জীবন ও জীবিকার তাগিদে আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে যেদিন জার্মানির মাটিতে পা দেই, এয়ারপোর্টে নেমেই প্রথমে যে জিনিসটা উপলব্দি করেছি তা হল ডয়েচ বা জার্মান ভাষা না শিখে আর যাই হোক এখানে টিকে থাকা আর মরুভুমির তপ্তবালুকার মধ্যদিয়ে মাইলের পর মাইল খালি পায়ে হেটে চলা একই কথার। চলতে পথে প্রতিদিনকার জীবনে কতইনা ঘটনা ঘটেছে জার্মান ভাষা কেন্দ্রিক, তাদের কিছু যেমন মজার আবার কিছু কিছু বিব্রতকরও বটে। তেমনি কিছু টুকরো ঘটনা তুলে ধরব আজ।
১)
জার্মানিতে এসেছি সপ্তাহ খানেক হয়েছে, ইতিমধ্যে কিছু কিছু শব্দ শিখেছি। তবে এখনো পুরোপুরি সম্পুর্ন বাক্য বলতে পারি না। আর শব্দগুলো পড়তে গেলে ইংরেজির মত উচ্চারনের প্রবনতা তখনো যায় নি। বলে রাখা ভাল জার্মান ভাষায় A , E, I এই তিনটা বর্নের উচ্চারনের ভিন্নতা রয়েছে। তখনো রান্নাবান্নায় ততটা পারদর্শী না হবার কারনে ভাত আর ডিম ভাজিই ভরসা। আর দামের দিক থেকে ডিম আর দুধের দাম বাংলাদেশের মত টাকার হিসেবে কম হওয়ায় এগুলোর প্রতি আকর্যন ও বেশি ছিল । কিন্তু বিপত্তি ঘটল ডিম কিনতে গিয়ে। যে দোকানে ঢুকেছি সেখানে চাল, ডাল আর দুধ খুজে পেলেও ডিম খুজে পাচ্ছি না। তাই সাহায্যের জন্য দোকানের এক কর্মচারীর দারস্ত হইলাম । কিন্তু বিপত্তি ঘটল আমি ডিম নামের গোলাকার বস্তুটি যে খুজে পাচ্ছি না , তা তাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিনা । আমি যতই তাকে জার্মান ভাষায় ই খুজতেছি আর হাতের ইসারায় গোলাকার ডিমের আকৃতি দেখাছি বেচারী না বুঝতে পেরে ততই বোকার মত একবার আমার দিকে আর একবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে । অবশেষে না পেরে ডিম ছাড়াই সেদিন চলে আসতে হয়েছিল । আসলে কাহিনী হল, জার্মান ভাষায় ডিমকে বলে Ei যার ইংরেজি উচ্চারন করলে হয় এই , কিন্তু জার্মান ভাষায় উচ্চারন হবে আই। আর সেই জন্যই বেচারী বুঝতে পারে নাই আমি কি ঘুরার ডিম এই এই করে তাকে বুঝাতে চাচ্ছি ।
২)
তখন সবে মাত্র কিছুদিন হল নতুন কাজে জয়েন করেছি। সবাই মুটামুটি সব কিছুই হাতে কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছে । তো একদিন বস আমাকে ওয়াইনের বোতল কি করে ওপেন করতে হয় তা শেখাচ্ছিলেন। তিনি প্রথম একটা বোতল ওপেন করে দেখিয়ে দিলেন কি করে ওপেন করতে হয় । নিয়ম হচ্ছে যার ওয়াইনের বোতল অডার করবেন তাদেরকে প্রথমে একটু ওয়াইন দিতে হয় টেস্ট করার জন্য যে ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য । বস প্রথম বোতল ওপেন করে জার্মান ভাষায় বললেন,Willst du probieren? যার বাংলা দাঁড়ায় তুমি কি টেস্ট করতে চাও। আমার সহজ সরল উওর আমি এলকোহল খাই না। সেই আগের সুপার সপের সেলস পারসনের মত বস আমার দিকে করুন দৃস্টি দিয়ে ২য় ওয়ানের বোতলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল , এইবার এইটা তুই খুলার ট্রাই কর। আসলে বেচারা আমাকে ওয়ান ট্রাই(টেস্ট) না করে ওয়াইনের বোতল খুলার ট্রাই করতে বলেছিলেন। আর আমার সুপার জার্মান ভাষা বুঝার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমি ওয়াইনের স্বাদ নেবার কথা ভাবছিলাম ।।
৩) জার্মানিতে নিত্যদিনের পরিবহন হিসেবে ট্রেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছোট বড় সব শহরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ট্রেন লাইন। আর টাইমের ব্যাপারেও যথেস্ট সচেতন আর আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য প্রায় সবাই কম বেশি ট্রেনেই যাতায়াত করেন। মাঝে মাঝে এমনও হয় একই রাস্তা ধরে হয়ত দুটি গন্তব্যে একই সময়ে কোন ট্রেন যাবে। আর সে ক্ষেত্রে ২ টু ট্রেন একসাথে করে যে স্টেশনে গিয়ে আলাদা পথে যেতে হবে সেখানে গিয়ে ভাগ হয়ে যায়। তেমনি একট্রেনে উঠেছি একদিন। যেহেতু স্টেশন আর ট্রেনের ইলেক্ট্রিক বোর্ড কিছুক্ষন পরপরই লিখাটা দেখা যাচ্চে যে ট্রেন উমুক স্টেশনে গিয়ে ২ ভাগ হয়ে ২ দিকে চলে যাবে। কিন্তু কোন বগি কোন দিকে যাবে তা কিছু বলা নেই আর আমিও বুঝতে পারছি না ট্রেনের মাইকের ঘোষনা। যথারীতি নিদ্রিস্ট স্টেশনে এসে ট্রেন থেকে গেল আর যাত্রীদের মধ্যে দৌড় ঝাপ শুরু হয়ে গেল বগি বদলানো নিয়ে। আমি কিছু না বুঝে সেই দৃশ্য দেখছি। কিছুক্ষন পরে ট্রেনের এক কর্মকর্তা এসে আমার কাছে জানতে চাইল আমি কোথায় যাব ? আমার গন্ত্যবের নাম শুনে সে তাড়াতাড়ি আমাকে হাতের ইশারায় অন্যবগিতে যাবার কথা বল্লেও মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে গেট ডাউন এর জায়গায় সিট ডাউন বলে ফেলল । ভাগ্য ভাল আমি তার হাতের ইশারা দেখেই দৌড়দিয়েছিলাম তা না হলে আমার যেমন জার্মান নিয়ে সমস্যা ঠিক তেমনি তার ইংরেজি শুনে বসে থাকলেতো আমার গন্ত্যব রেখে অন্য গন্ত্যবে চলে যেতে হত।
********************************
জার্মান ভাষা ও ভাষা নিয়ে প্রবাসীদের লেখা পড়তে দেখতে পারেন জার্মান প্রবাসে ফেব্রুয়ারী ম্যাগাজিন ।
----------------------------------------------
জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – ফেব্রুয়ারি ২০১৫ – “ভাষা দিবস – বিশেষ সংখ্যা”
ডাউনলোড/পড়তে চাইলেঃ www.GermanProbashe.com/archives/3641
************************************