somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়্যারইন ব্লগে আমার তিনটি বছর

২৫ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার পরিসংখ্যান

* পোস্ট করেছেন: ৮৩টি
* মন্তব্য করেছেন: ১৯৯৮টি
* মন্তব্য পেয়েছেন: ১৪৪৫টি
* ব্লগ লিখেছেন: ৩ বছর ৪ দিন
* ব্লগটি মোট ৪৯৭৫০ বার দেখা হয়েছে
:|

আমি সাঈফ শেরিফ, যদিও পড়ার অবহেলা বা ভ্রমবশত অনেকেই সাঈদ সম্বোধন করেন।নাম পড়ার ভুলে জনপ্রিয় ব্লগার 'সাইফ সামির' বা 'শেরিফ আল সায়ার' মনে করে মন্তব্য করেছেন বেশ ক'জনা। আপনাকে যদি বলা হয় কিছু ব্লগারের নাম বলতে আপনি হড়বড় করে টানা ৫০০ জন ব্লগারের নাম বলতে পারবেন এবং আমি হলফ করে বলতে পারি তাতে আমার নাম থাকবেনা। প্রোফাইল হিটের সংখ্যাটিও সেই সত্যতার ইঙ্গিত দেয়। আদর্শ বা চেতনা নিয়ে লাঠালাঠি বা বন্ধুত্ব করার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্লগে আসিনি। ব্লগ লিখা একান্তই নিজের জন্য, লিখে শান্তি পাই, তাই লিখি, পাঠক না পেলেও দুঃখ নেই। কোন প্রকার কোন্দলে না গিয়ে একটি নিক বাঁচিয়ে রাখা খুব কষ্টকর না।

ব্লগ বলতে আমার ধারণা ছিল 'অনলাইন দিনলিপি' লেখা, তাতে যুক্তি, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা, প্রচলিত ধ্যান ধারণার সাথে মতৈক্য থাকতে হবে এমন কড়া বিধি নিয়েধের কথা জানা ছিলনা। লোক লজ্জা, ভয় ডরকে পাশে রেখে মনের অবচেতন অংশের কথা গুলো তুলে আনার চেষ্টা করতাম। ভোর রাতে ঘুমের ঘোরে ব্লগ পড়তে গেলে সেই অবচেতন অংশে আঘাত পড়তো, হুট করে বেফাস, বিব্রতকর মন্তব্য করে পরে লজ্জাও পেয়েছি। প্রতিটি মানুষের মাঝেই একটা নোংরা - অসুস্থ অংশ থাকে যা প্রকাশে সে বিব্রত হয়, এমন কি তার অস্তিত্বের কথা স্বীকারও করতে চায়না। কিন্তু সেই নোংরা দিকটাও প্রকাশের একটা তাড়না থাকে কারো কারো। সাঈফ শেরিফের সেই তাড়নাটা বেশিই ছিল কোন প্রকার সংকোচ না করে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে না বলে গোপনতম প্রতিক্রিয়াগুলো নিজের ব্লগে প্রকাশ করাই কাল হয়ে দাড়িযেছে। ষোল আনা ভদ্রলোকের নিপাট নিষ্পাপ মুখোশ পরে, লোকাচারের কথায় তাল দিয়ে নিজের অন্তর্গত সত্ত্বা, অনুভূতিকে শ্বাসরোধ করে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য, সুবিধা আর পেলামনা। সেকেলে একজন হিসেবে ব্লগিং এর ব্যাপক সংজ্ঞা, ছক বাধা নিয়মের সাথে অভ্যস্ত হতে পারলামনা।

