এই পোস্টে আমি একজন লোকের পারিপার্শ্বিক কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে দেশের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম, যেখানে অনেক মহৎ বিষয়কে রাজনীতির নোংরা স্বার্থে কলংকিত করা হয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলায় ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আসা প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা খুবই কম। হাতে গোনা ১৫-২০জন হবে। তারা এসে স্থানীয় ভাবে তরুন যুবকদের প্রশিক্ষন দেন। এদের মধ্যে একজন হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার খান সিমু। ব্যক্তিগত পরিচয় দিতে গেলে তিনি ২ নং সেক্টর কমান্ডার বর্তমান চাঁদপুর ৫ আসনের সাংসদ মেজর(অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম এর মামা। তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন কোন এক সময়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষন(সর্বকনিষ্ঠজন ব্যতীত) নিয়ে আসার পর ছবিটি তোলা। ছবির ডানদিক থেকে; প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল সামাদ (যিনি বিএনপির এমপি মেজর অবঃ কামরুল ইসলামের বড় ভাই), এরপর অস্ত্রহাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রাজ্জাকুল হায়দার খান সিমু(জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত সহকারী কমান্ডার), তারপর দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বর্তমান চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও সবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান। উল্লেখ্য যে দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যটি ছাড়া আর সবাই তৎকালিন সময়ে বি.এ পাশ করা বা সমমানে অধ্যয়নরত ছিল। সর্বকনিষ্ঠ সদস্যটি শুধুমাত্র প্রান বাচানোর জন্য উক্ত দলের সাথে থাকতেন,তাছাড়া তিনি উপরোক্ত তিনজনের আত্বীয়ও বটে। প্রশিক্ষন ছাড়া ও ফ্রন্টে সরাসরি কখনো যুদ্ধ না করলেও বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পড়াশুনায় উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি না পেরুলেও তিনি এখন চাঁদপুরের প্রায় সকল অনুষ্ঠানের প্রধান বা বিশেষ অতিথির পদ অলংকৃত করেন । নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!!!! তবুও কষ্ট থাকত না যদি তিনি শুধু এতে ক্ষান্ত থাকতেন। টেন্ডারবাজি, ভর্তিবানিজ্য সহ হেন কোন অপকর্ম নেই যা থেকে তার ভাগ আসে না।
এবার আসি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রাজ্জাকুল হায়দার খান (সিমু চেয়ারম্যান) এর আরেকটি জনহিতকর কাজের প্রসংগে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যিনি একজন সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এসময় প্রচুর সামাজিক জনকল্যানমূলক কাজের পাশাপাশি তার সবচেয়ে বড় অবদান হল তার ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯ নং বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ফরক্কাবাদ বাজারে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ফরক্কাবাদ ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৮ সালে বলতে গেলে সম্পূর্ন একক প্রতিষ্ঠায় তিনি এ কলেজ প্রতিষ্ঠা ও কয়েক বছরের মধ্যেই তার ভাগ্নে মেজর(অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম এর সর্বাত্বক সহায়তায় এম.পি.ও ভূক্ত করে যান। কিন্তু বিধাতার কি নির্মম পরিহাস বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রাজ্জাকুল হায়দার খান (সিমু চেয়ারম্যান) ২০১১ সালে মৃত্যুবরন করার ঠিক এক বছর পরই তার এলাকার সন্তান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজিত রায় নন্দী নিজেকে উক্ত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ঘোষনা করে বহাল তবিয়তে কলেজ পরিচালনা করছেন।
বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অন্যায়ের এমন হাজারো দৃষ্টান্ত।
সত্যি সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই দেশ!!
.............................. (পাঠকদের ভালো লাগলে চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৯