গত সপ্তাহ থেকে আমি ইউটিউবে প্রায় দশ পর্বের একটা পডকাস্ট টাইপ সিরিজ শুরু করেছি। এর নাম 'মন বসেনা পড়ার টেবিলে'।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব আসছে আজ রাত নয়টায়
* কাদের জন্য এটা?
যারা এখন কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ছে, মাত্র ভর্তি হয়েছে, সামনে ভর্তি হবে, ভর্তি হতে চায় কিন্তু বাবা মা দেয়না তারাই মূলত টার্গেট অডিয়েন্স। তবে অন্যান্য ফিল্ডের যারা প্রোগ্রামিং টাইপ ব্যাপার স্যাপারে ইন্টারেস্টেড তাদের জন্যও এটা উপকারে আসবে। যারা ক্যারিয়ারে কি করলে ভালো করা যাবে এইসব নিয়ে কনফিউসড তাদেরকে সাহায্য করাই আমার উদ্দেশ্য। ইনফ্যাক্ট যাদের পড়াশোনা শেষ তারাও বেনিফিট পাবেন বলে আমার ধারণা। আমার কাজের ক্ষেত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলেও এই সিরিজ মোর জেনারেল। কিছু কিছু পর্ব থাকবে যেগুলি আসলে সব ফিল্ডের কাজে আসবে।
* কেন?
এই ফিল্ডে আমার ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য মাত্র ১১ বছর। আমার এই ছোট ক্যারিয়ারে পদে পদে আমার অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছু জেনে এবং দেখে আফসোস হয়েছে যে ঈশ, এটা যদি কয়েকটা দিন আগে জানতাম তাহলে আরও ভালো করতে পারতাম। আমাদের কাছে অনেক ইনফরমেশন সময়ের অনেক পরে আসে। টেক ফিল্ড যেহেতু খুবই ফাস্ট মুভিং, তাই সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য মারাত্মক পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে ক্যারিয়ারে। তাই আমার লক্ষ্য হচ্ছে যারা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আছে তাদেরকে এই ফিল্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো।
* ফেসবুকে ক্যারিয়ার রিলেটেড হাজার হাজার লাইভ হয়, তবুও এটা কেন আলাদা?
১) এই টাইপের এক্সিস্টিং লাইভগুলি খুবই চমৎকার কিন্তু মূলত গেস্ট অথবা টিউটোরিয়াল ফোকাসড অথবা কিভাবে অমুক কোম্পানীতে চাকরি পেতে হয় এইরকম। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক স্টুডেন্ট এগুলির সাথে নিজেকে কানেক্টেড ফিল করেনা। আমার এই প্রোগ্রামটা টপিক ফোকাসড। এই প্রোগ্রামটায় খুব ডাইভার্স ব্যাকগ্রাউন্ড এবং এক্সপার্টিজের অতিথিদেরকে আমি সেই সব প্রশ্ন করবো যেগুলি সাধারণত আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্টদের (বিশেষ করে নতুনদের) মনের প্রশ্ন। এমন অনেক প্রশ্ন-উত্তর আছে, তথ্য আছে যেগুলির ব্যাপারে হয়তো বেশীরভাগ মানুষ জানেই না। কিন্তু জানা থাকলে ক্যারিয়ারে একটা বুস্ট পেতে পারে, অনেক ডিপ্রেসিভ মোমেন্ট থেকে বাঁচতে পারে।
আমি প্রোগ্রামটার প্ল্যান করার সময় কল্পনা করেছি গ্রাম থেকে শহরে সিএসই পড়তে আসা একটা ছাত্রকে যে শহরে এসে এডজাস্ট করতে পারছেনা, বুলিং এর শিকার হচ্ছে, কারো সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা কিভাবে পড়তে হবে, কিভাবে ফাটিয়ে দিতে হবে, ডিপার্টমেন্টের ক্লাসমেট, সিনিয়রদের সাথে তেমনভাবে মিশতে পারছেনা যে এগুলি জানবে। আমি মাথায় রেখেছি সেই মেয়েটাকে যে অবিরাম শুনে এসেছে টেকনিক্যাল লাইন মেয়েদের জন্য না এবং এক পর্যায়ে হয়তো বিশ্বাস করা শুরু করেছে। আমি চিন্তা করেছি সেই অবিভাবকের কথা যার বাচ্চা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়, কিন্তু তার ধারণা হচ্ছে বাজারে কাকের চাইতে সিএসই স্টুডেন্ট বেশী, তাই তিনি পড়তে দেবেন না। আমি নিজেকে বসিয়েছি সেই স্টুডেন্টটার জায়গায় যার ইচ্ছা ছিলো সিএসই পড়ার কিন্তু নানা কারণে পড়তে পারেনি এবং এই কষ্টে তার দুনিয়ার কোন কিছু ভালো লাগেনা আর। সেই স্টুডেন্টটার কথা আমি ভেবেছি যে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়ে জেনেছে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং ছাড়া প্রোগ্রামিং শেখার এবং এই লাইনে এগিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নাই, কিন্তু কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং তার ভালো লাগেনা। আবার উল্টা দিকে চিন্তা করেছি সেই স্টুডেন্টটার কথা যে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এ ভালো করতে চায় কিন্তু তার ইউনিভার্সিটি নতুন এবং এখানে সেই কালচারটা নেই সে কেউ তাকে গাইড করবে ঠিকমত। আন্ডারগ্র্যাডের শেষ বর্ষে এসে একটা থিসিস বা প্রজেক্ট করতে হয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে জানিই না এইখানে কতদূর যাওয়া সম্ভব। