বৌদ্ধ দর্শন
ভারতীয় দর্শনগুলোর ভিতর গৌতম বুদ্ধ প্রণিত বৌদ্ধ দর্শন হলো নাস্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত দর্শন । দার্শনিক অর্থে আমরা যা বুঝি সেই অর্থে বুদ্ধদেব দার্শনিক ছিলেন না । তিনি ছিলেন নীতিতত্ত্বের সংস্কারক ও প্রচারক । দার্শনিক তত্ত্বালোচনা তাঁর উদ্দেশ্য ছিলনা বরং তিনি এর বিরোধীই ছিলেন । তাঁর যুক্তি ছিল এই তাত্ত্বিক প্রশ্নের চূরান্ত মীমাংশা কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় । তদুপরি এই সকল প্রশ্নের সমাধান করতে গেলে মতভেদের সৃষ্টি হয় । সুতরাং তাঁর মতে দার্শনিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা অনর্থক ও নিষ্ফল ।
এখন প্রশ্ন হলো বৌদ্ধগণ ঈশ্বরের বিষয়ে তাঁদের মত কিভাবে তুলে ধরেন । বৌদ্ধরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয় । তাই বৌদ্ধ দর্শনে ঈশ্বরের স্হান নেই । বৌদ্ধগণ বলেন প্রত্যেক কার্যরেই কারন আছে । কিন্তু পরিনতি কারন (final cause ) বলে কিছু নাই । সুতরাং পরিনতি কারন রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করবার কোন কারন নেই ।
নৈতিক অগ্রগতির জন্যও ঈশ্বরের সাহায্যের কারন নেই । অধিকিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস নৈতিকতার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করে । ঈশ্বর যদি সকল কিছুরই কারন হন তানি যদি সরবশক্তিমান হন এবং তাঁহার ইচ্ছায় যদি সকল কিছু ঘটে থাকে তবে মানুষর ইচ্ছার স্বাধীনতা (freedom of will ) কোথায় ? এবং মানুষ ধর্ম বা সৎ আচরনের ও চরিত্র গঠনের কোন প্রয়োজন অনুভব করবে না ।
গৌতম বুদ্ধ কর্ম নিয়ম কে সকলের উপরে স্হান দিয়েছেন । কর্ম নিয়মের সাহায্যে জগতে জীবের দুঃখ দুর্দশার ব্যাখা করা যায় , কর্মের ফলে জীবের জন্ম হয় । সুতরাং সৃষ্টিকর্তা রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই ।
বৌদ্ধগণ বলেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য যে সকল যুক্তি সাধারনত দেয়া হয় সেগুলি গ্রহনযোগ্য নয় । ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রমানের ভিতর একটি প্রমান হলো আদি কারন - বিষয়ক যুক্তি ( the cosmological or causal argument ) । এই যুক্তি অনুসারে জগতের একটি স্বয়ংসৃষ্ট আদি কারন ( first cause ) বা পরিনতি কারন (final cause ) আছে । কিন্তু প্রাাচীন বৌদ্ধগণ এই পরিনতি কারনে বিশ্বাস করেন না । তাঁদের মতে জগতের কারন জগতই । তা ছাড়া স্বয়ংসৃষ্ট পরিনতি কারনের ধারনা আত্মবিরোধপূর্ণ ।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে আর একটি প্রমান দেয়া হয় । এই প্রমানকে বলা হয় উদ্দেশ্যবাদ বিষয়ক যুক্তি । এই যুক্তি অনুসারে ঈশ্বর জগতের সৃষ্টিকর্তা । আমরা জানি ঈশ্বর পূর্ণ ( perfect ) এবং জগত অপূর্ণ । ঈশ্বর যদি পূর্ণ হন , তবে তিনি কেমন করে অপূর্ণ জগত সৃষ্টি করেন ? খেয়ালবশতও ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করতে পারেন না । কারন জগতে নিয়ম শৃঙ্খলা বিদ্যমান । খেয়ালবশত যে কাজ করা হয় তাতে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকেনা ।
গৌতমবুদ্ধকে তাঁর এক শিষ্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন , আপনি কী ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন ? গৌতমবুদ্ধের উত্তর , আমি কী কোথাও বলেছি আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি ।
এরপর সেই শিষ্যের প্রশ্ন , তাহলে আপনি কী ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন ?
