somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপেক্ষিক বিশ্বাস ও সংখ্যালঘু নির্যাতন। আড়ালে হাসে কোন পিশাচ??

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপজেলা চেয়ারম্যান খলিল মিয়া কাল সারারাত ঘুমাতে পারেন নাই। কারন কিছুই না সড়ক বিভাগ থেকে চিঠি পেয়েছেন তার গ্রামের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা হবে। অবশ্যই সুংসবাদ। কারন পাকা রাস্তা যাওয়ার কারনে জমির দাম ২০গুন বাড়বে। কিন্তু এই দাম বাড়ায় খলিল মিয়ার লাভ নেই কারন তার জমিগুলো সব প্রস্তাবিত রাস্তা থেকে অনেক দূর। গ্রামের হিন্দু পল্লীর বাসার সামনে দিয়ে যাবে ওই রাস্তা। শালার রাস্তা বানানো নিয়ে তদবির করলো সে আর লাভের গুড় খাবে ওই মালাউনের বাচ্ছারা। সারারাত সে চিন্তা ভাবনা করলো কিভাবে ওই রাস্তার পাশের হিন্দুদের কিছু জমি দখল করা যায়। রেজিস্ট্রি অফিসেও যোগাযোগ করলো কিন্তু এই জমিগুলার দলিল জাল করে লাভ নেই। এই গ্রামের মূল মালিক এক-সময় এই হিন্দুরাই ছিল।

২০ বছরের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ খলিল মিয়া এত সহজে চুপ হয়ে থাকার ব্যক্তি না। এমনি এমনি উনি উপজেলা চেয়ারম্যান হননি। সামনে রমজান মাস, খলিল মিয়া জানে যা করার এই রমজান মাসেই করতে হবে। তার পোষা ৪টি ছেলে দিয়ে খলিল মিয়া রমজানের প্রথম ১০ দিন গ্রামে প্রচার করতে লাগলো হিন্দুরা মাগরিবের নামাযের সময় ইচ্ছা করে উলুধ্বনি দেয় যাতে মুসলমানদের সমস্যা হয়। ১০০ বার বল্লে একটা মিথ্যা যে সত্য হয়ে যায় এটা খলিল সাহেব ভালো করেই জানে। এই মিথ্যা রটনার পর গ্রামবাসীর চাপে হিন্দুরা মাগরিবের সময় উলুধ্বনি দেওয়া বন্ধ করে দিল। মাগরিবের একটু পরে তারা উলুধ্বনি দিলেও এই ঘটনার কারনে এতদিনের সম্প্রীতিতে একটু হলেও ফাটল ধরলো।

২৭ রমজান রাতে তারাবির নামাযের পর হটাৎ এক ছেলে দৌড়ে গ্রামের মসজিদে হাজির। সে নাকি একটু আগে হিন্দু পাড়ায় এক ঘরে কোরান-শরীফ পোড়াতে দেখেছে। এই ছেলেকে গ্রামবাসী পূর্বে কখনও না দেখলেও এত ভয়ানক খবর শুনে সবার রক্তে আগুন জ্বলে উঠলো। মসজিদ ভর্তি মানুষ এত রাতেই রওনা দিলো হিন্দু পাড়ায়।

হিন্দু পাড়ার কর্তাও এই ভয়ানক খবর শুনে অবাক হলেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতা এখন তার কথা শুনে শান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। শুরু হলো ঘরে ঘরে খুজাখুজি। এক বুড়োবুড়ির রান্নাঘরের মাচায় পাওয়া গেলো পোড়া কোরআন-শরীফের পাতা। উত্তেজিত জনতা আর চুপ থাকতে পারলো না। রাগের মাথায় কেউ এ কথা চিন্তা করলো না যে এখানে এই পোড়া পাতাগুলো যে কেউ রাখতে পারে। কিছু শিক্ষিতলোকের কাছে ব্যাপারটি গোজামিল ঠেকলেও তখন তাদের কিছুই করার নেই।

