একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য তথ্য অধিকার আইন অত্যনত্দ জরম্নরি। বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আর এ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি আরটিভির এক নারী সাংবাদিক সরকারদলীয় এক এমপির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। 'শুধু একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় কামাল মজুমদার এভাবে একজন সংবাদকর্মীর গায়ে হাত তুলতে পারলেন। এমপি বলেই তিনি এ কাজটি করতে পেরেছেন। আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম সে মুহূর্তে তিনি আমার বুম হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আমার হাতেই মারে। কথাগুলো জানালেন আরটিভির রিপোর্টার অপর্ণা সিং। ৩ জানুয়ারি সকালে অতিরিক্ত ফি আদায়ের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আরটিভির প্রতিবেদক অপর্ণা সিংহসহ চার সংবাদকর্মী মনিপুর স্কুলে সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় আহত এক সাংবাদিক এবং মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপৰ মিরপুর থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি জিডি করে। রাজধানীর একটি আসন থেকে নির্বাচিত এ সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বলেন, 'আমার বিরম্নদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও সাজানো। আমি তাদের মারিনি। রাগের মাথায় শুধু হাত দিয়ে বুম ও ক্যামেরা সরিয়ে দিয়েছি।' তিনি আরো বলেন, বেসরকারি চ্যানেলটি তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমার ম্যানেজিং কমিটিকে সন্ত্রাসী বানিয়েছে। সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় কামাল আহমেদ মজুমদারের দৃষ্টানত্দমূলক শাসত্দির দাবিতে ৪ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে সরকারদলীয় এ সংসদ সদস্যের দৃষ্টানত্দমূলক শাসত্দি দাবি করা হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনায় শিৰা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদনত্দ কমিটির স্বচ্ছতা দাবি করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এর আগেও কামাল আহমেদ মজুমদার সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছেন। এমনকি তাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে। সংসদ সদস্যের এ ধরনের আচরণে প্রধানমন্ত্রীকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান গণমাধ্যমকর্মীরা। এখানে তথ্য-সন্ত্রাস করা হয়েছে উলেস্নখ করে কামাল মজুমদার_ ভিডিওতে দেখানো হয়েছে আমি হাত মুচড়ে মাইক্রোফোন ফেলে দিচ্ছি। তার আগেরটুকু দেখানো হয়নি। জোড়াতালি দেয়া হয়েছে। এদিকে কামাল আহমেদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তবু আপনারা যদি মনঃৰুণ্ন হন তাহলে আমি ৰমা চাইছি।' নিন্দা: মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারম্নজ্জামান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, মনিপুর স্কুলের দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা ও সাংবাদিকের ওপর হামলা করে সংসদ সদস্য গণতান্ত্রিক চর্চার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী আচরণ করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদের অবমাননা এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার নৈতিক যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। একজন পেশাজীবী নারীর প্রতি এমন অশোভন আচরণ অমার্জনীয় অপরাধ। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'আমরা মনে করি, এ ধরনের হামলা সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ৰতিগ্রসত্দ করবে।' এছাড়া সাংবিধানিক অধিকার ফোরাম, জিয়া সেনা, প্রগতিশীল শিল্প ও গণমাধ্যমকর্মী ফোরাম ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে,পাকিসত্দানের লাহোরে ২০০৯ সালে এশিয়ার নারী সাংবাদিকদের সংগঠন ঝঅডঘ ুএর প্রথম আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় যে, পেশাগত দায়িত্ব পালনে নারী সাংবাদিকদের বিপজ্জনক ঝুঁকি সম্পর্কে এ সম্মেলন সচেতন। ও সম্মেলনে দাবি করা হয় যে তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লৰ্যে দৰিণ এশিয়ার সরকারসমূহকে কার্যকর আইন ও বিধিমালা গ্রহণ করতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নারী গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সুরৰার ব্যবস্থা করতে হবে।' কিন্তু আমাদের দেশের প্রেৰাপটে নারী সাংবাদিকরা কি পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তাবোধ করছে?