এস এস সি পরীক্ষার আগে সম্ভবত প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে। পড়াশুনা করছি না। ইয়ার্কি-ফাজলামি করে সময় কাটাচ্ছি। হঠাৎ দেখি এ বিষয়ে আম্মা চিৎকার-চেঁচামেচি বাসা মাথায় করলেন। কিছু বুঝে উঠার আগে পড়াশুনা না করার দায়ে ঠাস ঠাস করে দু'গালে পড়ল দুই থাপ্পড়। হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার তখন সবে ধারনা হয়েছে যে মা-বাবার হাতে চড়-থাপ্পড় খাওয়ার বয়স মনে হয় পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু আন্দাজে ভুল ছিল। দু'ঘা খেয়ে মন মেজাজ খুবই খিঁচড়ে গিয়েছিল। যাই হোক ওটাই ছিল মায়ের হাতে খাওয়া সিরিয়াস রকমের থাপ্পড় শেষবারের মত। এরপরও অবশ্য ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় গোটা দু'য়েক চাটি খেয়েছি, তবে ওগুলো গোনার মধ্যে পড়ে না।
ছোটবেলা থেকে আমার স্বাসহ্য মাশাল্লাহ ভাল। মা জননী ডাক্তার হওয়ায় এ নিয়ে তার চিন্তা ও অভিযোগের অন্ত ছিল না। উঠতে-বসতে, খেতে-শুতে এ নিয়ে ব্যাপক লেকচার আমাকে শুনতে হয়েছে এবং এখনও হয়। বড়ই বিরক্তিকর বিষয়। ভাঙ্গা কলের গানের মত কানের কাছে রেকর্ড বেজে গেছে আজীবন "আর খাবি না", "খাওয়া কমা", "মোটা কমা" এই গানগুলো । বলাইবাহুল্য একটাও আমার প্রিয় গান ছিল না। মাঝে মাঝে আবার কোরাসে যোগ দিতেন পিতৃদেব। ওই দিন গুলোতে মনে হত জীবনে বেঁচে থেকে কোন ফায়দা নেই। শেষবার কবে আমার মা আমার পাতে খাবার তুলে দিয়েছেন মনে করতে পারি না। যাই হোক, এজন্য আমি তাদের দোষারোপ করি না।
তবে বেসিক কিছু শিক্ষা আমার মা আমাকে দিয়েছেন, যার জন্য আমি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এর মাঝে সবচেয়ে মূল্যবান ছিল যেকোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। তাছাড়া নিজের কাজ নিজে করার শিক্ষাটাও আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। চাকরিজীবি হওয়াতে আমাদের আর দশজন মায়ের মত সময় দিতে পারেন নি। এজন্য এখন রিটায়ার্ড জীবনে তার রয়েছে সীমাহীন আক্ষেপ। আমি ও আমার ভাইবোনরা অবশ্য মনে করি না যে চাকরিজীবি মা আমাদের কম সময় দিয়েছেন বা তার চাকরীর কারনে আমরা স্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। তবে মাঝে মাঝে এই মোক্ষম অস্ত্রটি ব্যবহার করে যেকিছু বিশেষ সুবিধা নেই না, এটা স্বীকার না করলে একটু অপরাধবোধ কাজ করবে।এই প্রবাস জীবনে আমি সবচেয়ে বেশি মিস করি আমার মাকে।