ব্রান্ডিং এর জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ন একটা ব্যাপার হচ্ছে টেলিভিশন এডভার্টাইজিং। একজন মিডিয়ার স্টুডেন্ট হিসেবে আমি জানি, এড দিয়ে মানুষকে টাচ করা অনেক কঠিন একটা কাজ। এক একটা এড কিন্ত পুর্নদৈর্ঘ ফিল্মের চেয়ে কোন অংশেই কম কঠিন নয়। কারন আপনার ম্যাসেজ টা ডেলিভার করার জন্য আপনার হাতে সময় খুবি কম। কাজেই কনসেপ্ট হতে হবে অনেক স্ট্রং।
গর্বের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিভাবান এড মেকার রা কিন্ত এই কঠিন কাজ খুব সহজেই করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই তৈরি হতো বিশ্বমানের এড। বিশেষত টেলিকম কোম্পানির এড গুলা সেইরকম কন্সেপ্ট নিয়ে তৈরি। কিছু এড দেখে মনে হয়, ছোট্ট পরিসরে , এত কম লেন্থে কি করে এত সুন্দর এড বানায় তারা।
কনসেপ্ট বা গল্প নির্ভর এড প্রথম নিয়ে আসে গ্রামীনফোন এবং বাংলালিঙ্ক। এখন প্রায় সব টেলিকম কোম্পানির নিজস্ব ক্রিয়েটিভ ডিপার্টমেন্ট আছে। তাছাড়া দেশের সব খ্যাতিসম্পন্ন এড এজেন্সিগুলা প্রতিনিয়তই চমৎকার সব এড বানিয়ে যাচ্ছে ফোন কোম্পানিগুলার জন্য।
ফ্রি ল্যান্সার এড মেকারদের মাঝে আমি সবসময়ই অমিতাভ রেজাকে এগিয়ে রাখবো। তার এক্সপেরিমেন্টাল শটগুলা আসলেই চমকপ্রদক। সেই সাথে ছবিয়ালের বানানো ফারুকির এডগুলার মাঝে নাটকের একটা ছায়া থাকেলেও খারাপ হয় না।বর্তমানে বেরিয়ে আসছে আবিদ মল্লিক, গাজি শুভ্র,মনিরুল আহসান সহ আরো অনেক মেকার।
এডভার্টাইজিং এজেন্সির মাঝে সবার উপর স্থান দেয়া যেতে পারে এশিয়াটিক, মাত্রা এবং গ্রে কে। তারপরের সারিতেই থাকবে এক্সপ্রেশন, এডকম, মিডিয়াকম,ম্যাক্সাস, ব্রান্ডভেন্ট ইত্যাদি।রেড ডট,ক্যারট এরাও ভালো করছে। এদের ক্লায়েন্ট ও আবার নির্দিষ্ট।
যেমন গ্রামীনফোনের সব কাজ করে থাকে সাধারনত গ্রে।
রবির কাজগুলা করে এশিয়াটিক।
এয়ারটেলের কাজগুলাও এখন থেকে এশিয়াটিক করবে।
সিটিসেলের কাজ করে ছবিয়াল প্রোডাকশন।
বাংলালিঙ্কের কাজ করে ক্যারট কমিউনিকেশন এবং ছবিয়াল ইত্যাদি।
কথা না বাড়িয়ে আসুন দেখে ফেলি খুব টাচি কিছু এড।
শুরু করি একটেল দিয়ে। এই এড টা অমিতাভ রেজার বানানো প্রথম দিকের এড। কত অসাধারন কাজ দেখেন। আমাদের ইয়ং জেনারেশন কে কিন্ত মটিভেট করা যায় এমন এড দিয়ে।
অমিতাভ রেজার কাজের প্রতি আমি ভীষনভাবে দুর্বল।কাজেই তার এড বেশি বেশি আসবে এই পোস্টে।
অনেক মুরুব্বি ডিজুস জেনারেশনের প্রতি অবহেলা দেখিয়ে থাকেন। তাদের প্রতি সবিনয়ে বলতে চাই,তারুন্যকে অবহেলা করে উন্নতি কোনভাবেই সম্ভব নয়।দেশের সার্বিক অবস্থার যদি পরিবর্তন আসে, তবে তা এই জেনারেশনের মধ্য দিয়েই সম্ভব।
ডিজিউস এর এড, অমিতাভ রেজার বানানো। কত ধরনের শট নেয়া হয়েছে তা একটু দেখুন।বিশাল আয়োজন। এই এড টা দিয়ে কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ইউথ কে টাচ করা গেছে।