আবারো গৌতমবুদ্ধের উত্তর , আমি কী কোথাও বলেছি আমি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করি ।
পরবর্তিতে বৌদ্ধ ধর্মের ভিতর দুভাগ হয়ে যায় একভাগকে বলা হয় হীনযান এবং অন্য ভাগকে মহাযান বলা হয় । উপমহাদেশে মহাযান অংশের বসবাস । মহাযানরা গৌতমবুদ্ধকে ঈশ্বর হিসেবে মনে করে থাকে অপরদিকে চীন জাপানে হীনযানদের বসতি । হীনযানপন্হীরা মনে করেন , নির্বান সবসময় ব্যক্তিগত , অর্থাৎ নিজের মুক্তিই কাম্য হওয়া উচিত । মুক্তিরপথ সবসময় একজনর জন্য মনে করেন বলে এই সম্প্রদায়কে হীন ( সংকীর্ন ) যান (পথ) বাদী বলা হয় । আর মহাযান সম্প্রদায় মুক্তিরপথ সবার জন্য বলে মনে করেন বলে তাঁরা মহাযান বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন ।
বৌদ্ধদের হীনযান সম্প্রদায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব একেবারেই স্বীকার করেননি কিন্তু মহাযান সম্প্রদায় বুদ্ধদেবকেই ঈশ্বরের আসনে বসান । তাঁদের মতে বুদ্ধদেবই পাপীতাপীর ত্রাণকর্তা ।সুতরাং দেখা যাচ্ছে মহাযানী মতে বুদ্ধদেব ঈশ্বরের স্হলাভিষিক্ত ।
চার্বাক দর্শন
জড়বাদী চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান এবং যাহা প্রত্যক্ষগোচর নয় তাহার অস্তিত্ব নাই । যেহেতু ঈশ্বর প্রত্যক্ষগোচর নয় , সেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় না । তাঁরা আরো বলেন , ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুত্ এই চার রকমের জড় উপাদানের স্বাভাবিক পরিনতিই হলো জগৎ , অর্থাৎ চতুর্ভূতের স্বাভাবিক মিশ্রণের ফলেই জগতের সৃষ্টি হয়েছে । তাই জগত স্রষ্টারুপী ঈশ্বরের অনুমান করার কোন প্রয়োজন নাই । তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি বাণী হলো -
ঋণ করে হলেও ঘি খাও , যতদিন বাঁচো সুখে বাঁচো । ( ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ , যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ )
জৈন দর্শন
জৈনগণও নিরীশ্বরবাদী । তাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন না । তাঁরা বলেন , কী প্রত্যক্ষ , কী অনুমান কোনটির সাহাজ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করা যায় না । জৈনমতে জগত সৃষ্টির নিমিত্ত কারন হইলো অদৃষ্ট - শক্তি এবং উপাদান কারন হলো পুদগল । তদুপরি , ঈশ্বরকে পূর্ণ বলা হয় । তিনি যদি পূর্ণ হন , তবে তাঁহার তো কোন অভাব থাকতে পারে না । আর অভাব যদি না থাকে , তিনি জগত সৃষ্টি করবেন কেন ? দয়া পরবশ হয়ে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন , এটা মনে করার কোন যুক্তি নাই , কারন তা যদি হয় , তবে জগতে এতো দুঃখ কেন ? তাই জৈন দার্শনিকরা বলে থাকেন , জগত স্রষ্টারুপে কোন ঈশ্বরের কল্পনা অযৌক্তিক । তবে জৈন দর্শনে সর্বজ্ঞাতা ( omniscience ) , সর্বশক্তিমত্তা ( omnipotence ) প্রভৃতি ঐশ্বরিক গুণে বিভূষিত তীর্থঙ্করগণ ঈশ্বরের স্হান অধিকার করেছেন ।
