পয়লা পার্ট
: ভেউ!
: (চইমকা উঠলাম) কে রে?
: কানে হেড ফোন দিয়া গান শুনতাছো, টাইম দেখছো কয়টা বাজে? এখনো রেস্টুরেন্ট খুলো নাই কেন?
: ওহো, ভুইলা গেছি। কখন যে ঘুমাই গেছিলাম মনে নাই। ঘরটা পরিস্কার করুম সেই সময়ও পাই নাই।
: ফালতু কথা রাখো, চাবি নিয়া দ্রুত আসো।
মাথাটা বিগড়াই গেছে কাম করতে করতে। রাইত ৪ টায় ঘুমাই, ১০ টার সময় উইঠা রেস্টুরেন্ট খুলো কাম করো, খানা বানাও রুটি বানাও ২ টায় বন্ধ কইরা রেস্ট লও আবার ৫ টা থিকা রাইত ১০ টা। জীবনটা তেচপাতা আছিলো অখন হইছে তামাক পাতার মতোন পুরাই ঝাঝড়া। কামে একটু দেরী হইলে মাইয়াটা কুইদা আহে। কই একটু ডেটিং করুম তানা, খালি এইটা হইলো কেন ঐটা হইলো কেন?
: সোফিটা কে?
: তুমি সোফির নাম জানলা কেমনে?
: আগে বলো সোফি কে?
: যখন পরথম এই ইউরোপে পাও রাখি তখন মাথা গুজনের জায়গা পাইতাছিলাম না। এক সুদানী ধইরা আমার উঠাইলো এক উগান্ডার ঘরে, সেইখান থিকা গেলাম এক ইন্ডিয়ানের ঘরে পরে ঐখান থিকা ঐ রাইতে চালান করলো একখান ফ্লাটে। কইছিলো ড্রইং রুমে বইসা থাকতে যখন ঐ ফ্লাটের লোক আইবো তখন তার লগে কথা কইতে হইবো। রাইত বারোটার সময় দেখি এক মাইয়া হাতে একখান মদের বোতল লইয়া দরজা নক করলো। দরজা খুলতেই কয় আমি কেটা? আমি জিগাইলাম তুমি কেটা? কইলো হেয় নাকি এই ফ্লাটে থাকে, আমি কইলাম তাইলে তুমি নক করলা কেন?...
: উফ, এতো সব কি প্যাচাল পারছো? এই গল্প কখন শেষ হবে?
: এইতো আর ১ মিনিট। তারপর হেয় কইলো হেয় নাকি চাবি পাইতাছে না। আমি কইলাম আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে, নিবা? হেয় অবাক হইয়া কইলো হেয় নাকি বমি করবো, আমি নিয়া গেলাম টয়লেটে, ঐখানে নিয়া যাইতেই দেখি কমোড রাইখা পুরা বাথটাব বমিতে ভাসাইলো। তখন মনে একটা কুশ্চেন জাগলো এই সাইজের মাইয়ার পেট থিকা পুরা বাথটাব ভর্তি করনের জিনিস বাইর হয় কেমনে?
: ডিসগাস্টিং....তুমি দেখি সিনেমার গল্প শুরু করলে!
: আরে শুনই না। তখন আমি তারে জিগাইলাম তুমার কি ফুড পয়জনিং হইছে? যেই না জিগাইছি অমনি আমারে জরাই ধইরা কান্না কাটি করন শুরু করলো। আমি বমির গন্ধে আর ওর কান্নার শব্দে মনে হইলো হায় খোদা ইলা আমি খিতা করতাম। পরে ঐ মাইয়া দেখি কানতে কানতে ঘুমাই গেলো। আমি তার পর হেরে কুনোমতে ধইরা ড্রইং রুমে এক সোফায় শোয়াই দেই। আর পাশের সোফায় শুইয়া পড়ি।
: তাহলে এই মেয়েটাই সোফি?
