ব্রাজিল গোল করলে অনেক দূর থেকে আনন্দ উল্লাসের ধ্বনি যেমন শোনা যায়, ব্রাজিল গোল খেলেও ঠিক তেমন শোনা যায়! সাপোর্টার হিসেবে আমাদের জুড়ি মেলা ভার!
ফিফা র্যাংকিং এর ১৪ তম দলের সাথে ৩ নম্বর দলের লড়াই। সংখ্যার বিচারে অসম হলেও মাঠের হিসেব-নিকেশ যে আলাদা সেটা গতকালকের ম্যাচে বোঝা গেছে। ব্রাজিল কিক অফের শুরু থেকেই জোগো বোনিতো (সুন্দর ফুটবল) খেলতে শুরু করে। ফল হিসেবে ১৮ মিনিটেই স্টার নেইমারের কর্ণার থেকে চিপায় ওৎ পেতে থাকা ডেভিড লুইস তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি করেন।
সেই গোল শোধ করতেও সময় নেয় না চিলিয়ানরা। ডিফেন্সের খামখেয়ালিপনায় সুন্দর প্লেসিং এবং ফিনিশিং এ ৩২ মিনিটে দুর্দান্ত গোল করে সানচেজ খেলায় ফিরে আনে চিলিকে।
দ্বিতীয়ার্ধ খেলার পুরো কৃতিত্ব দিয়ে দিতে হবে চিলিয়ানদের। ব্রাজিল তার স্বভাবসুলভ ফুটবল খেলতে পারেনি বা বলা চলে চিলি খেলতে দেয়নি। প্লেসিং নামে যে কিছু আছে বোঝাই যাচ্ছিল না। খেলায় কোন প্ল্যানিং ছিল না। একটা চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে এমন নিস্পৃহ ফুটবল স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৬০ হাজারের অধিক দর্শক এবং এ দেশের আপামর ব্রাজিল সমর্থক আশা করে না। নেইমার দ্বিতীয়ার্ধে কয়বার বলে পা ছোঁয়াতে পেরেছে তা হাতের কড়ি দিয়ে গুনে ফেলা যায়। নেইমারের দুই পাশের উইংগার অস্কার,ফ্রেডও তার মতই ছিল নিস্প্রভ। ব্যতিক্রম একমাত্র হাল্ক। একক নৈপুন্যে অসাধারণ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালিয়েছিল চিলিয়ান ডিফেন্সে। একটি গোলও দিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু সেটি ছিল হ্যন্ডবল। যেটি নিয়ে আজকের বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা তাদের হিট বাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে!মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যেটি আসলে হাতের কাঁধের উপরের অংশে লাগে। ম্যারাডোনার 'হ্যান্ড অফ গড' এর নতুন আরেকটি সংস্করণ 'হ্যান্ড হফ হাল্ক' হওয়া বোধহয় এত সহজ না।
৯০ মিনিটে খেলা নিস্পত্তি না হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ব্রাজিল যে কোন মূল্যে একটি গোল বের করতে চাচ্ছিল। অপরপক্ষে চিলি চাচ্ছিল কোনমতে পেনাল্টি শুট আউটে নিয়ে যেতে। যেখানে তারা সফল হয়।
পেনল্টি শুটের প্রথম দুইটি শট ফিরিয়ে দিয়ে ব্রাজিল গোলকিপার জুলিও সিজার ব্রাজিলিয়ানদের আশার আলোয় ভাসান। পরের দুইটি গোল করে ফিরে আসে চিলি । শেষ শটটিতে অবস্থা দাঁড়ায় চিলি গোল করলে আরেক দফা পেনাল্টি শুট আউট। কিন্তু শেষ শটটি গনজালো জারার লাগে গোলপোস্টে । আনন্দের চেয়ে আবেগে ভেসে যায় খেলোয়াড়েরা। নেইমারের মুখ ঢাকা কান্না প্রমাণ করে নিজেদের নার্ভ শক্ত না থাকলে হয়ত ওখানেই শেষ হয়ে যেত সেলেসাওদের মিশন হেক্সা।
পরিশেষে বলাই যায়, Brazil may won the match, but Chile won the heart. Congratulations Brazil, well played Chile.