বৃষ্টির মধ্যে লাউয়াছড়ায় ট্রেকিং করে অবস্থা একদম কাহিল। যেদিক দিয়ে লাউয়াছড়া ঢুকে ছিলাম সেদিক দিয়ে বের না হয়ে ছড়া দিয়ে এগুতে এগুতে গিয়ে পড়লাম এক চা বাগানে। যাওয়ার পথে এমন কিছু দেখলাম যা মূহুর্তেই মন টা খারাপ করে দিল। একদল লোক ইচ্ছামত গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এইদিকে বন বলতে আর কিছু বাকী নেই। শুধু গাছের গূড়ি গুলো এখন তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। তারা কেন গাছ কাটছে জিঙ্গাসা করায় জবাব দিল, ফরেস্ট অফিস থেকে নাকি পারমিসান আছে। ছবি তুলতে যেতেই তারা বাধাঁ দিল। আমরা আর ঝামেলা না করে চা বাগানের ভিতর দিয়ে মেইন রোডে উঠে আসলাম। জীপ নিয়ে আবার শ্রীমঙ্গল। খাওয়া-দাওয়া করে রওনা দিলাম আরেকটি জঙ্গলে...নাম সাতছড়ি। সাত টা পানির ছড়া এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে তাই এর নাম সাতছড়ি। রওনা দিতে দিতেই আমাদের জীপের হালত খারাপ হয়ে গেল। মাঝ রাস্তা তেই সে মুখ থুবড়ে পড়ল।
মারো ঠ্যালা হেইয়ো...আরও জোরে হেইয়ো...
সাতছড়ি যাওয়ার রাস্তা টা অনেক সুন্দর। দুপাশে চা বাগান, রাস্তার অবস্থা ও অনেক ভালো। ইচ্ছা করলেই এখানে লং ড্রাইভে আসা যায়। ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টার রাস্তা। চারপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে চলে আসলাম সাতছড়ি। যথারীতি এবারো কোন গাইড না নিয়ে ঢুকে গেলাম বনে। এরই মধ্যে শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। বেশীক্ষন থাকতে পারলাম না বনে, আধা ঘন্টায় বে্র হয়ে গেলাম, কারন ক্যামেরা ভিজে যাচ্ছিল। জীপে ক্যামেরা, মানিব্যাগ রেখে ইচ্ছামত ভিজলাম বৃষ্টিতে।
সাত ছড়ার এক ছড়া
এইখানেও জোক
আহা!! কি আনন্দ
এখন আমাদের গন্তব্য মাধবপুর লেক। বিকেল থাকতে পৌছে গেলাম আমরা। চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা, amoeboid shape এর অতীব সুন্দর এক লেক। লেক টা অনেক বড়। পুরো লেক টার ছবি এক ফ্রেমে আসে না। অ্যামিবার মত চারিদিকে ছড়িয়ে আছে এই লেক। অনেকক্ষন সবাই মিলে সাঁতার কাটলাম। এই বারের ভ্রমনের এটাই ছিল সবচেয়ে আকর্ষনীয় বেপার। পাহাড়ে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। পাহাড়ের উপর থেকে লেক টাকে অপূর্ব লাগে।এর ফাঁকেই এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় চা বাগানের ফ্যাক্টরী টাও দেখে নিলাম।
মাধবপুর লেক
মাধবপুর লেকের প্যানোরেমিক ভিউ
চা বাগেনের জন্য নতুন পাহাড় তৈরী করা হচ্ছে
পরম শান্তি একেই বলে
মাধবপুর লেক
পাহাড় চূড়ায় আড্ডা
হুমম.। সুন্দর
সন্ধ্যা বেলা আমরা শ্রীমংগল ব্যাক করলাম। শ্রীমংগল থেকে ঢাকার ডাইরেক্ট বাস আছে, শ্যামলী পরিবহনের। রাতের মধ্যেই ঢাকায় পৌছে গেলাম। থুক্কু...পৌছে গেলাম বললে খুব ভুল হবে। রাত ৯টায় আমরা ছিলাম কাচঁপুরে, রাত ১০টা বাজেও ছিলাম কাচঁপুরে। জ্যামে বসে বসে ভাবতে লাগলাম...ধুর ধুর, ঢাকায় ফিরলাম কেন??? যত প্রশান্তি ছিল মনে এক ফুতকারে শেষ হয়ে গেল। এখন আবার বেড়িয়ে পড়তে হবে কোথাও...আর ভাল্লাগে না