somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টমটম ভ্রমণ

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ৯টা বাজবে একটু পর। নামাজ পড়ে এসে কম্পিউটার অন করে বসলাম। যথারীতি আগপিছ না দেখে ব্লগে ঢুকে পড়লাম। নতুন মন্তব্য গুলো দেখছি। এসময় মোবাইল এল। আরে কোথায় তুই চলে আয় তাড়াতাড়ি মালঞ্চের সামনে। হুম মনজুর কল দিয়েছে। ঢাকা ডেন্টালে পড়ছে। অনেক দিন পর বান্দরবান এসেছে। আমরা এক সাথে প্রাইমারী লেবেল হাই স্কুলে পড়ছি।

তা গেলাম। দেখি ফ্রেন্ড সার্কেলের আরো পাঁচজন আছে। দেখলাম হাতে প্যাকেট। প্যান্ট কিনেছে। এরিমধ্যে টমটম যোগাড় করা হয়েছে। সাথে একটা মোটর সাইকেল। বান্দরবানে টমটম এটা অনেক বেশি প্রচলন হয়ে গেছে অতি অল্প সময়ে। টমটম হচ্ছে ব্যাটারী চালিত তিন চাকার গাড়ি। ড্রাইভারকে বিদায় জানিয়ে টমটমের চালকের আসনে এক বন্ধু। সে চালানো শুরু করল। শুরু হলো আমাদের বান্দরবান ঘোরা মিশন।

আস্তে চালালে আমরা বলি জোরে চালাতে। আবার জোরে চালাতেই লাগলেই ভয় করে। হালকা গাড়ি। কোথায় গিয়ে উড়ে পড়ে। তাহার উপর রাশেদ জানায় আজ পেপারে দেখছে একটা প্রাইভেট কারকে ট্রাক মেরে দিয়েছে। পাঁচজন স্পট ডেড। ভয় লাগে। ঈদের আগে আহত হওয়ার ইচ্ছা কারো মধ্যে নেই। তার উপর বান্দরবানের রাস্তা আঁকা বাঁকা। জোরে চালানো শুরু করলে আমরা বলি, ঠিক আছে ভাই জোরে চালাতে হবে না, আস্তেই চালা।

রাসেল চালাচ্ছে। তার পাশে ফারুক বসা। দেখি কিছুক্ষণ পর পর ফারুক ইয়ো ইয়ো করছে। কিরে কাহিনী কি? আমরা জিজ্ঞেস করি ও উত্তর না দিয়ে আবার ইয়ো ইয়ো করে উঠে। আমরা তো অবাক।

পরে জানা গেল টমটমের হর্ণ কাজ করছে না। তাই হর্ণের পরিবর্তে ম্যানুয়াল ইয়ো ইয়ো করা হচ্ছে। কারণ জেনে আমরা হাসতে হাসতে শেষ। টমটম চলছে। তার চেয়ে দ্রুত চলছে আমাদের আড্ডা। ভ্রাম্যমান আড্ডা অনেক মজার। কে কি করছে, কোন মেয়ের সাথে রিলেশন হলো, কোন বন্ধুর অধঃপতন, কার উন্নতি এসব আলোচনা চলে।

বান্দরবানে ২ নং সাংগু নদী ব্রিজে গিয়ে থামানো হলো টমটম। আমরা নামলাম। ঝিরিঝিরি বাতাস। নিচে হালকা গতিতে শব্দহীন পানি যাচ্ছে। পাশের বিল্ডিংয়ের আলোর হালকা ছিটা নদীর পানিতে। রহস্য রহস্য লাগে অন্ধ নদীটাকে। ব্রিজের লাইটগুলো বন্ধ। তবে চারদিকে আলো আছে। বান্দরবানে রোজার মাসে বিদ্যুত অনেক বেশি লক্ষী হয়ে গেছে। এরকম যদি সব সময় থাকতো।

ব্রিজে ট্রাক যায়। ট্রাক যাওয়ার সময় ব্রিজ অনেকখানি কেঁপে উঠে। স্প্রিং দেওয়া আছে। যখন গাড়ি যায় তখন অনেক মজা লাগে। ইশ সারাক্ষণ যদি গাড়ী যেত কি মজাই না হতো। বান্দরবান যে কেন এত গাড়ি কম!!

