২০০৮ সাল....
শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ২০০৩ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্ট থিসিসের টপিক হিসেবে বেছে নিলেন একটি বেসিক সার্চিং সিস্টেম। সেটি ডেটাবেইস থেকে সার্চ করে তথ্য সরবরাহ করতে পারতো। ধীরে সুস্থে এটিকে পরিণত করা হয় একটি বিজনেস ইনফো সার্চিং সিস্টেমে। সেই সময় এই সিস্টেমটি ইয়েলো পেজ ডিরেক্টরী থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতো এবং সার্চের রেজাল্ট হিসেবে কাংখিত প্রতিষ্ঠানের ইনফরমেশন প্রোভাইড করতো। এতে তখন প্রায় ৬০,০০০ প্রতিষ্ঠানের ডেটা ছিলো। এটিকে তখন একটি বেসিক বিজনেস সার্চ ইন্জিনে পরিণত করা হয় এবং নাম দেয়া হয় একুশে ফিন্যান্স। এতে সংযুক্ত করা হয় শেয়ার মার্কেট এনালাইসিসের টুল।
তৎকালীন একুশে ফিন্যান্স
এই একুশে ফিন্যান্স ২০০৯ সালে সিটি ফিনানশিয়াল আইটি কেইস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে এবং জিতে নিয়ে আসে রানার্সআপ প্রাইজ।
সেই থেকে শুরু......
২০০৪ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্টের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তৈরি হয় ওয়েব ক্রলার এবং নজর দেয়া হয় বাংলা সার্চিং এর দিকে। ডেটাবেইজ সার্চিং থেকে সরে এসে হাত দেয়া হয় ইনডেক্সবেইজড সার্চের দিকে। আস্তে আস্তে একটা শক্তিশালী সার্চ ইন্জিনের রুপরেখা দাড় করানো হয়।
২০০৫ ব্যাচের একটি থিসিস গ্রুপ এই কাজটাকে অনেকদুর এগিয়ে নেয় এবং এটিকে একটি বেসিক বাংলা সার্চ ইন্জিনের কাঠামো হিসেবে দাড় করিয়ে ফেলেন ২০১০ সালের শেষের দিকে। উনারা ডেটাবেইস কোর্স প্রজেক্ট হিসেবে একটা ছোট স্কেলের সার্চ ইন্জিন বানিয়েছিলেন পিপীলিকা নামে। এই দুটো প্রজেক্টকে মার্জ করে শুরু হয় মূল সার্চ ইঞ্জিনের কাজ। তখনের পিপীলিকার লোগো ছিলো এটা।
ইন্জিনটি অংশ নেয় সিলেট রিজিয়নের ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ারে এবং জিতে নেয় ১ম পুরষ্কার। কম্পিউটার জগতে একটি ফিচারও আসে এটি নিয়ে। (উপরের বামের ছবি)
নতুন নাম ঠিক করা হয় পিপীলিকা। পিপীলিকা তখন বাংলা এবং ইংরেজী দুই ভাষাতেই সার্চ করতে পারা শুরু করে। জিতে নেয় ২০১১ সালের ন্যাশনাল কলেজিয়েট সফটওয়্যার কনটেস্টের চ্যাম্পিয়নের খেতাব।
২০০৬ এবং ২০০৭ ব্যাচের বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট কাজ শুরু করেন বাংলায় ন্যাচরাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে যেটা পিপীলিকার পারফরম্যান্স বাড়াতে সহায়তা করে।
এতদিন পিপীলিকার উন্নয়ন চলছিলো শুধুমাত্র অনেক স্টুডেন্ট এবং কয়েকজন টিচারের উৎসাহে। কিন্তু পিপীলিকার সম্ভাবনা দেখে গ্রামীণফোন আইটি (জিপিআইটি) সাস্টের সাথে চুক্তি করে ফান্ডিং দিতে রাজী হয় পিপীলিকার প্রফেশনাল ডেভলপমেন্টে। চুক্তি সাক্ষর হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।
তারপর ড: মু: জাফর ইকবাল স্যারের তত্বাবধানে পিপীলিকার ডেভলপমেন্ট শুরু হয়ে ডিপার্টমেন্টের সফটওয়ার হাউজে। ২০০৪ ব্যাচের প্রাক্তন কয়েকজন স্টুডেন্ট এসে জয়েন করেন ডেভলপমেন্ট টিমে। টিমের লীডার হিসেবে অফিশিয়ালী দায়িত্ব নেন রুহুল আমিন সজীব স্যার। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্ট পড়াশোনা শেষ করে জয়েন করেন এই টিমে। শুরু হয় স্বপ্নযাত্রা।
খুব দ্রুতই পিপীলিকার বেটা ভার্সনের কাজ শেষ হয়। আজ ১৩/৪/১৩ তারিখে অফিশিয়ালী রিলিজ করা হচ্ছে পিপীলিকার বেটা ভার্সন। পহেলা বৈশাখে বাঙালীরা শাবিপ্রবি আর জিপিআইটির পক্ষ থেকে পাবে নতুন উপহার। বাংলা ভাষার সার্চ ইন্জিন।
পিপীলিকার বর্তমান ডেভলপমেন্ট টিমে কাজ করছেন ১১ জন। ওনারা হলেন
• মাহবুবুর রহমান তালহা
• মো: মহিউদ্দীন মিশু
• তালহা ইবনে ইমাম
• তৌহিদুল ইসলাম
• সাজ্জাদুল হক
• বাকের আনাস
• ফরহাদ আহমেদ
• মো: মাকসুদ হোসাইন শিবলী
• থিম্পু পাল
• আসিফ সামির এবং
• মধুসূদন চক্রবর্তী।
পিপীলিকা নাম এবং লোগো এসেছে ২০০৫ ব্যাচের আহমেদ চিশতী এবং বুরহান উদ্দিনের সেই প্রজেক্ট থেকেই।
পিপীলিকা বর্তমানে বেটা ভার্সন চলছে pipilika.com এ। এর পারফরম্যান্স ভালো করার কাজ চলছে এবং চলতেই থাকবে। এখন হয়তো বেশ কিছু সার্চ রেজাল্ট পারফেক্ট আসবে না। কিন্তু সার্চিং বাড়ার সাথে সাথে এগুলো খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। পিপীলিকা তে বাংলায় ন্যাচরাল ল্যাগুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে কাজ করা হয়েছে যা গুগল ইউজ করেনা। সুতরাং আত্মবিশ্বাসের সাথে বলা যায় বাংলা সার্চিং এর জন্য পিপীলিকাই সেরা।
পিপীলিকার পারফরম্যান্স বাড়াতে আপনার কোন সাজেশন থাকলে সার্চ ইন্জিনের ফিডব্যাক পেজে আমাদের জানান। সবার সহযোগিতায় পিপীলিকা খুব শীঘ্রই পরিণত হবে একটি শক্তিশালী বাংলা সার্চ ইঞ্জিনে।
কারণ এর মূল ভাষা বাঙালীর ভাষা বাংলা আর বাঙালী সবই পারে।
জয় বাংলা
পিপীলিকা নিয়ে কোন সাজেশন থাকলে, কি কি ফিচার দেখতে চান ভবিষ্যতে জানাতে চাইলে জানাতে পারেন এই লিংকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৩