
আচ্ছা কেন আমিই শুধু ধরা খাই? গার্লফ্রেন্ড না থাকায় আমার বন্ধুরা সবাই আমাকে 'গাড়ল'ফ্রেন্ড ঠাউরাচ্ছিলো। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, আমি একটা ক্ষ্যাত ইত্যাদি! তো এবার আমি খুব সতর্কতার সাথে একজনকে কব্জা করছিলাম। এবং অবশেষে সে আমার সাথে দেখা করতে রাজী হল। মনে মনে খুব নার্ভাস থাকলেও আমি ড্যামস্মার্ট একটা ভাব নিয়ে বাসে চড়লাম ধানমন্ডি লেকের উদ্দেশ্যে। লোকালবাসে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে শার্টের ভাঁজ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকলেও সিএনজি নেবার সাহস হয় নি। তাহলে ফুচকা খাওয়ানোর পরে সফটড্রিংকস না খাইয়ে শুকনা গলায় বসে থাকতে হত। কপাল খারাপ, বাপজানের পকেট মারতে পারি নি। আমাকে দিয়ে আসলেই কিচ্ছু হবে না!
বাস আসাদগেট পার হবার পরে দুপুরে ভক্ষণকৃত শোলমাছ আমার পেটের অম্ল দ্বারা জর্জরিত হয়ে ঘাঁই দিতে লাগলো। সে বের হতে চায়। একেবারে সেরকম মোচড়! যাকে বলে দস্তুরমত এক পরিস্থিতি! পরীর সাথে দেখা করবার আগে পেটটাকে স্থিতি দেয়া অতীব দরকার। সে নিশ্চয়ই ওরকম মোচড়ামুচড়ি পছন্দ করবে না! রাপা প্লাজা পর্যন্ত কোনভাবে সামলে রাখলাম নিজেকে। কিন্তু শুক্রাবাদের কাছে এসে আর সামলাতে পারলাম না। বাস থেকে নেমে পড়লাম। কোন একটা হোটেলে গিয়ে টয়লেট সেরে মেন্যু দেখে দাম বেশি এই অজুহাত দেখিয়ে বের হয়ে আসবো এই ছিলো আমার প্ল্যান।
সামনেই যে হোটেলটা দেখলাম সেটা হল, "হোটেলে এ্যারাম ইন্টারন্যাশনাল"। হে এ্যারাম! তুমি আমার পৈটিক আরামের বন্দোবস্ত কর, মনে মনে প্রার্থনা করে ঢুকে গেলাম। সোজা টয়লেটে। হোটেলটার পরিবেশ এবং মেসিয়ারদের আচরণ যেন কীরকম ঠেকছিলো! মানুষজন উচ্চস্বরে কথা বলছিলো, একজনকে দেখলাম একটা গ্লাস হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফোনে নিজের দূরবস্থার কথা বর্ণনা করছে কাউকে। হোটেলটা মনে হয় সুবিধার না। এ কেমন হোটেল যেখানকার খাদ্য কন্দ্রনউদ্রেককারী? আমার কাজ শেষে বেয়ারাদের প্ররোচনা এড়িয়ে সোজা বের হয়ে এসে মেট্রোলিংকে উঠে ঝুললাম। হ্যাঁ, বসার জায়গা ছিলো না বলে ঝুলতেই হয়েছিলো!
যযথাসময়ে যথাস্থানে পরীর সাথে দেখা হল। একটা কথা প্রচলিত আছে " You are not as beautiful as your fb profile, but you are not as ugly as your national ID card". পরীর ক্ষেত্রে কথাটি সর্বৈব মিথ্যা প্রমাণিত হল। সে তার ফেসবুক প্রোফাইলের মতই সুন্দর।
কুশলাদি বিনিময়ের পরে আমরা লেকের পাড়ে একটা অতি রোমান্টিক জায়গায় গিয়ে বসলাম। তাকে খুব প্রেমময় এবং জ্ঞানগর্ভ কথা বলার জন্যে মাথার ভেতরের কোষগুলিকে ঝাড়ু দিচ্ছি রীতিমত। সেরকম কিছু একটা বলতে গিয়ে আমি আবিস্কার করলাম আমার মুখ নিঃসৃত কথাগুলি এরকম,
-খুব চমৎকার জায়গা তাই না? সুগভীর এবং বিস্তৃত জলাশয়ে মাছেরা সাঁতড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যাবাতি তার প্রাকৃতিক আলোয় সৌন্দর্য বহুগুন বিবর্ধিত করছে। আসলে পেট ক্লিয়ার থাকলে সবই ভালো লাগে।
শেষকথাগুলো বলেই বুঝলাম যে আমি আবার ধরা খেতে যাচ্ছি। সুন্দরী মেয়েরা পেটের পীড়া নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করে না। তাই সে অস্ফুট অবজ্ঞার স্বরে বলে উঠলো
-ওহ!
আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, এবার সেটা সতর্কতার সাথে সংশোধন করতে হবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম,
-না, এখন আর কোন সমস্যা নেই। দুপুরে অতিভোজন হয়ে যাওয়াতে একটু রগড়াচ্ছিলো আর কী পেটটা! এখন ঠিক আছে সব।
-তাই?
তার প্রতিক্রিয়ায় এমন কিছু ছিলো, যা কেবল অংকে তেরো পাওয়া শিক্ষার্থী কিছু নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে পাশ করে দেয়ার আবদার নিয়ে এলে কড়া এবং নিয়মনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের চোখেই শুধু দেখা যায়।
তবে এতে আমি ঘাবড়ে যাই নি। তিন মিলিসেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে জানালাম কীভাবে আমি হোটেল এ্যারামে গিয়ে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলাম।
-আচ্ছা!
কিছুক্ষণ নীরবতার পর সে বোমা ফাটালো।
-তুমি একটা বদমাশ! তোমার পেটে পেটে এত এ্যালকোহল! মদ খেয়ে এসেছো আমার সাথে দেখা করতে! তোমার অসংলগ্ন আচরণ আর মুখ থেকে নিঃসৃত বিশ্রী গন্ধ পেয়ে আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম। ছিঃ! আসলে ছেলেরা সবাই এরকম। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না, কাউকে না!
সে হিল খটখটিয়ে কান্নার অভিনয় করে চলে গেলো।
তখন আমি বুঝতে পারলাম হোটেলটার অদ্ভুত পরিবেশের রহস্য। ওটা ছিলো একটা বার। সোজা বাংলায়, শুঁড়িখানা।
ভগ্নহৃদয়ে বাসায় ফিরে এসে দেখি যে সবার মুখ গম্ভীর। এখানে আবার কী হল!বাবা মৃদু গর্জন করে আমাকে ডাকলো,
-এদিকে এসো!
-জ্বী!
আমি প্রভুভক্ত কুকুরের মত কুইকুই করে গেলাম তার কাছে।
-আমার এক কলিগ আজ তোমাকে দেখেছে এ্যারাম বারে ঢুকতে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব ধরেছো? তাইতো বলি দুইদিন পরপর কীজন্যে এত টাকা চাও! আমাদের মানসম্মান তো আর রাখলে না তুমি।
এখন আমি যদি তাকে প্রকৃত ঘটনাটা বলি, সে কী বিশ্বাস করবে? আপনারাই বলেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