মন খারাপ থাকলে মানুষকে জ্বালাতন করে আমি একটা পৈশাচিক মজা পাই। হাতে পানি থাকলে তো আর কোন কথাই নেই।
বিষন্ন মন, বিপন্ন স্বত্তা
পানির জাদুতে, শান্তি পায় আত্মা।।
আত্মার শান্তি দরকার আমার।
দুই চেয়ার পরে একটা ছেলেকে দেখছি অনেকক্ষণ ধরে। রুক্ষ চুল। উত্তপ্ত চোখ। যে চোখ দেখলেই যে কোন রমণীর প্রশ্ন করার কথা, “তোমার চোখ এত লাল কেন?”
মনটা বেজায় খারাপ। কথা বলার সঙ্গী দরকার একটা। টকটক কথা, বুমবুম সিগারেটের ধোয়া, কড়া ঠান্ডা অ্যালকোহলের গ্লাস জোড়ার টুং করে মিলনের শব্দ আর সেই সাথে গভীর আবেগে বলা চিয়ার্স। চিয়ার্স টু লাইফ। চিয়ার্স টু হেল। একটা জিনিস বাদ পড়ে গেল। সুখ দু:খের কথা শেয়ার করা। বাদ বাকী সব কিছুর চাইতে এটারই দরকার সব চাইতে বেশী ছিলো।
হাতে দুটা স্কচ নিয়ে হাটা শুরু করলাম অজানা বন্ধুর দিকে। বন্ধু বললাম একটাই কারণ। আমার বন্ধুভাগ্য বেজায় ভালো। খুব সহজেই কুকুর-বিড়াল আমার বন্ধু হয়ে যায়। মানুষও হয়। কিন্তু থাকে না বেশীদিন। তিশার কথা অনেক মনে পড়ছে।
তিশা
অমানিশা
তন্দ্রা নিশীর আলোর ধারায়
ঝুম বিলাসী বর্ষা।
এই কুকাব্য শুনলে তিশা রেগে যেত। আমাকে যখন ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললো শেষবারের মত, বুকের বামপাশটায় একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করেছিলাম। ব্যাথা নিয়েই এই চারটা লাইন বিড়বিড় করছিলাম। তিশার কানে মনে হয় গিয়েছিলো। কর্কশ গলায় বলেছিলো, “গেট লস্ট, সান অফ এ বিচ।”
হতচ্ছাড়া চোখটা বড় জ্বালাচ্ছে। ছেলেটার দিকে স্কচের গ্লাসটা বাড়িয়ে বললাম, “হাই, আমি রুদ্র।”
বাঙালী ছেলেটার থেকে আশা করছিলাম একগাদা প্রশ্ন। “আপনি কে? আমাকে কিভাবে চেনেন? হেন তেন..”।
কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে গ্লাসটা নিয়ে ঢক করে গিলে ফেললো পুরোটা। অনেক দিন পরে অবাক হলাম যখন আমার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে ছেলেটা বললো, “কাউকে ড্রিংকস অফার করলে সাথে স্মোকও অফার করতে হয়। জানেন না?”
আমি সিগারেট দিয়ে বললাম, “মন খারাপ?”
উদাস চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,
যে ঠোঁট পুড়েছে সিগারেটের আগুনে
আর যে ঠোঁটে দীর্ঘ চুম্বনেও বসন্ত হাসে না
আক্ষরিক অর্থে সে সব যৌথ ঠোঁট বিষাক্ত হলেও
জেনে রেখো তুমি ঠোঁটের পতিতালয় গড়েছ
আর আমি সিগারেটে প্রতিবার ভালবেসেই ঠোঁট ছোঁয়াই।
এই সেরেছে। কবি নাকি আপনি?
রহস্যময় চোখে ছেলেটা বললো, “এই রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই কবি। আমি হলাম সদ্য বৈধব্যপ্রাপ্ত কবি শ্রীকান্ত আপনি কবি রুদ্রপ্রতাপ।”
এইটুক বলেই ছেলেটা হড়হড় করে বমি করে দিলো।
আমার এসব জিনিসপত্র সমসময় ঘৃণা লাগে। কিন্তু আজ নিজের প্রতিবিম্বকে নিজের সামনে দেখে নিজের অসহায়ত্ব চিন্তা করে অপরাধবোধ জেগে উঠলো মনে। কয়েকজনের হেল্প নিয়ে ছেলেটাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলাম।
সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে বললাম,
“অনুভূতিরা বেইমান। মনের রাজ্যের গহীণ কোনেই তার বসবাস। ভরদুপুরে সিড়ির উপরের ঝুলবারান্দার জলচৌকির উপর তাকে দেখা যায় না। সুখানুভুতিগুলো হয় না দীর্ঘস্থায়ী। রাতবিরাতে শেয়ালের তর্জনগর্জনে ভীত মোরগের খোয়ারের কোণে দেখা মেলে অনুভূতির। সে অনুভূতি দাগ ফেলে যায়। উড়ে চলে যায় না কর্পূরের মত। সে বেইমান। প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে মনে করিয়ে দেবে তুমি হেরেছো। তুমি হেরে গেছো আমার কাছে। বৃষ্টির ছটায় সুখের পরশগুলো তিশার আচলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু দু:খরা ভীড় করতে থাকে আমার চোখে। মস্তিষ্কের প্রতিটা শিরা মনে করতে থাকে তিশার আচলে জমে থাকা দু:খগুলো। কালো মেঘের গর্জনের মতই ভয়াল তার তর্জন।”
গলাটা ভারী হয়ে আসে আমার। তিশাকে বড় মনে পড়ছে। ওর কোমল স্পর্শের অভাব বোধ করছি প্রচন্ডভাবে। শ্রীকান্তের দিকে তাকিয়ে বললাম, “মদিরা পিয়োগে?”
শ্রীকান্ত খানিকটা চুপ করে থেকে এক নিশিকণ্যার দিকে হাত তুলে বললো, “ঐ মেয়েটাকে দেখছো? তার কিন্তু অনুভূতি নেই। পেটে যন্ত্রণা থাকলে অনুভূতিরা পালায়”।
আমি কেমন যেন মুহুর্তেই শূন্য হয়ে গেলাম। তিশার মুখটা ভেসে উঠলো নিশিকন্যার অবয়বে। আমি উঠে দাড়ালাম। হাটতে শুরু করলাম তিশার দিকে।
নীরব০০৯ এর লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৩০