-তুমি আমাকে আগের মত ভালবাসো না।
হঠাত জুইয়ের এই কথা শুনে আশ্চর্য হয় তারেক। একটু আগে যার জন্য এত সুন্দর গহনা আনলো সে যদি এই কথা বলে তাহলে খারাপ লাগারই কথা। যেই সেই গহনা না। সাড়ে তিন ভরির নেকলেস। মুক্তা বসানো আছে মাঝখানে মাঝখানে। দেখলেই ধরতে ইচ্ছা করে। দামও অনেক পড়েছে। ব্রিফকেসে দুই লাখের মত ছিল। পরে ড্রাইভারকে পাঠিয়ে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বাকী টাকা এনেছে।
তারেক জিজ্ঞেস করে, তোমার কি এটা পছন্দ হয় নি?
-এত সুন্দর গহনা। পছন্দ হবে না কেন?
-তার মানে হয়েছে।
-হুম হয়েছে।
-তাহলে ঐ কথা বললা যে? ভালবাসা কমে গেছে।
জুই গহনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
ওর হাসিটা রহস্যময় রহস্যময় মনে হয় তারেকের কাছে।
তারেক বলেই ফেলে, গহনার দিকে তাকিয়ে হাসছো। মানে বুঝলাম না।
-এম্নেই হাসলাম।
আর কিছু না বলে জুই মাথার চুল আচড়ায়। অনেক লম্বা চুল ওর। যত্ন নিতে বেশ কষ্ট করতে হয়। রাতে ঘুমানোর আগে মাথায় তেল মেখে নেয়। তারপর আচড়ায়।
দুজনে শুয়ে আছে।
তারেক জিজ্ঞেস করে এত শখ করে আনলাম তারপরও গহনাটি একবারও পরে দেখলা না। খারাপ লাগছে।
জুই কিছু বলে না। চুপ করে থাকে।
-কিছু বলছো না যে?
-শুনো তুমি অনেক বদলে গেছো। পালিয়ে যখন আমরা বিয়ে করি মনে আছে? স্বর্ণ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তোমার।
-হুম সেগুলো তো এখন আর নেই। এখন অনেক কিছু হয়েছে আমাদের। কিছুদিনের মধ্যে নতুন আরেকটা ইন্ড্রাস্টি উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।
- আগের অভাববোধের জায়গায় প্রাপ্তিতে ভরে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আগের ভালবাসার জায়গাও আজ বদলে গেছে ব্যস্ততায়, অনভ্যস্ততায়।
-আমি কিছুই বুঝছি না। তোমার মন কি খারাপ?
-নাহ, বাস্তবতা মেনে নিতেই তো হবে তাই না।
তারেক উঠে বসে, তোমার কি হয়েছে খুলে বলো তো, প্লিজ খুলে বলো।
-বিয়ের তৃতীয় দিন তুমি কোত্থেকে একটা গলার চেইন আনলা। কম দামী। ইমোটশেনর। এনে আমার গলায় পড়িয়ে দিলা। সেদিনের চেইনটা অনেক কম দামী ছিল কিন্তু ভালবাসা ছিল। আজ এত দামী নেকলেস আনলে, অথচ একবারও ভাবলে না এটা পড়িয়ে দিই।
তারেক লজ্জা পেয়ে যায়। আগের কথা তারও মনে পড়ে যায়। অর্থ কষ্ট ছিল সত্য কিন্তু কি মায়াবী ছিল সময় গুলো। তারেক বলে, নেকলেসটা দাও তাড়াতাড়ি। ভুল হয়ে গেছে।সরি।
জুই বলে, এই নেকলেস আমি পড়বো না। এটা আমার জন্য ঠিক আছে। উপহার হিসাবে রেখে দিবো।
-বলছি তো সরি। নিয়ে আসো।
জুই গম্ভীর স্বরে বলে, যে ভালবাসা বলে দিতে হয়, স্মরণ করিয়ে দিতে হয় সে ভালবাসা হালকা। হালকা ভালবাসা ভাল লাগে না। আমি এটা পড়বো না।
আরো কয়েকবার অনুরোধ করে তারেক। কিন্তু জুই পড়ে না।
অনেক জেদী মেয়ে জুই। এই জেদের কারণেই তারেকের সাথে বিয়ে হয়েছে ওর। আর ওর সাথে বিয়ে হয়েছেই বিধায়ই তো জীবনটা এত সুন্দর হয়েছে।
জুই যা একবার করবে না বলে তা কোনভাবেই তাকে দিয়ে করানো যায় না। চুপ হয়ে যায় তারেক।
নেকলেসটা দুজনের মাঝখানে পড়ে থাকে।
যখন লিখছি রাত ২.৪০। ২৭ সেপ্টেম্বার।