: আগে শুনই না। ওর নাম সোফি হইবো কেন? পরের দিন ভোর বেলা ঘুম থিকা উইঠাই আমারে উঠাই কয় তুমি কেটা? আমি কইলাম আমি কেটা? সে হাইসা দিলো। পরে কইলো ওর নাম ক্লডিয়া। ও আসছে নরওয়ে থিকা। ওরে আমি সব খুইলা কইলাম। ও ততক্ষনে ব্রেক ফাস্ট আনলো। ব্রেকফাস্টের গন্ধ দারুন, জিগাইলাম এইটা কি খাওয়াইতাছো? হেয় কইলো শুয়রের গোস্তের ভাজি আর ওয়াইন। আমি হা! সে কয় হা হইয়া আছো কেন?
: এইখানে সোফিটা কই?
: অখনও আসে নাই, আইতাছে, ধৈর্য্য ধরো আর ১ মিনিট।
: মানে? তুমি সেই ১ মিনিটের কথা বলে ১০ মিনিট ধরে খালি বকবকই করছো, কিন্তু এই সোফিটা কে তার জবাব দিলা না।
: আগে শুনই না, পুরা ঘটনা না শুনলে বেসিক ক্লিয়ার হইবো না। আমি তারে কইলাম আমার দাদার ভাষ্যমতে আমার ৭ পুরুষ ধইরা মুসলমান এর মধ্যে দুইজন হাজী ছিলেন। আমি অখনো হাজী না হইলেও সাচ্চা মুসলমান, যদিও এক কালে মাসলম্যান আছিলাম। সে শুইনাই হাইসা দিলো। পরে আমারে ১৫ মিনিট বসতে কইয়া ৩০ মিনিট পর আমার প্রিয় জিনিস নিয়া আইলো, দুইখান ডিম পোচ মাখনে মাখা দুইটা বনরুটি আর চেরী রসের ফান্টা। খাইয়া মনে হইছিলো বেহেশতী হুর আমারে বেহেশতী খাওন খাওয়াইলো। সে যখন আমার রুমে থাকনের লিগা পাবলিকের ফুটবল খেলার কথা শুনলো তারপরই চোখে টপটপ কইরা পানি পড়তে লাগলো। আমার নিয়া ফুটবল খেললো পাবলিকে তা দেইখা যেইখানে আমার আনন্দ সেইখানে তার চোখের পানি দেইখা মনে হইলো আমি কুন পাগলের কাছে আইছি!
: আচ্ছা, তোমার কি পেট ব্যাথা করে না? আমার কান ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
: আরে শুনই না। সে আমারে কইলো মাইয়া মানুষের রুমে থাকতে আমার কুনো অসুবিধা আছে কি না, কারন মুসলমানরা নাকি বেগানা আওরাতের সাথে থাকে না। আমার এই ব্যাপারে সমস্যা আছে নাকি? আমি খাইলাম টাস্কি, ভালো সাজতে গিয়া এমুন মুসিবতে পড়ুম, এমুন সুযোগ ঠ্যাং ছাড়া টুপি ছাড়া করুম এইডা কে জানতো?
: দেখো রনি, আমরা ডেটিং এ আসছি, তুমারে ঘন্টাব্যাপী প্যাক প্যাক শুনতে আসি নাই।
: প্যাক প্যাক মানে? তুমি একটা কুশ্চেন করলা সেইটার উত্তর না দিয়া আমি কেমনে ঠিক থাকি!
: তুমি একটা ওয়াইনের অর্ডার দাও। আমার মাথা ঘুরছে। আগে ওয়াইন খাবো তারপর কথা শুনবো তোমার।
: ওক্কে, অখনই ওয়াইন চইলা আসতাছে!
