আগের পর্ব শব্দ কল্প দ্রুম -১
৬. ‘এফ’ ওয়ার্ড
ইংরেজিতে দুটি ‘এফ’ ওয়ার্ড ভীষণরকম জনপ্রিয়। একটু সাহস করে বলা যায় এই মূহুর্তে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় দু’টি শব্দ। দুটি’র শুরুতেই F, শেষে K আছে ও মাঝে C আছে। একটা হলো facebook, আরেকটা সমঝদার পাঠকেরা বুঝে গেছেন নিশ্চই।
তো সেই ‘এফ’ ওয়ার্ড এর উৎপত্তি নিয়েও অনেকরকম মিথ আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও রসালো মিথের উৎপত্তিস্থল গ্রেট ব্রিটেন।
প্রজাদের উপর ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের দাপট বহু পুরনো। সেসময় রাজার অনুমতি ছাড়া বিবাহিত দম্পতিও দৈহিক চাহিদা মেটাতে পারতো না। তাই তাদেরকে রাজার সম্মতি নিয়ে এ কাজ সম্মন্ন করতে হতো। এ ব্যবস্থাকে বলা হতো Fornication Under Consent of the King যা সংক্ষেপ করলে আমরা চার অক্ষরের ‘এফ’ ওয়ার্ড টি পাই।
প্রায় একইরকম আরো কতগুলো মিথ প্রচলিত আছে। কিন্তু এগুলো আসলে ভিত্তিহীন। কেননা ১৫শ বা ১৬শ শতাব্দির ওই সময়ে অ্যাক্রোনিম (acronym )-এর প্রচলন হয়নি। বরং তা বেশ নতুন, ২০শ শতাব্দির। শব্দটি অস্পৃশ্য হওয়ার এর ব্যবহার সীমিত ছিল শুধুমাত্র কথ্য রূপে। এর কোন লিখিত রূপ পাওয়া যায় না, তাই উৎপত্তি সম্পর্কেও সুস্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
তারপরও শব্দটির সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উৎস হল জার্মান ficken বা ডাচ fokken, যেগুলো প্রায় সমার্থক শব্দ।
৭. Mesmerize
জার্মানিতে জন্মানো চিকিৎসক ফ্রেডরিক আন্তোন মেজমার পড়াশুনা করেন অস্টিয়ার ভিয়েনাতে। ১৭৬৬ সালে তিনি তত্ব দেন কিছু মহাজাগতিক বা "কাল্পনিক বস্তু"র বিকিরণ প্রাণীজগতের সকল প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পরবর্তীতে তিনি এ তত্বে কিঞ্চিত পরিবর্তন আনেন এবং “কাল্পনিক বস্তু”-কে “ম্যাগনেটিজম বা চুম্বকত্ব” দ্বারা ব্যাখ্যা দেন। এই উপলব্দি থেকে তিনি চুম্বক দিয়ে বেশ কিছু রোগির চিকিৎসা শুরু করে দেন।
মেজমার এ উপসংহারে আসেন যে মানবদেহে Magnetic Fluid বা চুম্বকীয় তরল প্রবাহে বৈষম্য দেখা দিলেই সৃষ্টি হয় নানান রোগ বালাই। রোগির দেহে চুম্বক ছুঁইয়ে তরলের প্রবাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব, আর তাতেই সেরে উঠবে বালাই।
মেজমারের রোগিরা একে অপরের হাত ধরে বৃত্তাকারে বসে একটি বলয় তৈরি করত। ঘরের মৃদু আলোতে বাজতো উচ্চমার্গিয় সংগীত। মেজমার নিজ হাতে বা চুম্বক দিয়ে প্রত্যেককে ছুঁয়ে যেতেন। এছাড়া লোহাযুক্ত কাঠের তৈরি একটি বড় চাকতি “চুম্বকীয় তরল ভান্ডার” হিসেবে ব্যবহার করা হত। কথিত আছে মেজমারের এই চিকিৎসায় অনেক রোগি সুস্থ হয়ে ওঠে।
মেজমারের “চুম্বকীয় তরল ভান্ডার” চিকিৎসা
তিনি ১৭৭৮ সালে ফ্রান্সে যান। ছয় বছর পরে ধোঁকাবাজ আখ্যা দিয়ে তাকে ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত করা হয়। তিনি সুইজারল্যান্ড-এ পালিয়ে যান। কিন্তু তার এ চিকিৎসা পদ্ধতি mesmerism নামে পরিচিতি পায়। মূলত এখান থেকেই শুরু হয় hypnotism বা সম্মোহনবিদ্যা।
Mesmerize শব্দটি সম্মোহিত করা বা প্রবলভাবে আকর্ষণ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। Mesmeric অর্থ হলো সম্মোহনকর।
৮. Barbecue
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নেতৃত্বে স্প্যানিয়ার্ডরা যখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আসে তখন স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রথা তাদের কাছে ছিল অদ্ভুত। যেমন স্থানীয়দের তারা উঁচু মাচা তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা। তারা ভয়ংকর পশুদের থেকে বাঁচার জন্য উপর ঘুমাতো এরকম ঘরে থাকতো। প্রায় একই রকম একটি মাচা তৈরি করে তারা মাংস ঝলসানোর কাজও করতো। তাদের ভাষায় এর নাম ছিল barbacoa.
