২. সেদিন কৌশিকের পোষ্টটা পড়ে জানলাম "আমাদের পাঠশালা" নামে এক স্কুলের কথা। সাদিকের পোষ্টটা যদিও আগে এসেছিল সেটা আমার নজরে আসে নি। কৌশিকের পোষ্টের সূত্র ধরে সেটাও পড়া হলো। সব পড়ে মনে হলো আরে এটা তো সেই আন্তর্জাতিক মানের সেই স্কুলের মতোই, কেবল স্কুলটা বঞ্চিত শিশুদের জন্য, যাদের পড়ালেখা করার সাধ হয়তো আছে সাধ্য নেই। মনে হলো যেতেই হবে স্কুলটা দেখতে।
৩. শনিবার আর সবার মতো চলে গেলাম আমাদের পাঠশালায়। জানলাম রুবেলের কথা, তার স্বপ্নের কথা। ছোট একটা বাড়ীতে স্কুলটা। মোট ৭টা ক্লাস, প্রি-স্কুল এরপর ১ম শ্রেণী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী। রুবেলের ইচ্ছা এটাকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা। এরপর ? এরপর যারা আরো পড়তে চাইবে, তাদেরকে সহায়তা করা হবে বাউবি'র এস.এস.সি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে। বাকিদের জন্য কোন ভোকেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা। এই মূহুর্তে ছাত্র সংখ্যা ১৬০ জন, শিক্ষক ৭ জন নিয়মিত আর ৩ জন খন্ডকালিন। প্রতিমাসে খরচ ৭৫০০০ টাকা থেকে ৮০০০০ টাকার মতো। এরমধ্যে শিক্ষকদের বেতন ৪২০০০ টাকা, বাড়ী ভাড়া ১০০০০ টাকা। ছাত্রদের বই-খাতা থেকে শুরু করে সবই দেয়া হয় স্কুল থেকে। ছাত্রদের বেতন ছোটদের ১০ টাকা বড়দের ২০ টাকা। যারা একেবারেই অপারগ তারা পড়ছে বিনা বেতনে। খেলাধূলা থেকে শুরু করে গানবাজনা, ছবি আকা সবই শেখান হয় এখানে।
৪. আগামী বছর থেকে রুবেলের আরো ২টা ক্লাসরুম দরকার। নিতে হবে আরো কিছু শিক্ষক। খরচ বেড়ে যাবে আরো কিছু। ভোকেশনাল ট্রেনিং এর বিষয়টা মাথায় আছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলেও সাহায্য দরকার। এই মূহুর্তে হয়তো চলে যাবে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই, কিন্তু এইসব বঞ্চিত শিশুদের ভবিষ্যৎ কে আরেকটু অর্থবহ করতে হলে সাহায্য দরকার আমার আপনার সবার। প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে দেয়া কোন ব্যাপার না, এমনকি যে আজ ছাত্র সেও তার পকেট মানি থেকে বাচিয়ে প্রতিমাসে দিতে পারে ১০০ টাকা। ক'টা সিগারেট একটু কম খেলে একটা বাচ্চার জীবন হয়তো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে না। এরকম ১০০০ জন যদি ১০০ টাকা করে দেয় তবে রুবেল মনে হয় আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যেই স্বাবলম্বী কিছু তরুণ উপহার দিতে পারবে এই সমাজে। যেটা চলতে থাকবে নিরন্তর।
৫. আমরা কিন্তু গতকাল কেবল কঠিন কঠিন কথা হজম করে আসিনি। গল্প হয়েছে, মুড়ি সাথে সিঙ্গারা, এরপর চা। আরিল নিয়ে এসেছিল তরমুজ। ছিলো অন্যআননের গান। আইরিনকে গান গাইতে বলায় সে বললো "ত্রিভূজ নাই, কি আর গাইবো"। এটা ছিলো দিনের সেরা কমেন্ট। স্কুল থেকে বেড়িয়ে পূরবীর কাছে এক হোটেলে দুপুরের খাবার, আবার আড্ডা আবার সবশেষে কৌশিকের বাসায় চা সহযোগে আরেকটা পাতি আড্ডা। মন্দ কাটেনি দিনটা।