ভট কারন শুনে হতবাক হয়ে যান মনির ভাই। মেয়ে পক্ষও অনেক রেগে যায়। তাদের রাগ করাটাই স্বাভাবিক ছিল, নাকি???
--তারা আমারে কয়কি, “আপনার কোন বিবেচনা নাই মতিন সাহেব?? এমন উদ্ভট কারনে কিভাবে আপনি ঠিক হয়া বিয়ে ভেঙ্গে দেন?? আপনার মত শিক্ষিত মানুষ কিভাবে এমনটা করে?!! এখন আমাদের সম্মানের কি হবে???” এহ...আইসেরে!! নোয়াখাইল্লাগো আবার সম্মান!!!

যাক...কয়েকদিন পর আবারো অন্য একটি মেয়ে দেখা হয়। এবার এই মেয়ে মনির ভাইদের নিজ জেলার। এই মেয়ের বাপেরও ঢাকায় ৫ তলা বাড়ি। তো আমি যেহেতু নেটে বেশ এক্টিভ তাই মনির ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি যেসব মেয়ে দেখবেন তাদের ফেসবুকে একাউন্ট আছে নাকি এটা খুজে দেখা, থাকলে একাউন্টটা ঘাটাঘাটি করা—এসব আরকি। তো এ পর্যন্ত অনেক মেয়ের একাউন্টই আমি দেখেছি। এই মেয়ের একাউন্টও দেখার জন্য মনির ভাই আমাকে মেয়েটির নাম আর মেইল আইডি দেন।
--ভাই, একটা সমস্যা।
--কি?
--ভাই এই মেয়ের একাউন্টে দেখলাম রিলেসনসিপ স্ট্যাটাস দেয়া এঙ্গেজড। মেয়ের প্রোফাইল পুরা ওপেন, কোন প্রাইভেসি দেয়া নাই। অনেকগুলা এলবাম দেখলাম, সব মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছবিতে ভর্তি।
--তাই নাকি!
চিন্তিত হয়ে যান মনির ভাই। এই মেয়েটিকেও তার ভাল লেগেছে। দেখতে অনেক সুন্দর। তাছাড়া মেইন কথা তার বিয়ে করা দরকার। আর মাত্র ১মাস পরেই তিনি আমেরিকা চলে যাচ্ছেন।

পরেরদিন আবার দেখা মনির ভাইয়ের সাথে।
--আব্বা তো এসব বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না। আর তাছাড়া বিয়ের আগে এখন সবাই একটু-আকটু প্রেম করে। ফেসবুকে নিজেকে সেফ রাখার জন্যই এমন রিলেসনসিপ স্ট্যাটাস-এলবাম দেয় অনেক মেয়ে। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে কালকে। সে বলেছে ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ড নাকি ওর ছবি দিয়ে এমন ফেক একাউন্ট খুলেছে। ওদের মধ্য এখন আর রিলেসেন নেই। আর আমাদের জেলার মেয়েরা অনেক ভাল স্বভাবের। আমার কাছে কি সুন্দর করে সবকিছু স্বীকার করল!
আর কথা বাড়াই না আমি। ওরা সুখে থাকলেই আমি সুখি!

বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয় মনির ভাইয়ের। বিয়ের এক সপ্তাহ পর তারা হানিমুনে যায়। চাচা-চাচীরও মেয়ে পছন্দ হয়েছে। একটু মুডি হলেও মেয়ে খারাপ না। কারন সে তো আর বিএনসিসি না!!!