কাগজে কলমে দিন লিপি লেখার সমস্যা অনেক, একে ভাল কাগজের দুষ্প্রাপ‌্যতা আরেকদিকে লিখতে গিয়ে ভাবটা ভাষায় তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতায় দিস্তার পর দিস্তা কাগজ মুচড়ে বল বনিয়ে আস্তাকুড়ে ফেলার যন্ত্রণা। দলিল আকারে সময় তারিখ সমেত লেখাটা থাকলেও তা উই পোকার দখলে যাবার প্রবল সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়না। পাঠক না পেয়ে শুধু লিখে শান্তি পাওয়া যায়,কিন্তু সাথে পাঠকের মন্তব্য লেখককে ভিন্ন মাত্রায় ভাবতে শেখায়। সে জন্যই ব্লগে আসা। এই ব্লগ আমাকে আমার বিচিত্র স্বজাতি চিনিয়েছে যাদের কেউ কেউ ভদ্রতার মুখোশ ধরে সমাজে ঘুরে বেড়ান কিন্তু অন্তরে ধারণ করেন 'সাম্প্রদায়িকতা, বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার' বিষ যেটা ছদ্ম নিকে এসে ব্লগে ঝেড়ে শান্তি পান।সামহোয়্যার ইন আমাকে লিখতে শিখিয়েছে, আমি দেখেছি লেখার বৈচিত্র্য আর বিভিন্ন পেশা রুচির মানুষ যেটা নিজস্ব বন্ধু-আত্মীয়ের গন্ডির মাঝে থেকে কোনদিনও পাওয়া সম্ভব নয়। সম্ভাব্যতার সাধারণ বিন্যাসে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ মধ্য পন্থী যারা, 'ধর্ম, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি' কোন বিশেষ দিক নিয়ে বিশেষভাবে 'অবসেসড' নন।

অনেক ব্লগার আছেন যারা নিবন্ধনের ২/৩ বছর পরেও শুধুই পাঠক । সে তুলনায় সংখ্যালঘু যে লেখকরা আছেন তাদের কারো কারো মতাদর্শ প্রচলিত ধ্যান ধারণার সাথে যায়না বলে গণ বিদ্রোহ করে গলা ধাক্কা দিয়ে ব্লগ থেকে বের করে দিবার চেষ্টা চলে। সংখ্যা গরিষ্ঠের মতের সাথে নিজের মত যদি মিলেই যায়, তবে তা আলাদাভাবে ব্লগে লিখার কী প্রয়োজন! বিনোদন ও বিরুদ্ধমত জানার খোলা মন রেখেই তাদের থাকতে দিন। ভাবাদর্শের বৈচিত্র্যও ব্লগের সৌন্দর্য ।

ধারাবাহিকভাবে ব্লগ থেকে পাওয়া এ যাবৎ অভিজ্ঞতার সারমর্ম দাড় করানোর ইচ্ছা রাখছি।

পিছন ফিরে দেখা

তিন বছর আগে ব্লগের উপরে বাম কোনায় শীর্ষ ব্লগারের তালিকা থাকতো, তার উপরে থাকত চলতি সপ্তাহের সর্বোচ্চ পোস্টকারী ব্লগারের তালিকা। ব্লগারদের সংখ্যা কম বলেই ওটা সম্ভব ব্যাপার ছিল। সে কালের শীর্ষ ব্লগার ছিলেন শোহেইল মোতাহির চৌধুরী। দুর্দান্ত এ ব্লগার আর লিখেন না। নিজ অভিজ্ঞতায় জামাত-শিবিরের একেবারে ভিতরের কূটনীতি চমৎকার বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন তার ধারাবাহিক লেখায়। বিখ্যাত ব্লগার ত্রিভুজকে চিনেছি আরো অনেক পরে । সামহোয়ারইনকে চির বিদায় জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সে কালে। অনেকেই সমবেদনা দিয়ে ফিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। ব্যাপক হিট পড়ে সে পোস্টে এবং আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ব্লগে। প্রযুক্তির টুকিটাকি আর বেপরোয়া মন্তব্য করে সর্বোচ্চ হিট ধারী ব্লগার হবার পিছনে গালি হজম করে যাবার বিরল ক্ষমতা ভূমিকা আছে বলে মনে করি। প্রবল বিতর্ক আর গালির পরেও ত্রিভুজের পোস্টে প্লাসের সংখ্যা গুলো অবাক না করে পারেনা।