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভালো মেন্টর পাওয়া যায় না যেহেতু বাংলাদেশে গবেষণার কালচার নেই। আমি এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করবো একটা আন্ডারগ্র্যাড থিসিস দিয়ে কিভাবে দুনিয়া জয় করা যায়।
২) খুবই ক্যাজুয়াল সেটআপে এখানে প্রায় ১০টার মত এপিসোড থাকবে। লাইভ করার চিন্তা আমার মাথায় এসেছিলো। কিন্তু লাইভ হারিয়ে যায়। তাই অনেক কষ্ট করে সময়সাপেক্ষ ভিডিও এডিটিং এর পথ বেছে নিয়েছি যাতে ফাঁকে ফাঁকে দরকারী ইনফরমেশন যোগ করা যায়, একটু হালকা টোনে করা যায়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সিরিজটাকে একটা ছোটোখাটো সিলেবাসের মত দাঁড় করানো যাতে এখন থেকে পাঁচ দশ বছর পরে যখন কেউ সিএসই তে ভর্তি হবে বা ভর্তি হওয়ার কথা চিন্তা করবে, এই সিরিজটা দেখলেই সে জানবে তাকে কি কি জানতে হবে, কি কি করতে হবে, এবং কতদূর পর্যন্ত সে স্বপ্ন দেখতে পারবে। কম্পিউটার সায়েন্স অনেক মজার একটা ফিল্ড। এটাকে উপভোগ করার কত যে পথ আছে সেটা যাতে তারা জানে।
৩) যেসব ইউনিভার্সিটি পুরানো এবং নামকরা তাদের অনেক ভালো টিচার, এলামনাই থাকে, ডিপার্টমেন্টে একটা এস্টাবলিশড কালচার থাকে। না চাইতেই অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ইনফরমেশন পাওয়া যায় এবং নিজের অজান্তেই এগুলি ক্যারিয়ারে অনেক হেল্প করে। যেমন আমি যখন সাস্টে ছিলাম তখন জিআরই শব্দটা বুঝতে বুঝতে ফোর্থ ইয়ার চলে এসেছে। এখনে মোটামুটি ফার্স্ট ইয়ারে এসেই সবাই জানে যে নর্থ আমেরিকায় পড়তে চাইলে জিআরই লাগবে। ফলাফল দেখি যে এখন পোলাপান অনেক আগে থেকে এটা নিয়ে কাজ করা শুরু করে এবং অনেক ভালো স্কোর করে যেটা আমাদের সময় ভাবা যেতো না। তারপরে বলা যায়, ইন্টার্ণশীপের কথা। আমি পিএইচডি করতে আসার পরে ইন্টার্নশীপের নাম শুনেছি, লোকজনকে ক্যারিয়ার ফেয়ারে দৌড়াতে দেখেছি। কিন্তু ইন্টার্নশীপ যে জাস্ট তিন মাস একটা কোম্পানীতে কাটিয়ে আসা না এবং এটা দিয়ে আসলে কতদূর যাওয়া যেতে পারে সেটা বুঝতে বুঝতে অনেক লেইট হয়ে গেছে। আগে বুঝলে ক্যারিয়ার অন্যরকম হতে পারতো।
আমি চাই এইরকম ছোটোখাটো ব্যাপার যেগুলির ব্যাপারে জাস্ট দুই লাইন সময়মত জানলেই পরে আফসোস লাগবেনা, সেরকম ব্যাপারগুলি একসাথে কম্পাইল করতে।
এই ভিডিওগুলি একটু লম্বা হবে। যেহেতু বাংলা ফানি ভিডিও টু থাউজেন ছেভেনটিন বা রোস্টিং টাইপ ভিডিও না, তাই এগুলি ভাইরাল হওয়ার জন্য বানানো হয়নি। কিন্তু আশা করবো আপনারা একটু হেল্প করবেন এগুলি যাতে যাদের দরকার তাদের কাছে চলে যায়।
* প্রথম পর্বে কি থাকছে?
খুব সহজ। কম্পিউটারের সাথে আমাদের প্রায় সবার প্রথম পরিচয় গেম দিয়ে। তাই প্রথম দুই পর্বে কথা শুনবো দুইজনের কাজ থেকে যাদের অভিজ্ঞতা আছে গেম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার। তৃতীয় পর্ব? গেমের পরেই মনে হয় আমরা শুনেছি হ্যাক করে দেয়ার কথা। অতএব অনুমান করে নেন
* এই উদ্ভট নামের কারণ কি?
উড়ে যাওয়া মনকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে পড়ার টেবিলে আনন্দের সাথে বসানো এবং নতুনদেরকে সফল হতে সাহায্য করাই এর উদ্দেশ্য। আর আমার মত ব্যাকবেঞ্চার তো নিশ্চয়ই ফর্মাল কোন নাম দেবেনা।
* কিভাবে দেখবো?
ভিডিওগুলি প্রতি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আমার ইউটিউব চ্যানেলে এভেইলেবল হবে। সব ঠিক থাকলে প্রথম পর্ব আসছে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায়।
আমার চ্যানেলের লিঙ্ক। https://www.youtube.com/user/cryptexcode/
এছাড়া একটা কমিউনিটি বিল্ডআপ করার জন্য এবং যে কোন ডিসকাশন টু ওয়েতে করার জন্য এই গ্রুপটা থাকলো
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০১