হানিমুন থেকে ফেরত আসার পর দেখলাম মনির ভাইয়ের মন খারাপ। কি হয়েছে জিজ্জেস করলে তিনি যা বলেন তার সারমর্ম হচ্ছে—তিনি চাচ্ছিলেন বাচ্চা নিতে। এতে ভাবীকে আমেরিকা তাড়াতাড়ি নিতে পারবেন। কিন্তু ভাবী কোনমতেই তাতে রাজী নন। এই নিয়ে তাদের মধ্য ঝগড়া হয়েছে।
--আসলে বুঝলি ও-ই ঠিক বলছে, আরে ওর পড়া তো এখনও শেষ হয় নাই। এখন এসব ঝামেলা নেয়া ঠিক না।
মনির ভাই আমাকে বোঝাচ্ছিলেন নাকি নিজের মনকেই বোঝাচ্ছিলেন জানিনা।

মনির ভাই বিয়ের ৩ সপ্তাহ পর চলে যান আমেরিকা। আমরা অশ্রুসজল নয়নে তাকে বিদায় জানাই। আমার বড় ভাই নেই, তাকে আমার বড় ভাইয়ের মতই দেখি আমি।

মনির ভাই যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরই উনি আমাকে ফোন দেন।
--এই শোন, তোর ভাবীর মোবাইল অফ কেন? আমাদের বাসার টিএন্ডটিও কেউ ধরছে না। তুই গিয়ে দেখতো।

আমি ছুটি ওনাদের বাসায়। ফিয়ে দেখি চাচা মুখ শক্ত করে বসে আছেন, চাচী কাদছেন। টিএন্ডটি বেজেই চলেছে।
--কি হয়েছে চাচা।
চাচা আমাকে এরপর যা শোনান এতে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই!
ভাবী বিয়েতে পাওয়া ৫ ভরি গয়না, ৪০ হাজার টাকা দামের দুটি বিয়ের শাড়ী, একটি আমেরিকা থেকে আনা আইফোন, ভাবীর হাতখরচের জন্য মনির ভাইয়ের দিয়ে যাওয়া ২০০ ডলার---এসবকিছু নিয়ে এবং একটি চিঠি রেখে দিয়ে ভাবী বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন!!!

চিঠিতে লিখা আছে যে ও ওর বেকার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করার জন্যই এই নাটকটুকু করেছিল। নতুন সংসার শুরুর জন্য ওদের টাকার দরকার ছিল। এজন্য আগের অনেক বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও আমেরিকা ফেরত মনির ভাইয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হন উনি শুধু টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই!!

কি বলব এমন মেয়েকে??? যে টাকার জন্য অন্য মানুষের সাথে শুতেও রাজি তাকে কি বলব???

এখন চাচা কাদেন, চাচি কাদেন আর মনির ভাই......উনি এখন সারাদিন কাজ করেন আর রাতে বারে সুরার নেশায় বুদ হয়ে থাকেন!!

-_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_-

এখন এই ঘটনাটি বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে ভাল-খারাপ সব জেলায়ই থাকে। ভাল-খারাপ মিলেই মানুষ। কিন্তু চারটি জেলার মানুষ খারাপ আর বাকি ৬০ জেলার মানুষ ফেরেস্তা—আমাদের দেশের মানুষের এই ধারনা ভুল। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যখন আমার গ্রামের বাড়ির কথা জেনে মানুষ আমার দিকে অন্য দৃস্টিতে তাকায় তখন ভীষন অসহায় মনে হয় নিজেকে!!!

আর আরেকটা কথা, খোজখবর না নিয়ে তাড়াহুড়ো বিয়ে করা উচিত নয়। বিয়ের আগে ছেলে/মেয়ে সম্পর্কে ভাল করে খোজখবর নিতে হবে। আমার মতে বিয়ের আগে কমপক্ষে ২-৩ মাস ছেলে-মেয়েকে একে অপরকে জেনে নেয়ার সময় দেয়া উচিত। যে দিনকাল পড়েছে...তাতে এসব ঘটনা এখন থেকে রেগুলারই ঘটবে। তাই সবধান থাকা ভাল............



পূর্বে আমার নিজস্ব ব্লগ এবং অন্য একটি ব্লগে প্রকাশিত
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নতুন পোস্ট দিতে চাচ্ছিলাম, এখন সেফ আছি, কবে না আবার জেনারেল হয়ে যাই!!
কিন্তু মাথায় কিচ্ছু আসছিল না, তাই পুরাতন গল্পই আবার শেয়ার করলাম। কেউ আগে পড়ে থাকলে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫০
৩০টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×