প্রথম যুগের ব্লগার

এক কালের খ্যাতিমান সেক্যুলার ব্লগার তীরন্দাজ, ধূসর গোধূলি, অন্যমনষ্ক শরৎ দের গতিবিধি দেখা যায়না। নাহিদাকে নিয়ে লিখা অণৃন্যর পোস্টের পর তাকে আর দেখা যায়নি ।বিখ্যাত ব্লগার আড্ডাবাজ বহুদিন দৃশ্যমান থাকার পর হারিয়ে গিয়েছেন। আলাদা যত্ন নিয়ে পড়ি প্রাগৈতিহাসিক যুগের ব্লগার অপবাকের প্রাগৈতিহাসিক বিষয়াদি নিয়ে পোস্ট গুলো। জার্মানি থেকে বহু পুরনো ব্লগার ফ্রুলিংক্সের লেখা গুলো ভাল লাগে। মিথিলা নামের এক ব্লগার সে সময়ে এতটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল যে নোটিশবোর্ড তদন্ত সাপেক্ষে এ মর্মে পোস্ট দিয়েছিল যে মিথিলা একটি ভার্চুয়াল চরিত্র।

সেকালের মন্তব্য করার দিক থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগার ছিলেন চোর। মার্কিন প্রবাসী ও পি এইচ ডি ধারী এ ব্লগার অনেক ব্লগ যুদ্ধের সাক্ষী ও অংশীদার। এ ছাড়াও প্রবীণতম ব্লগারদের মাঝে মধ্য ডান পন্থী ব্লগার শাওন, প্রগতিশীল নারীবাদী রাগ ইমন, স্বনামধন্য হযবরল, রাসেল......, জামাত পন্থী ধানসিঁড়ি , প্রতিক্রিয়াশীল এ এস এম মাহবুব মোরশেদ, সাংবাদিক মাহবুব মোরশেদ (মতান্তরে মামো), তেলা পোকা,অলৌকিক হাসান,হাসান বিপুল, কেমিক্যাল আলী , পথিক!!!!, সুফীবাদী সাদিক মোহম্মদ আলম (ক্যালিফোরনিয়ায় পিএইচডি রত) এর উপস্থিতি মনে পড়ে বেশ! ত্রিভুজের বিপজ্জনক ওয়েব লিংক নিয়ে এ এস এম মাহবুব মোরশেদের পোস্ট ও তর্ক যুদ্ধ ছিল চমৎকার বিনোদন। সর্ব প্রথম ব্লগার হিসেবে লক্ষাধিক হিট পায় ত্রিভুজ।

