somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প 'হোর অর কিস অফ ভেনম'

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মন খারাপ থাকলে মানুষকে জ্বালাতন করে আমি একটা পৈশাচিক মজা পাই। হাতে পানি থাকলে তো আর কোন কথাই নেই।

বিষন্ন মন, বিপন্ন স্বত্তা
পানির জাদুতে, শান্তি পায় আত্মা।।


আত্মার শান্তি দরকার আমার।
দুই চেয়ার পরে একটা ছেলেকে দেখছি অনেকক্ষণ ধরে। রুক্ষ চুল। উত্তপ্ত চোখ। যে চোখ দেখলেই যে কোন রমণীর প্রশ্ন করার কথা, “তোমার চোখ এত লাল কেন?”

মনটা বেজায় খারাপ। কথা বলার সঙ্গী দরকার একটা। টকটক কথা, বুমবুম সিগারেটের ধোয়া, কড়া ঠান্ডা অ্যালকোহলের গ্লাস জোড়ার টুং করে মিলনের শব্দ আর সেই সাথে গভীর আবেগে বলা চিয়ার্স। চিয়ার্স টু লাইফ। চিয়ার্স টু হেল। একটা জিনিস বাদ পড়ে গেল। সুখ দু:খের কথা শেয়ার করা। বাদ বাকী সব কিছুর চাইতে এটারই দরকার সব চাইতে বেশী ছিলো।

হাতে দুটা স্কচ নিয়ে হাটা শুরু করলাম অজানা বন্ধুর দিকে। বন্ধু বললাম একটাই কারণ। আমার বন্ধুভাগ্য বেজায় ভালো। খুব সহজেই কুকুর-বিড়াল আমার বন্ধু হয়ে যায়। মানুষও হয়। কিন্তু থাকে না বেশীদিন। তিশার কথা অনেক মনে পড়ছে।

তিশা
অমানিশা
তন্দ্রা নিশীর আলোর ধারায়
ঝুম বিলাসী বর্ষা।


এই কুকাব্য শুনলে তিশা রেগে যেত। আমাকে যখন ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললো শেষবারের মত, বুকের বামপাশটায় একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করেছিলাম। ব্যাথা নিয়েই এই চারটা লাইন বিড়বিড় করছিলাম। তিশার কানে মনে হয় গিয়েছিলো। কর্কশ গলায় বলেছিলো, “গেট লস্ট, সান অফ এ বিচ।”

হতচ্ছাড়া চোখটা বড় জ্বালাচ্ছে। ছেলেটার দিকে স্কচের গ্লাসটা বাড়িয়ে বললাম, “হাই, আমি রুদ্র।
বাঙালী ছেলেটার থেকে আশা করছিলাম একগাদা প্রশ্ন। “আপনি কে? আমাকে কিভাবে চেনেন? হেন তেন..”।
কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে গ্লাসটা নিয়ে ঢক করে গিলে ফেললো পুরোটা। অনেক দিন পরে অবাক হলাম যখন আমার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে ছেলেটা বললো, “কাউকে ড্রিংকস অফার করলে সাথে স্মোকও অফার করতে হয়। জানেন না?”
আমি সিগারেট দিয়ে বললাম, “মন খারাপ?

উদাস চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,

যে ঠোঁট পুড়েছে সিগারেটের আগুনে
আর যে ঠোঁটে দীর্ঘ চুম্বনেও বসন্ত হাসে না
আক্ষরিক অর্থে সে সব যৌথ ঠোঁট বিষাক্ত হলেও
জেনে রেখো তুমি ঠোঁটের পতিতালয় গড়েছ
আর আমি সিগারেটে প্রতিবার ভালবেসেই ঠোঁট ছোঁয়াই।


এই সেরেছে। কবি নাকি আপনি?
রহস্যময় চোখে ছেলেটা বললো, “এই রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই কবি। আমি হলাম সদ্য বৈধব্যপ্রাপ্ত কবি শ্রীকান্ত আপনি কবি রুদ্রপ্রতাপ।
এইটুক বলেই ছেলেটা হড়হড় করে বমি করে দিলো।

আমার এসব জিনিসপত্র সমসময় ঘৃণা লাগে। কিন্তু আজ নিজের প্রতিবিম্বকে নিজের সামনে দেখে নিজের অসহায়ত্ব চিন্তা করে অপরাধবোধ জেগে উঠলো মনে। কয়েকজনের হেল্প নিয়ে ছেলেটাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলাম।


সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে বললাম,
অনুভূতিরা বেইমান। মনের রাজ্যের গহীণ কোনেই তার বসবাস। ভরদুপুরে সিড়ির উপরের ঝুলবারান্দার জলচৌকির উপর তাকে দেখা যায় না। সুখানুভুতিগুলো হয় না দীর্ঘস্থায়ী। রাতবিরাতে শেয়ালের তর্জনগর্জনে ভীত মোরগের খোয়ারের কোণে দেখা মেলে অনুভূতির। সে অনুভূতি দাগ ফেলে যায়। উড়ে চলে যায় না কর্পূরের মত। সে বেইমান। প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে মনে করিয়ে দেবে তুমি হেরেছো। তুমি হেরে গেছো আমার কাছে। বৃষ্টির ছটায় সুখের পরশগুলো তিশার আচলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু দু:খরা ভীড় করতে থাকে আমার চোখে। মস্তিষ্কের প্রতিটা শিরা মনে করতে থাকে তিশার আচলে জমে থাকা দু:খগুলো। কালো মেঘের গর্জনের মতই ভয়াল তার তর্জন।

গলাটা ভারী হয়ে আসে আমার। তিশাকে বড় মনে পড়ছে। ওর কোমল স্পর্শের অভাব বোধ করছি প্রচন্ডভাবে। শ্রীকান্তের দিকে তাকিয়ে বললাম, “মদিরা পিয়োগে?

শ্রীকান্ত খানিকটা চুপ করে থেকে এক নিশিকণ্যার দিকে হাত তুলে বললো, “ঐ মেয়েটাকে দেখছো? তার কিন্তু অনুভূতি নেই। পেটে যন্ত্রণা থাকলে অনুভূতিরা পালায়”।


আমি কেমন যেন মুহুর্তেই শূন্য হয়ে গেলাম। তিশার মুখটা ভেসে উঠলো নিশিকন্যার অবয়বে। আমি উঠে দাড়ালাম। হাটতে শুরু করলাম তিশার দিকে।


নীরব০০৯ এর লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৩০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×