somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিস - পর্ব ৭

২২ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস পর্ব- ১
সক্রেটিস পর্ব- ২
সক্রেটিস পর্ব- ৩
সক্রেটিস - পর্ব ৪ (এটাকে প্রেম পর্বও বলা যায়)
সক্রেটিস পর্ব- ৫
সক্রেটিস পর্ব- ৬
শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। এই পর্বে একটু মজা করা যাক। সক্রেটিস যেমন সারাজীবন সবাইকে সত্য এবং সুন্দরের পথে ডেকেছেন। তেমনি তার অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু কথাও প্রচলন আছে। অবশ্য এগুলো সক্রেটিসের কথা না প্লেটোর কথা তা স্পষ্ট না। কেননা প্লেটোর 'রিপাবলিক' এ প্লেটো যে সক্রেটিস কে এঁকেছেন তা অনেকের মতে প্রকৃত সক্রেটিসের চেয়ে প্লেটোর কাল্পনিক সক্রেটিস বলে মনে করেন।

সে যাই হোক। তাঁর মতে কুকুর একজন দার্শনিক। কিভাবে?

সক্রেটিস বলছেন, 'নতুন যে গুণের কাথা আম বলছি, কুকুরের চরিত্রে তারও আমরা সাক্ষাৎ পাই।'
গ্লকন বললেন, নতুন কী গুণের কথা বলছ তুমি?

ঃআমি বুঝিয়ে বলছি। কুকুরের স্বভাবটি লক্ষ করো। অপরিচিত কাউকে যখন কুকুর দেখে তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে; আবার পরিচিত কাউকে যখন কুকুর দেখে তখন সে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়ে। অথচ অপরিচিত লোকটি যে তার কোনো ক্ষতি করেছে এমন নয়, আর পরিচিত ব্যক্তিও হয়তো তার কোনো উপকার সাধন করেনি। কুকুরের-চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্য কি তোমার চোখে অদ্ভুত বলে বোধ হয়নি?
ঃ বিষয়টিকে আমি পূর্বে অবশ্য এভাবে দেখিনি। কিন্তু তোমার বক্তব্যের যথার্থ্যকে আমি স্বীকার করি সক্রেটিস।
ঃ কুকুরের সহজাত এই বোধশক্তিকে অবশ্যই তুমি উত্তম বলবে। আমি বলব, এ-কারণে সে একজন খাঁটি দার্শনিক বলে পরিগণিত হতে পারে।
ঃ কুকুরটা তোমার দার্শনিক হয়ে গেল!
ঃ হ্যাঁ, আশ্চর্যের কী আছে? কুকুর কেবল মুখ দেখেই জানা-অজানার ভিত্তিতে সুহৃদ আর শত্রুতে পার্থক্য করে ফেলে-এটা তার কম গুণের কথা! যে পশু জানা-অজানার ভিত্তিতে তার পছন্দ এবং অপছন্দকে নির্দিষ্ট করে সে যে জ্ঞানের একজন প্রেমিক, একথা আমাদের মানতে হবে।
ঃ হ্যাঁ, সক্রেটিস, সে নিশ্চয়ই জ্ঞানপ্রেমিক।
ঃ আবার দেখো জানা বা শিক্ষার আগ্রহ হচ্ছে জ্ঞানের প্রতি প্রেমস্বরূপ। এবং জ্ঞানের প্রেমিকই হচ্ছে দার্শনিক।

সুতরাং কুকুর ও দার্শনিক। এটা আসলে উদাহরণ দেয়ার জন্য । কুকুরকে দার্শনিক বানিয়ে তো সক্রেটিসের তেমন লাভ নেই। কিন্তু এই একই গুণ যদি মানুষের থাকে, বন্ধুজনের প্রতি যে বিনম্র, স্বভাবগতভাবে জ্ঞানেরও সে প্রেমিক হতে বাধ্য।

কিন্তু এই স্বভাব, শুধু মুখ দেখেই জানা-অজানার ভিত্তিতে সুহৃদ আর শত্রুতে পার্থক্য করতে পারার গুণ মানুষের মধ্যে কার আছে? আছে পুলিশের। তবে পুলিশও কি দার্শনিক? সক্রেটিসের তত্ত্ব অনুযায়ি বলতে হচ্ছে অবশ্যই পুলিশ দার্শনিক। কিন্তু এই কাজটি যদি সে করতে না পারে তবে সে দার্শনিকও নয়, পুলিশও নয়।

আবার, দেখুন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা যে হর হামেশাই মিথ্যা কথা বলেন, কেন? কারণ, তারা সক্রেটিস এর কথা অক্ষরে অক্ষরে মান্য করেন। সক্রেটিস নিজেই বলেছেন, 'মানুষের মধ্যে কারু যদি মিথ্যা বলার অধিকার থাকে তবে সে-অধিকার কেবল রাষ্ট্রের শাসকবর্গেরই থাকতে পারে। রাষ্ট্রের শাসক শত্রুর মোকাবেলায় কিংবা নাগরিকদের শাসনের ক্ষেত্রে জনস্বার্থে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণের অধিকার অপর কারুর থাকবে না।' এখানে আমরা আমজনতা যারা শাসিত তাদের আবার মিথ্যা বলার কোনো সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, সক্রেটিস বলেছেন, 'শাসক যদি দেখে, সে ছাড়া অপর কেউ মিথ্যা বলছে তা হলে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসাবে দন্ডদানের তার অধিকার থাকবে।' তবে বুঝুন ঠেলা।

প্লেটোর রাষ্ট্রে কবিদের কোনো স্থান নেই। কেন? কারণ কবিরা একই সাথে অনেক চরিত্র চিত্রন করেন। কিন্তু, চরিত্র চিত্রনের সময় কবিকে বিভিন্ন চরিত্র আঁকতে হয়। যা একজন মানুষের পক্ষে বিভিন্ন মানুষের চরিত্র অনুধাবন করা অসম্ভব। আবার কবি একই সাথে মিলনান্তক আবার বিয়োগান্তক রচনা করছেন। যেহেতু একটি মানুষ কেবল একটি কাজই সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে, একাধিক কাজ নয়, সেহেতু যদি কেউ একাধিক কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে তা হলে সে কোনোটিতেই তেমন সুনাম অর্জনে সক্ষম হবে না। আবার, এই যে মিলনান্তক বা বিয়োগান্তক নাটক সবই অনুকারী কাব্য। আর এই অনুকারী কাব্য নিয়ে সক্রেটিসের কথা হলো, 'অনুকারী কাব্যকলা সম্পর্কে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ঘটনার বর্ণনায় কবিদের কি অনুকারী রীতি অনুসরণ করতে দেওয়া হবে? যদি কবিদের তা করতে দেওয়া হয় তবে তা কি সমগ্র রচনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, না তার অংশবিশেষের উপর? যদি অংশবিশেষের উপর হয় তা হলে রচনার কোন অংশে এ-রীতি ব্যবহৃত হবে? অথবা অনুকারী-রীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে?' এর মানে কি দাড়াল? এর মানে দাড়ালো কবির কোনো প্রয়োজন নেই সক্রেটিসের রাষ্ট্রে (অনেকেই বলেছেন এটা আসলে সক্রেটিসের নয়, প্লেটোর রাষ্ট্র)।

আজ এই পর্যন্তই থাক। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। আরো মজার মজার জিনিস আছে। তবে পরবর্তী পর্বে আমরা তার বিখ্যাত উক্তি গুলো কি, দেখার চেষ্টা করবো।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×