পরবর্তী কালে হারাধন, অচেনা বাঙালি, ডাক্তার আইজুদ্দিন, হোসেইনরা এ টিমের হাল ধরেন। আমি সাগর নামের এক দুর্দান্ত ব্লগার জামাতিদের বিরুদ্ধে দলিল সহকারে ব্লগ যুদ্ধে নামেন | ত্রিভুজ এর মহা ফ্যান হিসেবে কাউন্টার মিশনে এ টিম থেকে নামানো হয় অশ্রু নামের এক ব্লগার কে | ফজলে এলাহী, নুরে আলম, মাহমুদ রহমান দের বিরুদ্ধে গণ বিদ্রোহ ও উপহাস চলে ব্লগে | এরই মাঝ খান থেকে মহাকবি মাইকেল মেহেদী গুরুর আবির্ভাব ঘটে | চোর তার বিদায়ী পোস্টে বিস্ময় প্রকাশ করে গিয়েছিলেন ত্রিভুজের গালি খেয়ে যাবার অসীম ক্ষমতা দেখে। দি এ টিম ও ত্রিভুজ নেটওয়ার্কের মাঝে ব্লগীয় যুদ্ধে আত্মঘাতী নিক স্কোয়াডের অনেক খ্যাতিমান ব্লগার শহীদ হন । সে যুদ্ধের কিছু বুলেট আমার গায়ে এসেও বিধে। ব্লগার হট্টগোল, দ্রোহী, হারাধন, লাল মিয়া,মেন্টাল, রুশো কে ভুলি কি করে? চোর চলে যাবার পর আমার পিছনে ছায়ার মত লাগেন অমিত, ইয়র্কার, অরণ্যক যাযাবর, অচেনা বাঙালি, নির্বাক সুশীল, জেনারেল, রবোট (বর্তমানে নিকটি ব্যানড, জানিনা আজকের রোবট সেই রবোট কিনা!) প্রমুখ। ত্রিভুজ, হাসিব, অমি পিয়াল, এস্কিমোদের ব্লগে ভুল করে ঢুকে পড়তাম মাঝে মাঝে। কৌশিক শুরুর দিকে মুখ পরিচয়হীন থাকা কালে মাঝে মাঝে আসতেন আমার ব্লগে। হেন মানুষের ব্লগ নাই যেখানে রাশেদের পা পড়েনি। আমার ব্লগে আসতেন খোচা খুচি করতে, মশকরার ধরনটা ধরতে সময় লেগেছিল এই যা। ভাস্কর চৌধুরী, জামাল ভাস্কর, মুজিব মেহেদী, মুকুল, সারওয়ার চৌধুরীদের ব্লগ কদাচিৎ পড়া হয়।

আব্দুর রাজ্জাক শিপন, কালপুরুষ এর কবিতার পোস্ট গুলো মাঝে মাঝে পড়া হয় | এ টিমের তোপের মুখে পড়া দুজন মার্কা মারা ব্লগার হলেন বিডি আইডল ও আশরাফ রহমান | একরামুল হক শামিম এর জনপ্রিয়তা দেখেই গেলাম, পোস্ট পড়া হলনা | অনুভুতি শূন্য কেউ একজন নামের এক ব্লগার আসতেন মাঝে মাঝে, সম্ভবত তিনি ব্লগার সৌরভ | সমালোচনাকারী ও মদন নামের দু ব্লগার প্রায় হারিয়ে গেলেন | সম্প্রতি সৌম্য ও আসিফ এন্তাজ রবি হিট পোস্ট দিয়া দৃষ্টি কেড়েছেন |


"ব্লগ ভরিয়া গেল হরিদাস পালে", "অমুকের কমেন্টে বিপ্লব", "ঠেলা", "মাইনাস দাগানো হল", "আগুন পোস্ট", "শুভ ব্যান মুবারক"-এক কালে ব্যাপক ব্যবহৃত শব্দ গুলো এখন আর দেখা যায়না।

ব্লগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

ব্লগে ২য় বিশ্ব যুদ্ধ হয় জামাত নেতার পুত্র ওয়ামিকে ব্যান করা নিয়ে। সেই যুদ্ধে ব্লগের দুই দিকপাল রাশেদ ও এস্কিমোকে মুক্তির দাবিতে চলে কলম বিরতি, পুরো ব্লগের কার্যক্রম থমকে গিয়েছিল সে দিন গুলোতে। যুদ্ধের মাঝে রাজাকার সমর্থনকারী চার জন সুশীলের তালিকা করা হয়। ব্রাত্য রাইসুর মহা বিতর্কিত পোস্টে রাত ভর মরীয়া বিতর্ক করে লাইম লাইটে আসেন দুর্দান্ত ব্লগার মানস চৌধুরী। 'রাজাকার সমর্থনকারী সুশীল ট্যাগিং' নিয়ে স্বনামধন্য ব্লগার ফাহমিদুল হক এক ঐতিহাসিক পোস্ট দেন।

যুদ্ধ আর মডারেশনের চাপে পড়ে সেকালের অনেক নিন্দিত ও নন্দিত ব্লগারদের আজ 'আমার ব্লগ', 'সচলায়তন', 'প্রথম আলো' ব্লগে দেখতে পাওয়া যায়।

