somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলাম কেন বাবা ?

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়লে আজও হাসি পায়। ছোট বেলা থেকেই একটা বদ অভ্যাস ছিল , কথায় কথায় রাগ করা। আম্মু অথবা বাবার উপর রাগ করে নিজেই নিজের কাপড় চোপড় , জুতা , দুধ-ফিডার এই সব গুছাতাম। আমাদের বাসায় একটা নারিকেল গাছ আছে , আমি রাগ করে সেই গাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম আর অপেক্ষা করতাম কখন সবাই আমাকে খুজতে আসবে। সবার জন্য অপেক্ষা বললে ভূল হবে শুধু বাবার জন্য অপেক্ষা করতাম কখন বাবা এসে আমার রাগ ভাঙ্গাবে,কখন এসে আমাকে ঘরে নিয়ে যাবে।

ছোট বেলায় আমরা দুই ভাই বোন অনেক মারামারি করতাম , এখনও করি কিন্তু আগের মত ততোটা না। আমার ছোট ভাইয়ের গালে অসংখ্য দাগ,দাগ গুলো আমারই নখের আঁচড়। আমরা যখন মারামারি করতাম তখন আম্মু এসে কার দোষ বেশি বা কম কিছুই শুনতো না , দুই ভাই বোনকে এক সাথে মারত। আমি বেশি মার খেতাম না কারন আমাকে ধমক দেয়ার সাথে সাথেই আমি কান্না শুরু করে দিতাম। কিন্তু আমার ছোট ভাইটা বেশি মার খেত কারন ও বকা বা মার দিলে কাঁদত না শক্ত হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকত। এই জন্য আম্মুর রাগ আরও বেড়ে যেত তাই আমার তুলনায় আমার ছোট ভাই বেশি মার খেত।

আমি MIRINDA খেতে খুব ভালবাসতাম।আমি যখন ছোট তখন আম্মুর সিনেমা দেখার অনেক শখ ছিল। ছোট ছিলাম তাই অপরিচিত জায়গায় গিয়েই কান্না জুড়ে দিতাম। আম্মু হল-এ এক ফিডার দুধ নিয়ে যেত সেইটা খাওয়া শেষ হলেই ফিডার ধুয়ে তার মধ্যে MIRINDA ভরে খাওয়াত। সেই থেকেই MIRINDA খাওয়ার নেশা হয়ে গিয়েছিল। বাবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রায়ই আমাকে লোভ দেখাতো আমাকে বাবা বলে ডাক তাহলে MIRINDA কিনে দিব। আমি এক বার বাবার দিকে তাকাতাম আর এক বার চাচ্চুর দিকে , তারপর বলতাম আমার কালো আব্বু পছন্দ না আমার সুন্দর আব্বুই পছন্দ। কিন্তু একবার ১০ টাকার লোভে চাচ্চুকে আব্বু ডেকেছিলাম , সেই কথা মনে পড়লে আজও হাসি পায়।

আমার বাবা ফর্সা , মা কালো আর আমি শ্যাম বর্ন। ছোট বেলায় আমার ফুপ্পি , মামা , চাচারা প্রায়ই আমাকে বলত তোমাকে ত ডাষ্টবিন থেকে তুলে এনেছি এইটা তোমার আম্মু না , দেখো তোমার সাথে কারও চেহারার কোন মিল নাই। তখন আমি অনেক কাঁদতাম সবাই আমার কান্না থামানোর অনেক চেষ্টা করত হয়তোবা কিছুক্ষন পড়ে আমার কান্না থেমেও যেত কিন্তু মনের মধ্যে প্রায়ই এই সন্দেহটা ঘুরপাক খেত সত্যিই মনে হয় আমি তাদের কিছু লাগি না। বিশেষ করে যখন আম্মু কোন কিছুর জন্য মারত বা বকা দিত তখন মনে হত আপন মেয়ে হলে কি এমন করত ? তাহলে মনে হয় আমাকে ডাষ্টবিন থেকেই তুলে এনেছে। অথচ ছোট বেলায় বাবা মার ভালবাসার গভীরতাটা বুঝতে পারতাম না , কিন্তু এখন বুঝি।

বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবা মার ভালবাসার ধরনটাও বদলে যায়। আদর করে কোলে তুলে নেওয়া , চুমু খাওয়া বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই আদর গুলোও বদলে যায়। বিশেষ করে বড় হতে থাকলে বাবা এবং মেয়ের মধ্যে অদৃশ্য একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ছোট বেলায় হাতে মেহেদি দিলে বাবা বাসায় আসার সাথে সাথে আমার হাতটা দেখাতাম , বাবা হাতটা তুলে চুমু খেতেন। খুব মিস করি সেই সব দিন গুলোকে। এ বছর আমার জন্মদিনে বাবা wish করে কপালে একটা চুমু খেল তখন আমি আমার চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারিনি। বাবা তখন বলছিল "ওরে বাবা আমার মেয়ে তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে"। তখন বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমি এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলাম কেন বাবা?আমি কেন তোমার সেই ছোট্ট পুলপুলি হয়ে সারা জীবন থাকতে পারব না? ছোট বেলায় কতগুলো আদরের ডাক ছিল আমার বুড়ি , পুলপুলি , ইমুমনি , ইমুসোনা। এই ডাকগুলোর মধ্যে পুলপুলি ডাকটা আমার সব চাইতে প্রিয় , কারন এক মাত্র বাবাই আমাকে এই নাম এ ডাকত। এখন আর এইসব নাম এ আমাকে কেউ ডাকে না খুব মিস করি সেই দিন গুলোকে তবে আম্মু মাঝে মাঝে বুড়ি বলে ডাকে তখন খুব ভাল লাগে। আমি বড় হতে চাই না , আবার আগের মত ছোট বয়সটাতে ফিরে যেতে চাই। আবার আগের মত বাবা মার ভালবাসা পেতে চাই।

ছোট্ট একটা লেখা লিখব এই ভেবে বসেছিলাম কিন্তু লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। তাই যারা ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
১০৪টি মন্তব্য ৯৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×