বর্ডারে কেন - কোথাও নির্দোষ মানুষকে খুন করা সমর্থন যোগ্য নয়। সেইটা বিএসএফ করুক বা RABর্ই করুক – অথবা পুলিশের কিলার গ্রুপ কোবরা বা চিতাই করুক। সকল মানুষের নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের অধিকার আছে আর সেইজন্যেই আছে আদালত।
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে যে হত্যাকাণ্ড চলছে - তা বন্ধ করার জন্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সদিচ্ছা থাকার পরও যেমন ভাবে বন্ধ করা হচ্ছে না - তেমনি র্যাাবের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থানে থাকার পরও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তা বন্ধ করতে পারছে না। বিষয়টা বুঝা যাচ্ছে অনেক জটিল – যার জন্যে একটা সমাধান চিন্তা করার দায়িত্ব দুই দেশের নীতিনির্ধারকদেরই।
সীমান্তে খুনের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সেই খুন যেমন ভাবে বন্ধ হওয়া দরকার - তেমনি দেশের ভিতরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর খুনও বন্ধ হওয়া দরকার।
কিন্তু অত্যন্ত অবাক করা বিষয় হলো - দেশের ভিতরের খুনের বিষয়ে আমাদের তরুণ সমাজ যতটা উদাসীন - ঠিক ততটা সোচ্চার বর্ডারে খুনের বিষয়ে। ঠিক তেমনি দেখি সৌদি আরবে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে যতটা হৈ চৈ – খুনিদের বাঁচানোর জন্যে যতটা মহান দায়িত্ব পালন করা হয় – দেশের জেলে প্রতি বছর ডজন ডজন মানুষের মৃত্যুদণ্ডের খবরও এরা রাখে না। আজ পর্যন্ত কয়েকটি নির্দিষ্ট ঘটনার (উদাহরণ লিমন) মিডিয়াতে হৈ চৈ ছাড়া RABএর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী (মানব-বন্ধন বা অনশন) হয়েছে শুনিনি। কিন্তু বর্ডারে খুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সাইবার ওয়ারের হৈ চৈ শুনছি। দেখলাম ভারতের অনেক ওয়েব সাইট আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের হ্যাকাররা।
শুরুতেই যেভাবে বলেছি - যে কোন খুনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করা যেমন কর্তব্য - তেমনি লক্ষ্য রাখা দরকার সেই প্রতিবাদ যেন মুল বিষয় থেকে সরে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি না করে বসে – যাতে এই ইস্যুর আড়ালে অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়িত না হয়ে যায়।
সব কিছু দেখেশুনে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি – এই ধরনের হ্যাকিং সমর্থন করা যায় না আর যে যে কারণে হ্যাকিং সমর্থন যোগ্য নয়, তা হলো -
১) হ্যাকিং হলো একটা সাইবার ক্রাইম - এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতির সন্মুখিন হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো হ্যাকিং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা হীনতা তৈরি করে – যা একটা সন্ত্রাস। ভারতের সরকারের একটা সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে কোন একটা নাম না জানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে - যে তার ওয়েব সাইটে হ্যাকিং এর পর হয়তো বাংলাদেশকেই ঘৃণা করা শুরু করবে।
২) হ্যাকারদের যেহেতু কোন সুস্পষ্ট সংগঠন নেই - তাদের নীতি আদর্শ বিষয়ে আমরা পরিষ্কার ধারনা করতে পারি না - সুতরাং অন্ধকারের বন্ধুদের সাথে হাত মিলানো একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ মনে করি।
৩) একটা অন্যায় দিয়ে আরেকটা অন্যায়ের প্রতিবাদ সমর্থন যোগ্য নয়। যা প্রকাশ্যে করা যায় না – তাইতো অপরাধ। সর্বহারা, বাংলা ভাই এরাওতো তাদের কর্মকাণ্ড গোপনে চালিয়েছে বলেই এরা সন্ত্রাসী।
৪) ভারত বিরোধী যে দলবল বাংলাদেশে আছে - এই সুযোগে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে ভারতীয়দের বাংলাদেশ বিরোধী বানানোর সুযোগ পাচ্ছে - যার খেসারত হয়তো একদিন বাংলাদেশকে দেশকে দিতে হবে।
৪) সাধারণের দাবীগুলো হ্যাকিং করে ভারতীয়দের বুঝানো চেয়ে বাংলাদেশের সরকারকে বুঝানো জরুরী ছিল। কিন্তু দেখছি যে হ্যাকাররা বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের দালাল বিবেচনায় রেখে যুদ্ধের কথা বলছে। এর মানে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেবে - এবং বলা হবে যেহেতু সরকার ভারতের দালাল - তাকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।
৫) ঘরে বসে নাম ধাম লুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের অনুপ্রবেশ করে যে কোন বানী সেখানে লেখা হোক না কেন - তা কোন ভাবেই মূলধারায় গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ মহান আদর্শ নিয়ে অনেকেই ধংসাত্বক কাজ করে (সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ বা নকশালবাদ) - কিন্তু সাধারণ জনগণ তা গ্রহণ করে না।
৬) সবচেয়ে বড় যে কারণে হ্যাকিং (সাইবার ওয়ার) সমর্থনযোগ্য নয় - তা হলো দশ বছরে ১০০০ মানুষ হত্যার কারণে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করলাম একটা দেশের বিরুদ্ধে আর মিত্র হিসাবে নিলাম নয় মাসে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যাকারী দেশের হ্যাকারদের - যারা ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা এবং ২ লক্ষ নারীকে অপমানিত করার জন্যে একবারও দুঃখিত হয়নি।
তাই হ্যাকিং বাদ দিয়ে যারা সত্যই মনে প্রাণে চান বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হউক - তারা একটা সার্বিক আন্দোলনে আসুন । প্রথম কাজ ছিল নিহতদের বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে জানা এবং তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার ভাবে বলা – শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমের উপর ভিত্তি করে কোন আন্দোলন হয় না – আন্দোলনের জন্যে চাই জন-সম্পৃক্ততা। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম কাজ হলো নিজেদের আদর্শ এবং অবস্থানের বিষয়ে জনগণকে একটা স্বচ্ছ ধারনা দেওয়া।
মুল কথা হলো - সেই আইয়ুব খান থেকে শুরু হওয়া ভারত বিরোধী জিগিরের ধারাবাহিকতাকে যদি আপনার আদর্শ মনে করেন - তাহলে আপনাকে সমর্থন দিতে শত বার ভাবতে হবে।
শেষ কথা হলো - বর্ডার হত্যাকাণ্ডের সমাধান আসবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে - তাই বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরী - এর বাইরে গিয়ে সাইবার যুদ্ধকে সোজা ভাষায় সন্ত্রাসবাদ হিসাবে চিহ্নিত করবে উভয় দেশের সরকার। সুতরাং যারা না ভেবে "ভারত বিদ্বেষী ভাবধারার" সাথে হাত মিলিয়েছে - তাদের আবার ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।