সাঈফ শেরিফ একজন মানসিক রোগী

কথাটি এত শত ব্লগার এত বার লিখেছেন যে, তাদের খাটুনি কমাতে নিজের প্রফাইলে কথাটি সেটে দিয়েছি। "ছাগু, নাস্তিক, রাজাকার, জামাতী" পরিবর্তে মানসিক রোগের বিরল অভিযোগ এসেছে বার বার। সবার প্রথম মার্কিন প্রবাসী এক যন্ত্র কৌশলী একটি পোস্ট সহকারে সাঈফ শেরিফের মানসিক রোগের প্রকোপ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেন। কারণ হিসবে উল্লেখ করেন "অবদমিত কাম", সেই সাথে "ঔষধ পথ্য ও চিকিৎসকের" শরণাপন্ন হবার পরামর্শ দেন এবং বলেন, "মস্তিষ্ক ঠিক করতে না পারলে মোবাইল কোম্পানিতে চাকুরি হবেনা, কোন মেয়েও বিয়ে করবেনা।" তার পাশাপাশি তিনি শেরিফের জন্ম পরিচয়কে প্রশ্ন বিদ্ধ করে গালি দিয়ে বসেছিলেন। যাতে জোরালো সহমত জানান জামাত পন্থী খ্যাতিমান আরেক ব্লগার। সেই জামাতী ব্লগারের সাথে পুরনো ব্যক্তি শত্রুতার জের ধরে নিজের নির্বিবাদী নিভৃতচারী খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল আক্রমণাত্মক পোস্ট দিয়ে।

এ টিমের পক্ষ থেকে আমাকে ছাগু উপাধি না দিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আইজুদ্দিন প্রমুখকে নিয়োগ দেয়া হয়। মোবাইল চুরি করার মানসিকতা নেই এবং বর্ডারে বি এস এফের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ উটুল, জেনারেল, শমসের প্রমুখ ব্লগার সাঈফ শেরিফের কারণে গাধার উপর অপবাদ নেমে আসার অভিয়োগ আনেন।

এখনও ব্লগ আছে বেঁচে

জামাত পন্থীদের বিরুদ্ধে ব্লগারকূল সোচ্চার হলেও নারী-জামাতীদের ব্যাপারে সুধীজনের দৃষ্টি কটু নমনীয়ভাব আমাকে হতাশ, বিস্মিত করেছে। সহোদর বোন ও কাজিনের মাঝে সম্পর্কগত তফাত করার কারণে এক খ্যাতিমান বিপ্লবী ব্লগার বলেছিলেন, "এ ধরনের অসুস্থ মানসিক বিকার গ্রস্থ লোক ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাবতেই রক্ত হিম হয়ে আসে।" তাদের কেউ কেউ এই শিক্ষক নামের পশুটাকে পিটিয়ে পশ্চাৎদেশ লাল ও করার তীব্র অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন। বিষাক্ত মানুষ, তামিম ইরফানদের ব্লগ শেষ কবে পড়েছি মনে পড়েনা। নাফিস ইফতেখারের ফান পোস্ট মাঝে মাঝে পড়া হয়। ছোট ভাই ফারহান দাউদ আর মেহরাব শাহরিয়ারের লেখার মুগ্ধ পাঠক আমি। সব সময় ভাল লাগে উদাসী স্বপ্নের পোস্ট গুলো। এছাড়াও রহস্যময় কানাবাবা তো আছেনই।

