সাবিনা ইয়াসমিন এর কণ্ঠে শুনেছিলাম....'জন্ম আমার ধন্য হল মা গো'....মুগ্ধ হয়ে এখনো শুনি...বার বার শুনব...!কারন আমি সত্যি মনে করি যে এ দেশে জন্ম নিয়ে আমার জীবন ধন্য।হয়তো অনেক কিছুই পাইনি।কিন্তু যতটুকুই পেয়েছি সেই ঋণ কোনদিনও শোধ হবার নয়।আমি জানি যে আমার মত অনেকই ভাবে...এ দেশ তাদের সব কিছু,তাদের জীবন মরন।কিন্তু একথাও সত্য যে অনেকেই ভাবে...এ দেশে জন্ম নিয়ে তাদের জীবন বৃথা... তারা বলে যে এ দেশে জন্ম নিয়ে তারা ‘পাপ’ করেছে!
আমি খুব অবাক হয়ে ভাবি তারা কিভাবে এই কথা বলতে পারে।আমার এক বন্ধু(!)সেদিন আমাকে হঠাৎ বলল যে এ দেশে জন্ম নিয়ে যে পাপ করেছি,সেই পাপ থেকে খুব শীঘ্র মুক্তি পাচ্ছি!কিভাবে?সে এ দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাচ্ছে।এ কথাটি শুনে আমার এতো খারাপ লাগল যে আমার ইচ্ছে করছিল ওর উপর ঝাঁপিয়ে পরি।কিন্তু আমার চাইলেই সব কিছু করতে পারি না...কারণ আমাদের সবসময় ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকতে হয়!
আমি ওকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম।আমি বলেছিলাম... আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।আমার বাবা মা আমকে হয়ত ততটুকু চাকচিক্য পূর্ণ জীবন দিতে পারেনি...উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যতটুকু পায়। তাই বলে কি আমি কখনো বলবো যে আমার পরিবার আমাকে এসব দিতে পারেনি বলে এই পরিবারে জন্ম নিয়ে আমি ‘পাপী’?
ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে এসব কথা শুনে আমি কেন এতো ব্যাকুল হচ্ছি।আমি বলেছিলাম...তুমি যদি তোমার মা কে আজ বল...মা তোমার গর্ভে জন্ম নিয়ে আমি পাপ করেছি...আমি পাপী... তোমার মা কি সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবে? আমি ব্যাকুল হচ্ছি কারণ আমার দেশ আমার মা তোমার কথা শুনে এমনি কষ্ট পাচ্ছে। আমার কথা শুনে ওর মাঝে হাসির ফোয়ারা ছুটছিল...বিদ্রুপের হাসি।কিন্তু এ বিদ্রূপ তো শুধু আমার প্রতি নয়... এ বিদ্রূপ আমার মা এর প্রতি... আমার দেশের প্রতি।আমি কি করে এই যাতনা সহ্য করতে পারি?
আমি পারিনি... সহ্য করতে এ অপমান....আমার মা এর প্রতি এই লাঞ্ছনা।আমার সামর্থ্যর সবটুকু দিয়ে লড়েছি....সত্যিকারের যুদ্ধে হয়তো অংশগ্রহণ করতে পারিনি...কিন্তু খুব সামান্য হলেও বুঝতে পেরেছি....মুক্তিযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের মাঝে কত বেশি আবেগ কত বেশি দেশপ্রেম কাজ করেছিল।তাই.....‘সালাম সালাম হাজার সালাম হাজার শহীদ স্মরণে’।
হয়তো যারা আমার সেই বন্ধুটির মত মহৎ(!) চিন্তার অধিকারী তারা বলবেন সমস্যায় জর্জরিত এই দেশটির জন্য একজন মানুষের একার পক্ষে কতটুকুই বা করা সম্ভব!মহাসমুদ্রের কাছে তা কিছুই না।আমি তাদের বলব.... রবি ঠাকুরের সেই কবিতা ‘ছোট ছোট বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল....গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’।
হ্যা....অনেকেই বলবেন যে আমি শুধু বড়বড় কথা বলছি কাজের কাজ কতটুকু করি।তাদের কে বলব অন্তত আমার দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছেটুকু তো আছে।আর অনেকেই তো তাদের সবটুকু দিয়ে দেশের জন্য করছে।তবে আমি কিংবা আপনি করতে আপত্তি কোথায়?
আমি যখন সেই ‘বিদেশপ্রেমিক’ বন্ধুটিকে বলেছিলাম....দেশকে মা ভাবতে পারোনা?সে বলেছিলো.... ‘বিজ্ঞাপন’ ছাড়ো।দেশকে মা বলা তার কাছে ‘বিজ্ঞাপন’?আমি অবাক হয়েছিলাম....কেঁদেছি মনে মনে... ভেবেছি তার মত দুর্ভাগা আর কজন আছে যে নিজের মূলকে অস্বীকার করতে পারে....!প্রার্থনা করেছি....হে ঈশ্বর তুমি রামের(!) সুমতি দাও!
সে বলেছিলো যে এই জঞ্জলে ভরা দেশটিকে কোনদিনও ঠিক করা যাবে না...!কিন্তু আসলেও কি তাই?আমাদের দেশটি কি কোনদিনও সামনে যাবে না?আমি বিশ্বাস করি...একদিন আমাদের দেশও সামনে এগিয়ে যাবে...আমাদের দেশও হবে অন্য অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরনা।হিংসা বিদ্বেষে পূর্ণ নোংরা রাজনীতি থেকে আমরা একদিন বেরিয়ে আসব।এমন দিন আসবে যেদিন সুযোগ থাকা সত্তেও আমরা কেউ দুর্নীতি করব না....রোগ শোক ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে আমরা একদিন মুক্তি পাবো।একদিন ছুটি হবে....সেই দিন আসবেই!
আমরা সবাই মনে প্রাণে এসব বিশ্বাস করি কারণ আমরা জানি...কোন দেশই পরিপূর্ণ নয়...তাকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে হয়।
তাই আমি বার বার বলতে চাই “জন্ম আমার ধন্য হল মা গো....”