হঠাৎ মনজুরের বাথরুম পায়। ব্রিজের আশে পাশে তা অনিরাপদ। হোন্ডা করে ব্রিজের ঐ মাথায় গিয়ে কাজ শেষ করে আসে। উম শান্তি। কিন্তু এসে কঠিন একটা জিনিষ বলল। রাসেলের বড় ভাইকে বন্ধুদের সাথে ব্রিজের ঐপারে বসা দেখছে। সুতরাং এখানে থাকা যাবে না। আবার আমরা টমটমে উঠে বসি। এবার আমাদের গন্তব্য পুলিশ ক্যান্টিন। বান্দরবান সদর থানার পাশে। অনেক সুন্দর করে ক্যান্টিনটি করা হয়েছে। আমরা সেখানে ঢুকে গরম গরম চায়ের অর্ডার দিই।

অর্ডার দেওয়ার পর আমরা বসে আছি। কথাবার্তা চলে। দেখি আড্ডায় প্রভা অপূর্ব ব্যাপার উঠছে। মুচকি মুচকি হাসি আমি। বেশ কিছুক্ষণ পর চা আসে। চা নিয়ে যে এসেছে সে অল্প বয়স্ক। আমরা বলতে যাচ্ছি কিরে এত দেরি কেন?
তার আগে সে চা দিতে দিতে হড় হড় করে বলে যায়, রং শেষ হয়ে গিয়েছিল। আপনাদের জন্য আবার নতুন রং বসালাম। এক্কেবারে ফ্রেস চা পেয়েছেন।

হুম চা টা ভালই লাগে। মনজুর বলে ১৭ তারিখ ওর জ্যাঠাতো ভাইয়ের বিয়ে। অবশ্যই যেতে হবে। লোভ লাগায় ও। গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠানে ব্যান্ড আসবে। ডিজে আসবে। আর ওদের ওদিকে মেহেদী অনুষ্ঠান অনেক বেশি মজা হয়।

এরপর আরো যোগ করে, মেয়ের বাবা ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতা। সুতরাং সেরকম আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান করবেন।

লোভ আমাদের গ্রাস করেছে মনে হয়। কেননা যাওয়ার ব্যাপারে দেখা গেল আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে বন্ধু মহলে।

চা খেয়ে আবার টমটম। এবার আমাদের গন্তব্য বাস স্টেশন। সেখানে দেখি বেশ কিছু বড় নতুন বাস। আগামী ৮ সেপ্টম্বার কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের পর থেকে বড় গাড়ী গুলো যাবে। ভাবতেই ভাল লাগছে। চিটাগাংয়ের গাড়ী গুলো ছিল ছোট যেহেতু আগের লোহার ব্রিজটাতে বড় গাড়ী ঢুকার সুযোগ ছিল না। বিরক্ত লাগত ভ্রমণ। পা রাখতে কষ্ট হতো। এখন স্বাধীন ভাবে পা রাখা যাবে।

সেখান থেকে আবার বাজার। বাজার থেকে এবার সিদ্ধান্ত হয় বালাঘাটা যাওয়া হবে। আড্ডায় আড্ডায় আমরা চলি। সাংগু ব্রীজ পুরানটা পার হয়। আর্মির এলাকা শুরু। দুইজন আর্মি চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। চারদিকে স্তব্ধতা। সে স্তব্ধটা ভেঙে আমাদের টম টম এগিয়ে চলে। বালাঘাটায় সে আকর্ষণীয় স্বর্ণ মন্দির। বান্দরাবানে ভ্রমণে যারা আসে তারা স্বর্ণ মন্দিরে ঘুরে আসেন। আমরা নামলাম। দুইজন সিগারেট খায় তারা সিগারেট নিয়ে জ্বালায়। আমরা মুখ শুকনা করে বসে থাকবো না না। আমরা সেন্টার ফ্রেশ নিয়ে চিবুনি শুরু করি।

এরিমধ্যে চলে গল্প। বান্দরবানের রাজনৈতিক ভিতরের গল্পগুলো শোনা হয় অনেকটা।

কিছুক্ষণ থাকার পর আবার গাড়িতে উঠা। রাতে বাসার সামনে নামিয়ে দেয়। বিদায় জানিয়ে চলে আসি। দুই ঘন্টার বান্দরবানে টমটম ভ্রমণ অনেক ভাল লাগল। অনেক দিন মনে থাকবে।
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×