বহু পুরনো ব্লগার জ্বিনের বাদশা অতি সম্প্রতি মনের ভুলে একবার আমার ব্লগে এসে আরেক মন্তব্যকারীকে সহমত জানিয়ে গিয়েছিলেন। সেই পোস্টের উস্কানিতে একটা বিপ্রতীপ পোস্টেও ছুড়ে দিয়েছিলেন। তনুজা, কাকন, একলব্যের পুনর্জন্ম, মেঘ, ফারহানা আহমেদ, উন্মনা রহমান প্রায় সমচিন্তা চেতনার লেখক। এদের অন্তত দুজন আমার পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন, আরেকজন শুধু একবার ঢু মেরে যান। একইভাবে মনজুরুল হক, নাজিমউদ্দীন, মনির হাসান একই ধ্যান ধারণার ব্লগার। এক কালের বিখ্যাত ব্লগার মানবীকে আর তেমন দেখা যায়না। নুশেরা ম্যাডাম প্রায়ই আসতেন আমার ব্লগ পড়তে, এখন আর ব্লগে তেমন দেখা যায়না। অচেনা সৈকত ভাই ভালই লিখেন , তবে মত বিরুদ্ধ প্রকাশে এতটা অনমনীয় না হলেও পারেন।

ফেইসবুকে একে অপরের বিষয় চিন্তাধারা বিনিময়ের আগ্রহ হিসেবে আরেক খ্যাতিমান ব্লগার কুম্ভকর্ন ওরফে নরাধমের সাথে পরিচয়। মেধাবী, সাহসী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কিন্তু একটু মাথা গরম প্রকৃতির মনে হয়। তুরস্কের কামাল পাশাকে নিয়ে লিখা চমৎকার একটি পোস্ট তিনি ড্র্রাফট করে ফেলেন জামাতীরা প্রিয় পোস্টে রাখছে বলে। ব্যাপারটি নিয়ে আমার হতাশার কথাও তাকে জানিয়েছি। শত্রুর ফায়দা আদায়ের হিসেব নিকাশ করে নিজের ন্যায়বোধ থেকে ব্যক্তিমত প্রকাশ করতে মাঠে নামিনা আমি ।

আদর্শগত মত পার্থক্য থাকলেও জেবতিক আরিফের লেখার মানকে অশ্রদ্ধা করবোনা। ব্লগের প্রাথমিক যুগে ভেলরি টেলরকে নিয়ে লিখা ঐতিহাসিক পোস্টির কথা ভুলবার নয়। সর্বজন শ্রদ্ধেয় গুরুদেব রাগিব হাসান ভাই তো আছেনই। যীশু দর্শন প্র্র্রোফাইল ফটোর অধিকারী বিতর্কিত ব্রাত্য রাইসুর কিছু লেখা ভাল লেগেছিল। আরেক জনপ্রিয় ব্লগার বিবর্তনবাদী আমার পোস্ট পড়েই বুঝতে পেরেছিলেন যে আমার বাস্তবতার জ্ঞান খুব অল্প এবং সেটা পাঠ্য বইয়ের বাইরে জানা শোনার অভাবের কারণেই। রহস্যজনক লাগে 'লোকাল টক' আর 'ফিউশান ফাইভ' নামের দুইজনকে। প্লাস, মাইনাস, হিট, মন্তব্য সব দিক থেকে রেকর্ড ভঙ্গ করে আরেক মহা বিতর্কিত ব্লগার আলেকজান্ডার ডেন্ড্রাইট।

প্রিয় ব্লগার

প্র্রিয় ব্লগারদের আলাদা তালিকা করবো কারণ তাঁদের লেখা, মন্তব্য, যুক্তি আমার ব্যক্তিমতকে প্রভাবিত করেছে, নতুনভাবে ভাবতে ও লিখতে শিখিয়েছে। অভদ্র ভাষায় বলতে খানিকটা মগজও ধোলাই হয়েছে তাঁদের দ্বারা।