সাংখ্য দর্শন
সাংখ্যদর্শনকেও নিরীশ্বরবাদী দর্শন বলা হয় । সাংখ্যদার্শনিকেরা বলেন , ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমান করা যায় না । এমন কি জগত সৃষ্টির ব্যাখার জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকারের কোন প্রয়োজন হয় না । প্রকৃতিই জগতের কারন । প্রকৃতি হইতেই জগতের অভিব্যক্তি । যে কোন কারন নিজের পরিবর্তন ছাড়া কোন কার্যের উত্পাদন করতে পারে না । তাই ঈশ্বর অপরিবর্তনীয় বলিয়া তিনি জগতরুপ কার্যের কারন হতে পারেন না । তবে বিজ্ঞানভিক্ষু ও কোন কোন সাংখ্য ভাষ্যকার পরম পুরুষরুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন , যদিও এই মতবাদ খুব বেশি স্বীকৃতি পায় নাই । বিজ্ঞানভিক্ষুদের মতেও ঈশ্বর জগতের স্রষ্টা নহেন ,সাক্ষী বা দ্রষ্টা মাত্র ।
মীমাংশা দর্শন
মীমাংশা দর্শন জগত্ স্রষ্টরুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না । প্রাচীন মীমাংশকগণ ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন অনুভব করেন নাই এবং তাঁহাদের আলোচনায় ঈশ্বরের কোন উল্লেখ নাই । প্রভাকর এবং কুমারিল ও জগত্ স্রষ্টারুপে বা কর্মফল দাতারুপে বা পাপ পুণ্যের নিয়ামকরুপে বা বেদের রচয়িতারুপে কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন নাই । অধিকন্তু মীমাংশকেরা বলেন যে , ঈশ্বর যদি জগত্ স্রষ্টা হন , তবে তাঁহাকে পক্ষপাতিত্ব দোষে দুষ্ট বলিতে হয় , যেহেতু তিনি কাহাকেও সুখী এবং কাহাকেও দুঃখী করেছেন । কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্ব দোষ আছে একথাও স্বীকার করা যায় না । কেউ কেউ বলেন যে , মীমাংসা দর্শন যেহেতু বৈদিক দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করতে নির্দেশ দেয় , সেহেতু তাঁরা বহুদেবতায় বিশ্বাসী । অর্থাত্ মীমাংসা বহুঈশ্বরবাদী দর্শন , কিন্তু আসলে মীমাংসা বহু ঈশ্বরবাদী নয় , কারন যে সকল দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা হয় তাঁরা ব্যক্তি নন । মীমাংসকদের মতে যজ্ঞ বিধাতা কেবল গুনবাচক মন্ত্র । ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন মীমাংসকেরা কোনদিন করেন নাই । সুতরাং এটা স্বীকার করতে হয় যে মীমাংসা নিরীশ্বরবাদী ।
যোগ দর্শন
যোগদর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে । যোগদর্শনের মতে ঈশ্বর সর্ব দোষমুক্ত , ক্লেশমুক্ত , সর্বত্র বিরাজমান , সর্বজ্ঞ , নিত্য , অনাদি ও অনন্ত । ঈশ্বরের অস্তিত্বেয় পক্ষে তাঁরা কয়েকটি যুক্তি দিয়ে থাকেন । এগুলো হলো ,