একটু পর ওয়াইনও খতম হইয়া গেলো মাগার আমার গল্প রুলটানা লাইন থিকা রেল লাইন।
: আমি কুনো মতে আমতা আমতা দিয়া কইলাম দেখো আমি মুসলাম হইলেও জান বাচানী ফরজ। তুমাগো ভাষা জানি না, ইংরেজি যা জানি তা শুনলে এই দেশের মানুষ আগে একখান খিচানি দেয়। ঠেকায় যখন পড়ছি তখন থাকতে রাজি। তখন সে বললো সে নাকি আমার ফিলিংস বুঝতে পারছে। যাই হোউক আমার খাওয়া দাওয়া শেষ হইনের পর আমি তারে কইলাম তাইলে অখন কুন ফ্লাটে যাইতে হইবো? সে অবাক হইয়া কইলো কুনো ফ্লাটে যাওনের দরকার নাই। তার পাশের রুমটাই নাকি সোফির। এই ফ্লাটের তিনটা রুম একটা ড্রইং। সোফি নাকি রাতে একখান ক্লাবে শো ছিলো একটু পরেই নাকি আসবে। ওর রুমটা বেশ বড়, দুটো খাট রাখবার মতো ব্যাবস্হা। আমি তো শুইনাই পাংখা। অমুন সময় দরজায় নক শুনলাম। ক্লডিয়া ফাল পাইরা কইলো,"সোফি আইসা গেছে!" আমি তো তখন মনের মধ্যে দোতারা বাজাইতাছি। সোফির লগে এক রুমে।
: কি? তুমি এইখানে এক মেয়ের সাথে এক রুমে থাকছো?
: আবারও ক্যাচাল! আগে পুরা শুনো! সোফি ঢুকতেই দেখি বব কাট চুল পুরাই সাদা সামনে লাল। অসাধারন দেখতে কিন্তু স্টাইল পুরা পাংকু আর ড্রেস খান দেখলে মাথাটা কেমুন ঝিম মারে। সে আমারে দেইখা কইলো ঐ ইন্ডিয়ান নাকি আগেই কইছে। ওমুন সময় ও পাশের রুমটা খুইলা কইলো,"এই রুমটা আমার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য ভাড়া নিছিলাম, কিন্তু রিসেন্টলি ব্রেক আপ হয়ে যায়। কিন্তু তিনমাসের ভাড়া এখন গুনতে হবে তার চেয়ে তুমি থাকো!" আমার মনের ভিতর যেই বান্দরখান নাচতাছিলো ওমনি সে ফুট্টুস হইয়া গেলো। এই হইলো সেই সোফি।কিন্তু অখন তুমি কও তুমি জানলা কেমনে?
: (৩ গ্লাসে পুরা টাল) কার কথা?
: ঐ যে সোফি?
: ও হে সোফি, ও ফোন করে তোমার নাম্বার চাইছিলো, আমি ওকে বলে দিয়েছি তোমার নাম্বার আমার কাছে নাই!
আমি তো মনে মনে হাসি। মিল্টুর বুদ্ধি কামে লাগছে। ঐটা আসলে সোফি আছিলো না। মিল্টু মামার ওয়ান অফ দ্যা কালেকশনস। কইলো ঐ খান থিকা হেল্প করতে! আয় আইজকা! ফোনটা পাওনের পরই আইজকার ডেটিংটা কনফার্ম হইলো।
সমস্যা একখান যখন মিল্টুরে ফোন দিলাম
: মামা, কওতো তুমার টার্গেট কি?
: টার্গেট বোলে তো?
: মানে তুমি কি বিয়া কইরা পাসপোর্ট লইবা নাকি খাইবা?
: কি যে কও মামু? এই দেশের পাসপোর্টের ওরল গে প্রতাড়না করুম, এত নীচু তো আমি না!
: তাইলে কি খাইবা?
: আস্তাগফিরুল্লাহ।
: তাইলে ওর পিছ ঘুরতাছস কে?
: জানি না।
: না জানলে বুদ্ধিও পাবি না, কারন তুই কি জন্য ওরে পটানির চেস্টা করতাছোস এইটা না জানলে তোরে হেল্পামু কেমনে?
: কথা ঠিক, তাইলে একদিন টাইম দে!
আসলেই বুঝতাছি না কি করুম এই মাইয়ারে লইয়া! মাইয়া মানুষ খুব খারাপ চীজ!
চলবো
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:০২