রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “বিশেষতঃ তের চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো এমন বালাই আর নাই।” তো বুয়েটের বালাই কারা। এখানে তো ১৩-১৪ বয়সের কেউ নাই। বুয়েটে – “বিশেষতঃ নবীন শিক্ষকদের মতো এমন বালাই আর নাই। ইহারা ভারিক্কি লইলে জুনিয়রেরা আর পুরনো সহপাঠীরা (যাহারা ভাগ্যদোষে তখনো ছাত্রত্বের চৌকাঠ পার হয় নাই) মনে করে পাকামি। আবার অতিরিক্ত ছাত্র ভাব লইয়া ক্যাফেতে ঘোরাঘুরি করিলে প্রবীন শিক্ষকেরা মনে করেন ছেলেমি। পকেট গড়ের মাঠ হইলেও ইহারা বাসে উঠিতে সংকোচ বোধ করেন। অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা মনে করেন ইহাদের গায়ে এখনো ছাত্রত্ত্বের গন্ধ অটুট আছে। ছাত্ররা মনে করে ইহারা ছাত্রত্ত্ব ঘুচাইয়া শিক্ষক নামের কলঙ্কে নিজেদের কলুষিত করিয়াছে। পশু আর পাখীর মাঝামাঝি অনেকটা বাদুরের মতো ইহারা কখনো পশুদের আবার কখনো পাখীদের মধ্যে ঘোরাঘুরি করিতে করিতে পরিশেষে আরো কিছু বাদুর জুটাইয়া উহাদের সহিত ঘুরিতে প্রয়াস পান।”
তখন আমি বুয়েটে বালাই দলে যোগ দিয়েছি। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হয় আমি কিন্তু শিক্ষক। পরিপাটি জামা, চুল পাট করে আচরানো, নিয়মিত শেভ করা। মনে হয় আরেক জনের জীবন যাপন করছি। ক্যাফের বদলে টিচার্স ক্লাবে সিনিয়র শিক্ষকদের মাঝে বসে সি এন এন দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে উঠি। নাহ, একটা কিছু না করলেই নয়। মোটামুটি সিনিয়র দেখে বেশ ভোকাল একজন শিক্ষককে অনেক কষ্টে বোঝালাম টিচার্স ক্লাবটা এভাবে তাজা কয়েকটি জীবনকে কিভাবে শুকনো করে দিচ্ছে। প্রস্তাব রাখলাম, টিচার্স ক্লাবে একটা রুম করা হোক যেখানে সবসময় কড়া ঝাকা নাকা গান বাজবে আর ভিডিওতে নাচ চলবে। শিক্ষকরা সেখানে এসে মনের সুখে ড্যান্স করবেন। এবার উনাকে নিয়ে আমি আর আরেক বন্ধু বালাই চললাম জে আর সি স্যারের কাছে। উনি গম্ভীর হয়ে আমাদের প্রস্তাব শুনে বললেন গুড প্রোপোজাল। মানে ওখানেই প্রস্তাবের সলিল সমাধি। সেদিন সন্ধ্যায় শিক্ষকত্বে গুলি মেড়ে বলাকা হলে গেলাম একটা মারদাঙ্গা স্পেশাল (?) ছবি দেখতে। দেখি শো শুরু হতে তখনো আধা ঘন্টা বাকি। একটা বেঞ্ছ ফাঁকা পেয়ে টান হয়ে শুয়ে পড়লাম, চোখটা নেমে এসেছিল। হঠাৎ - স্লামালেকুম স্যার চোখ সামান্য ফাঁক করে দেখি ফক্কর ছেলেটা মুচকি হেসে তখনো বলে চলেছে - স্যার, ও স্যার। স্লামালেকুম স্যার।
আরো পড়তে পারেন এখানে-http://www.germanprobashe.com/archives/1251
***************************************************
বুয়েট বালাই শিরোনামের লেখায়
উপরের ঘটনাটি লিখেছেন , সন্দিপন স্যানাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মাইক্রোসফট, ইউএসএ থেকে
***************************************************
প্রকাশিত হয়েছে
জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – অক্টোবর ২০১৪ – ‘আলোর ফেরিওয়ালা’