১. যাহারই মাত্রা আছে তাহারই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন স্তরও আছে । আমাদের জ্ঞানেরও মাত্রা আছে । জ্ঞানের চরম মাত্রা হলো সর্বজ্ঞতা , এই সর্বজ্ঞতা যাঁর আছে তিনিই ঈশ্বর । সুতরাং ঈশ্বর আছেন ।
২. পুরুষ এবং প্রকৃতির সংযোগের ফলে জগতের অভিব্যক্তি এবং বিয়োগের ফলে জগতের বিনাশ হয় । কিন্তু পুরুষ এবং প্রকৃতি বিরুদ্ধ স্বভাবের । সংযোগ এবং বিয়োগ এদের স্বাভাবিক ধর্ম নয় । অতএব যে সর্বজ্ঞ , সর্বশক্তিমান ও পরিপূর্ণ পুরুষ এদের সংযোগ এবং বিয়োগ সাধন করেন , তিনিই ঈশ্বর ।
৩. বেদ , উপনিষদে ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে । যেহেতু এই শাস্ত্রগুলি অভ্রান্ত । তাই উক্ত যুক্তিতে ঈশ্বর আছেন ।
নৈয়ায়িক দর্শন
নৈয়ায়িকগণও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন । তাঁদের মতে ঈশ্বর জগতের স্রষ্টা , রক্ষক ও সংহারক । তিনি জগতের নিমিত্ত কারন , উপাদান কারন নন । ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুত্ এই চাররকমের পরমানু , দেশ , কাল , ব্যোম , আত্মা এই সবকিছুর সাহাযে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেন । ঈশ্বর জীবের পাপ পুণ্যের যথারীতি ফল ভোগের ব্যবস্হা করেন ।নৈয়ায়িকগণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রায় দশটি প্রমান দিয়েছেন । তার ভিতর চারটি প্রমান গুরুত্বপূর্ণ
১. কারন বিষয়ক যুক্তি - চন্দ্র , সূর্য , পর্বত , সমুদ্র ইত্যাদি সবই বিভিন্ন উপাদানের দারা সৃষ্ট । এই বস্তুগুলির উপাদান কারনগুলো নিজে নিজে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব নয় । একটি নিমিত্ত কারন প্রয়োজন । সেই নিমিত্ত কারন হলো ঈশ্বর ।
২. নৈতিক যুক্তি - মানুষের অদৃষ্ট হলো তার কর্মফলের ভান্ডারখানা । অদৃষ্ট এক অচেতন নিয়ম । তাই মানুষের কর্ম অনুসারে তার অদৃষ্টরুপ ভান্ডার হতে কর্মফলের ব্যবস্হা করবার জন্য একজন সচেতন নিয়ন্তার প্রয়োজন । সেই নিয়ন্তাই হলেন ঈশ্বর ।
৩. বেদের কর্তা রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব - বেদ অভ্রান্ত গ্রন্হ । মানুষ সম্পূর্ণরুপে অভ্রান্ত নয় বলেই মানুষ বেদের প্রণেতা হতে পারে না । সুতরাং বেদের কর্তারুপে অভ্রান্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয় ।
৪ . শ্রুতির যুক্তি – বেদ অভ্রন্ত , বেদে ঈশ্বরের অস্তিত্বের ঘোষণা করা হয়েছে , সুতরাং ঈশ্ব আছেন ।
বৈশেষিক দর্শন
বৈশেষিক দর্শনও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে । বৈশেষিকদের মতে জড় জগতের যাবতীয় যৌগিক বস্তু ক্ষিতি , অপ্ , তেজ ও মরুৎ পরানুর সংযোগে উৎপন্ন হয় এবং এই পরমানুগুলির বিযুক্তিতে বিনষ্ট হয় । পরমানুগুলোর চেতনা নাই বলে তারা নিজে নিজে সংযুক্ত বা বিযুক্ত হতে পারে না । সুতরাং কোন বুদ্ধমান চেতন সত্তা আছেন যিনি পরমানুগুলোকে সংযুক্ত