বাই দা ওয়ে, গায়িকা মেয়েটা কিন্ত মিলার ছোট বোন।
'মা" কে থিম করে শ্রেষ্ট টিভিসি। অসাধারন কপিরাইটিং। শাওনের স্ক্রিপ্ট।
মা কে নিয়ে তো দেখলেন, এবার দেখুন বাবাকে নিয়ে এড। কান্না চলে আসতে বাধ্য।
এই এড টা যতবার দেখি ততবার ভালো লাগে। বন্ধুত্বের কি সুন্দর ভিজুয়াল। এটার ডিরেকশনে ছিলেন অমিতাভ রেজার এক নম্বর এসিস্ট্যান্ট আবিদ মল্লিক।
বাংলাদেশের এডগুলার যদি একটা কম্পিটিশন করা যেত তবে নিসন্দেহে এই এড টা থাকবে সবার উপরে। অনুভুতি নাড়া দিয়ে যায় এই টিভিসিটা। ডিরেক্টর ? সেই অমিতাভ রেজা।
আজম খানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। এই এডটার কপিরাইটিং কার আমার ঠিক জানা নাই। তবে অসাধারন কপি। আমি এক্টুখানি উল্লেখ করি-
" একাত্তরে আজম খানের বন্দুক বেজেছিলো গিটারের মত, আর তারপর তার গিটার বেজেছিলো বন্দুকের মতন।"
অসাধারন না ? বাংলালিঙ্কের ট্রিবিউট টু আজম খান।গুরু তোমায় সালাম।
ওয়ার্ল্ডকাপের থিম নিয়ে রবির এড। এশিয়াটিক ছিলো এজেন্সি। আর ডিরেক্সনে অমিতাভ। সাহস করে এত মানুষ একসাথ করা তার পক্ষেই সম্ভব।
আবার ফারুকির কাজ। ছবিয়াল প্রোডাকশন, এশিয়াটিক এজেন্সি। কন্সেপ্ট টা কিন্ত দারুন।
এই এড টা দেখে জেগে উঠতে ইচ্ছা করে কিনা দেখুন তো। আবারো থিম ইয়ুথ এবং ডিরেকশনে অমিতাভ। এটা কিন্ত আমার অফিসের কাজ। তবে তখনো আমি জয়েন করি নাই।
যারা প্রবাসী অথবা ঢাকায় থাকে পরিবার পরিজন ছেড়ে, দেখুন তো এই এড টি আপনাদের আকুলতাকে ধরতে পেরেছে কিনা ?
মা কে নিয়ে বাংলালিংকের আরেকটি এড। ভয়েস ওভার টা অনেক পারফেক্ট হয়েছে।
বাংলালিঙ্ক স্যরি মা। আমি এই এড টা দেখে দৌড়ে গিয়ে মাকে স্যরি বলেছি। আপ্নারা ??
এটার কপি রাইটিং মারজুক রাসেলের।
বাংলালিংক এর দিন বদলের চেষ্টা এডগুলি আমার বেশ প্রিয়।এই এড সিরিজটি তাদের কর্পোরেট স্লোগানের সাথে বেশ যায়।আসুন দেখি এমন কিছু এড। প্রথমে ফিশারম্যান দের নিয়ে এডটি। এটি তৈরি করেছে কোগিটো মার্কেটিং সলিউশন।
আজাদ প্রোডাক্টস, গ্রান্ড আজাদ হোটেল, রত্নগর্ভা পুরষ্কার এর দ্রষ্টা আজাদ রহমান কে নিয়ে তৈরি এই এড।আমি তার ছেলে ডায়মন্ড এর সাথে কথা বলেছি। আসলেই তার লাইফের ঘটনা এমনি ছিল।
যারা বেলিরোডের আশেপাশে থাকেন,তারা নিশ্চই মনে রেখেছেন ফখরুদ্দিন বাবুর্চি কে। এখনো মনে পড়লে জিভে জল চলে আশে।তার লাইফ চেঞ্জিং নিয়ে এই টিভিসি।
এয়ারটেলের এড। পিপলু আর খানের ডিরেকশন। এশিয়াটিক এজেন্সির সৌজন্যে নির্মিত। কালার টোন এবং স্টাইল দেখে ইন্ডিয়ান একটা ধাচ পাওয়া যায়।
শেষ করি বন্ধুত্ব দিয়ে। টাচ করতে পারে কিনা দেখুন আপনার বন্ধুত্বের দাবিকে ।
এভাবে দিতে থাকলে আসলে অসঙ্খ্য এড দেয়া যায় যার সবগুলাই অসাধারন। অন্য কোন পর্বে আরো সুন্দর সুন্দর সব এড নিয়ে আবারো হাজির হবো আপনাদের মাঝে। ততক্ষন পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।