ভিড়ভর্তি মানুষের ভিতর থেকে একজন আওয়াজ দিলো আগুন লাগিয়ে দেন। আরেকজন বলছে বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলুন। ২ মিনিটের মাথায় কোরোসিনও হাজির। শুরু হয়ে গেলো আগুন দেওয়া ও ভাংচুর। সারারাত লুটপাট ভাংচুর চল্লো পুরো হিন্দু পাড়ায়। রাগে উন্মক্ত মানুষ এখন আর মানুষ নেই, পাগলা কুকুর হয়ে গিয়েছে। এই জনস্রোতের নেতৃত্ত্ব দিচ্ছে চেয়ারম্যান খলিল মিয়া। তার ভাড়া করা ২০ জনই যত আগুন দিয়েছে। খলিল মিয়া অবাক হয়ে একটি ব্যাপার খেয়াল করলো গ্রামের নিম্নবিত্তরা ভাংচুরের চেয়ে হিন্দুদের জিনিসপত্র লুটপাটে বেশি ব্যস্ত।

৭ ঘন্টার ধ্বংসজজ্ঞ শেষে হিন্দু পাড়াকে আর চেনা যাচ্ছে না। ৮০ বছরের বৃদ্ধ অতীশ সেনের ৭১ সালের কথা মনে পড়ে গেলো। পাক সেনারা এভাবেই আরো একবার এই গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। সেবার হিন্দু-মুসলমান একি সাথে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙ্গিয়ে ছিল কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। গ্রামের কিছু লোক সাহায্য নিয়ে আসতে চাইলেও চেয়ারম্যানের ভাড়াটে গুন্ডারা এখনও এলাকায় ঘুরাফিরা করছে।

ভোররাতে খলিল চেয়ারম্যান একা একাই হাসে। তার পরিকল্পনা এরকম নির্ভূল কাজ করবে সে বুঝতে পারেনি। আগুন দেওয়া ও গ্রামে হিন্দুদের বিরুদ্ধে উসকানী দেওয়া সব ছেলেগুলোকে সে মধ্য রাতেই ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় পত্রিকাতেও তার রেডি করা খবর গিয়েছে। পুরো ব্যাপারটাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাতও খুব সুন্দরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ নিজে বাদি হয়ে অজ্ঞাত ২০০ জনের নামে মামলা করেছে যদিও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার শূন্য। খলিল চেয়ারম্যান জানে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে না। কম বুদ্ধি নিয়ে সে চেয়ারম্যান হয়নি। তার লিংক অনেক জায়গায়। সে জানে কমপক্ষে ১০ টি পরিবার তার প্রস্তাবিত মূল্যে জমি বিক্রি করে ইন্ডিয়া চলে যাবে ১ মাসের মধ্যে।

নির্দিষ্ট একটি গ্রুপের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ঘটিত এ ঘৃনিত কাজে ধর্মীয় মোড়ক দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, সুকৌশলে অপরাধের দায়ভার একটি ধর্মীয় গোত্রের উপর দিয়ে এভাবেই খলিল চেয়ারম্যানরা সমাজসেবী হন, গরীবের বন্ধু হন। হয়তোবা একদিন উপজেলার শান্তি রক্ষার জন্য এই খলিল চেয়ারম্যানরা পুরস্কৃতও হবে। তার কাজে অবচেতনভাবে সহায়তাকারী অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-কুশিক্ষিতরা হয়তো তাকে সংবর্ধনাও দিবে।

তবে এ ঘৃনিত কাজে ধর্মের মত পবিত্র বিষয়কে জড়ানো ও অসহায় সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক নির্য়াতনের জন্য সৃষ্টিকর্তা তাকেও একদিন শাস্তি দিবেন।

আমার এ লেখাটি সকল নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের কে উৎসর্গ করলাম, ঘৃনা জানাই সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনে সহায়তাকারী সকলের প্রতি। দাবি জানাই সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের।



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:১২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×