১. ফাহমিদুল হক

২. ড. মানস চৌধুরী

৩. আহমাদ মোস্তফা কামাল

৪. আনোয়ার সাদাত শিমুল

৫. রিফাত হাসান

৬. ফারুক ওয়াসিফ


নির্বিবাদী চেতনা ও নিরপেক্ষ লেখার পরেও অতি সম্প্রতি ব্লগারদের কাছে থেকে অভিযোগ এসেছে সাঈফ শেরিফ 'হিডেন ছাগু' এবং মেয়ে দেখলেই 'লুল ফেলায়' এবং নারীবাদের বিরুদ্ধে যাবার কারণে 'আঙ্গুর ফল টক' জাতীয় কারণ। মডারেশনের শুরু থেকেই আমি নিরাপদ ব্লগার। ব্লগে ভাল লাগা মন্দ লাগা নির্ধারিত হয় 'আমার চেতনার পক্ষে লিখল না বিপক্ষে লিখল' এ ধরনের মানদন্ড থেকে। পথভ্রষ্ট ভাবলেও ধর্ম নিয়ে নাস্তিকের ধর্ম কথার শ্রম ও লেখা দেখে আমি মুগ্ধ।জামাতী অভিযোগ সত্ত্বেও ফারযানা মাহবুবারা ধর্মের পক্ষে যেসব পাল্টা বক্তব্য দাড় করান সে শ্রমটা দল নিরপেক্ষ ধার্মিক ব্লগারদের তেমন করতে দেখা যায়না। যদিও জ্বিনের বাদশা, কাঙ্গাল মুরশিদের মত কেউ কেউ আছেন। লেখাজোকা শামীম, বাঙ্গালের পরিশ্রমী লেখা পড়া হয়।বিরক্ত লাগে ফকির ইলিয়াসের পোস্ট গুলো। নাদান আর চিকন মিয়াদের ব্লগে দেখা যায়না। জেরি, চানাচুর, আউলা দের পোস্ট গুলো তাদের বন্ধুত্বের ত্রিভুজ বলয় নিয়ে, যেখানে আম জনতার মন্তব্য না করাই শ্রেয়।

কথা বাকি থাকে

পুরনো নিকের উপর ভীষণ মায়া পড়ে যাওয়াতে নতুন নিক নিবার ঝামেলায় যাইনি। মনের মাঝে কর্কট রোগে বিস্তার বা প্রকোপ দেখতে যারা মাঝে মাঝে সাঈফ শেরিফ ব্লগে আসেন তাদের ধন্যবাদ। কোন দিন কাউকে গালি না দিলেও মজা করে একটু গুরুগম্ভীর কিন্তু অপক্ক ধারণা থেকে অনেকের ব্লগেই মন্তব্য করেছি। "হোয়াট হ্যাপেনস ইন ব্লগ স্টেইস ইন ব্লগ" মনে করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি নিয়ে ভুলে যাবেন সেগুলো আশা করি।

সময় ও বয়সের প্রয়োজনে আমাকেও পুরোপুরি ব্লগ ছেড়ে দিতে হবে এক কালে, সে দিন ঘনিয়ে আসছে সেটি বেশ টের পাই ইদানিং।


ই-মেইল/ ফেইসবুক সন্ধান:: saif.sherif@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ২:৩৫
৯৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইন ২০২৫: ভারতের মুসলিম নিধন নীতির আইনগত চাবিকাঠি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


ভারত আজ আর গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়—আজকের ভারত এক হিন্দুত্ববাদী নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রকল্প, যেখানে সংবিধানকে অস্ত্র বানিয়ে একের পর এক সংখ্যালঘু নিধন চালানো হচ্ছে। 'ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইন ২০২৫' তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ওরিয়ানা ফাল্লাচির সাক্ষাৎকার - Sheikh Mujibur Rahman's interview with Oriana Fallaci

লিখেছেন জনাব রায়হান, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৫

(Interview with History বই থেকে, পৃষ্ঠা ১২২-১৩৫, বাংলায় ভাবানুবাদ)

"১৯৭২ সালে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফাল্লাচি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একটি তীব্র ও বিতর্কিত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তার বই Interview... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫০

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

'সাইড লাইনে সাক্ষাৎ" দেখে যারা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত, আনন্দে উদ্ববেলিত....কেউ কেউ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গলাবাজি করছেন- ভারত ভুল বুঝতে পেরেছে, ডক্টর ইউনুস স্যারের কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস বিদেশে দেশকে করছেন অপমান-অপদস্থ

লিখেছেন sabbir2cool, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬


দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×