বা বিযুক্ত করতে পারেন । বৈশেষিকগণের মতে সেই চেতন সত্তাই হলেন ঈশ্বর । বৈশেষিকগণ আরও বলেন , জীব যাতে তার কর্মফলজাত অদৃষ্ট অনুসারে পুণ্যের জন্য পুরষ্কার এবং পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করতে পারে এবং জীবাত্মা যাতে মুক্তিলাভ করতে পারে তার জন্য ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেন । বৈশেষিকদের মতে ঈশ্বর মানুষের অদৃষ্টকেও নিয়ন্ত্রিত করেন ।
উল্লেখ্য যে ভারতীয় দর্শনে আস্তিক এবং নাস্তিক যে দুটো ধারা গড়ে উঠেছে তা আমরা প্রচলিত অর্থে যা বুঝি সে অর্থে বুঝানো হয়না । ভারতীয় দর্শন মূলত বেদ কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । তাই এই দর্শনে যে সকল সম্প্রদায় বেদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং বেদের কথা সত্য বলে মানে তাঁরা আস্তিক আর যে সকল সম্প্রদায় বেদের প্রাধান্য স্বীকার করে না তারা নাস্তিক । অর্থাৎ ঈশ্বর বিশ্বাস করেন কিন্তু বেদে অবিশ্বাসী তিনি নাস্তিক । আবার ঈশ্বরে অবিশ্বাসী এবং বেদে বিশ্বাসী সেই সম্প্রদায় আস্তিক সম্প্রদায় ।
এখন দেখা যাক বেদে ঈশ্বর সম্পর্কে কী বলা হয়েছে
বেদ চার প্রকার – ঋক , যজুঃ , সাম ও অথর্ব । এর ভিতর ঋগ্ বেদই মূল বেদ । ঋগ্বেদের বিভিন্ন মন্ত্রে ইন্দ্র , অগ্নি , বরুণ বিভিন্ন বহুদেবতার স্তুতি করা হয়েছে এবং এই সকল দেবতাকে প্রাকৃতিক জগতের বিভিন্ন বস্তুর অধিকর্তা কল্পনা করা হয়েছে । ঋগ্বেদের বিভিন্ন মন্ত্রে বহুদেবতার স্তুতি করা হলেও বেদ সাধারন অর্থে বহুঈশ্বরবাদী ( Polythism ) নয় , যদিও কেও কেও মনে করেন । বিভিন্ন দেবতাকে একই সত্তার বিভিন্ন প্রকাশ – এই বর্ননা ঋগবেদের বিভিন্ন মন্ত্র পাওয়া যায় । যেমন –
“ একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি
অগ্নিং যমং মাতরিশ্বান মাহুঃ “
অর্থাৎ একই পরম তত্বকে বিপ্রগণ বা তত্বদর্শীরা অগ্নি , যম , মাতরিশ্বা ( বায়ু ) নামে অভিহিত করেন ।
এই সব দৃষ্টে ম্যাক্সমুলার বলেন , বৈদিক বহু দেবতাবাদকে বহু ঈশ্বরবাদ (Polythism ) না বলে একস্হ বহু ঈশ্বরবাদ ( Henothism ) ( অর্থাৎ এক পরমসত্তায় বহুদেবতার মিলন ) বলাই শ্রেয় । ঋগবেদে এমন কথাও বলা হইয়াছে যে , একই পরমসত্তা সমস্হ বিশ্বজগৎকে ধারন করে আছে । ঋগবেদের পুরুষ – সূক্ত হতে একটি মন্ত্র উল্লেখ করা যেতে পারে –
“ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ ।
স-ভূমিং সর্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ।। “
অর্থাৎ তাঁর সহস্র মস্তক , সহস্র নয়ন , সহস্র চয়ন , তিনি বিশ্বব্যাপি হয়েও বিশ্বতিরিক্ত
তথ্যসূত্র :
ভারতীয় দর্শন – অর্জুন বিকাশ চৌধুরী
ভারতীয় দর্শনের ইতিবৃত্ত – রমেন্দ্র নাথ ঘোষ
বৌদ্ধ দর্শন - ড আকতার আলী
ভারতীয় ধর্ম ও দর্শন - ড রশীদুল আলম