আদিবাসি ক্যারিবিয়ানদের barbacoa
Barbacoa-এর অনুকরণে স্প্যানিয়ার্ডরও মাংস ঝলসাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তাদের মাধ্যমে এ পদ্ধতি স্পেন ও অন্যান্য স্প্যানিশ কলোনিতে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে এটা উত্তর আমেরিকাতেও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এখানে নামটি সামান্য বিকৃত হয়ে barbecue বা Bar-B-Q তে রূপ নেয়।
৯. Labyrinth
Labyrinth অর্থ গোলকধাঁধা; জটিল ও বিভ্রান্তিকর পথ।
গ্রীক পূরাণে এরকম গোলকধাঁধার কারিগর ছিলেন ডেডলাস । রাজা মাইনোসের নির্দেশে তৈরি করা হয় এ গোলকধাঁধা। রাক্ষস মিনোটরের অত্যাচারে প্রজারা ছিল অতিষ্ঠ, তাই মিনোটরকে বন্দী করে এ গোলকধাঁধায় আটকে রাখা হয়।
ল্যাবিরিন্থ-এ আটক রাক্ষস মিনোটর
রাজা মাইনোসের কন্যা ছিল আরিয়াডনি। সে থিসিয়াসের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে। তারা দুজন ঊন-মানুষ ঊন-মহিষ মিনোটরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। থিসিয়াস গোলকধাঁধায় প্রবেশ করে রাক্ষসটিকে হত্যা করার জন্য। আরিয়াডনি তার স্বামী থিসিয়াসকে যাবার সময় সরু সুতায় বাঁধা একটি গোলক দিয়ে দেয়, যাতে করে ফিরতি পথে সুতা ধরে আসতে পারে। থিসিয়াস রাক্ষসটিকে হত্যা করে এবং আরিয়াডনিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এতে রাজা মাইনোস ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি গোলকধাঁধার কারিগর ডেডলাসকে সন্তানসহ বন্দী করেন। ডেডলাস গোলকধাঁধাটি এত জটিলভাবে তৈরি করেন যে তিনি নিজে সেটা সমাধান করে বের হতে ব্যর্থ হন। কথিত আছে, পরবর্তীতে তিনি মোমের ডানা তৈরি করে উড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
১০. Tantalize
গ্রীক পুরাণে ট্যানটালাস ছিল জিউসের পুত্র। ট্যানটালাস তার নরখাদক স্বভাব, শিশুহত্যা, মানুষ বলিদান ইত্যাদির জন্য কুখ্যাত ছিল।
জিউসের অন্য সন্তানদের মতো ট্যানটালাস অমর ছিল না। তাই অমরত্ব পাবার লোভে সে দেবতাদের অমৃত পানীয় ও খাবার চুরি করে। নিজের সন্তানকে বলি দিয়ে দেবতা জিউসের হাজির করে। এসব কারণে জিউস তার উপরে ভীষন ক্ষুন্ন হন এবং তাকে শাস্তির নির্দেশ দেন।
শাস্তিস্বরূপ ট্যানটালাসকে একটি ডোবার পানিতে অভুক্ত অবস্থায় রাখা হয়। যার উপরে সুস্বাদু ফলের গুচ্ছ, কিন্তু সে হাত বাড়িয়ে ধরতে গেলেই সেগুলো আরো উপরে উঠে যেত। পানি পান করার জন্য উবু হলেই পানি সরে যেত। এভাবে ফল ও পানীয়ের ব্যবস্থা থাকার পরও সেগুলো থেকে বঞ্চিত করে তাকে যন্তনাদায়ক শাস্তি দেয়া হয়, যা চলে অনন্তকাল।
ট্যানটালাসকে শাস্তি দেয়ার এই পদ্ধতিটি বেঁচে আছে tantalize শব্দটির মাধ্যমে। যার অর্থ কোন কিছুর লোভ দেখিয়ে নিরাশ করা, বা মূলা দেখানো!
(চলবে)
শিরোনাম: "শব্দ কল্প দ্রুম" নামে সুকুমার রায়ের একটি কবিতা আছে।
ছবি ও তথ্য সুত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য।