আমরা বাসায় বসে অনলাইনে বা বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ মিডিয়ার টক শোতে অনেক ঝড় তুলতে পারি কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার মত একটা বড় পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার যাদের উপর ছিল তাদের জন্য কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। আজকে আমি আপনি যে মতামত দিচ্ছি সেটা ভুল হলে কিছুই হবে না। কেউ কেউ হয়ত তাদের পোস্ট মুছে দিবে! অনেক হাস্যরস, ট্রল হবে ফেসবুকে। কয়েক বছর পর কে কী বলেছে সেটা কারো মনেও থাকবে না। কিন্তু যারা এখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট বলা যায় এই সিদ্ধান্ত। এখন এমন একটা সময়, এ সময়ে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হত, সেটার পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হবে সেটাই স্বাভাবিক।
স্বাভাবিকভাবে আমরা যা করি বা করতাম, এই সময়ে তা করা যাবে না। এটা সবার বুঝতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এক বছর কোন পরীক্ষা হয় নি। এখন যদি বড় সড় কোন ভূমিকম্প হয়ে ঢাকা শহরের অর্ধেক মানুষ মরে যায় তো ঢাকাতে যে সব শিক্ষার্থী আছে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে? করোনা কোন সাধারণ রোগ না। আমার পরিচিত চার জনের বাবা/মা মারা গেছে এই করোনাতে, স্বল্প পরিচিত বা দূরের আরো অনেকের পরিবারকে কষ্ট করতে দেখছি। এখন যদি এইচএসসি পরীক্ষা হয়, তাহলে দেখা যাবে অনেকে পরীক্ষার সময় আক্রান্ত হবে তাই তারা পূর্ণ পরীক্ষা দিতে পারবে না। অনেকের বাবা-মা আক্রান্ত হবে, কেউ হয়ত মারা যাবে। ওইসব ছেলে মেয়েরা তাদের পরীক্ষা ঠিকমত দিতে পারবে না। অনলাইন পরীক্ষার কথা না বলাই ভাল। আমাদের দেশে যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়, সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নিলে কেউ অবৈধ পথ অবলম্বন করবে না- এটার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। যেনতেন ভাবে একটা পরীক্ষা নেয়ার থেকে না নেয়াটাই ভাল হবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দেখা যায় বেশিরভাগ ছেলে মেয়ের এইচএসসিতে এসএসসির তুলনায় রেজাল্ট খারাপ হয়, কারণ তারা সময় কম পায়। সে হিসেবে জেএসসি আর এসএসসির নম্বর গড় করে একটা নম্বর বসানো খুব বেশি আপত্তিকর মনে হচ্ছে না। যারা ভাল ছাত্র-ছাত্রী তারা পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসএসসি, এইচএসসির নম্বর যোগ না করে শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা।
তবে আমার মতে সবচেয়ে ভাল হত যদি এই বছর পরীক্ষা একদম বাতিল করে, আগামী বছর একসাথে দুই ব্যাচের পরীক্ষা নেয়া যেত। এখন জিপিএ সিস্টেম, তাই ফার্স্ট স্ট্যান্ড, সেকেন্ড স্ট্যান্ড করার মত কোন ইস্যু থাকছে না। দুই ব্যাচের একসাথে পরীক্ষা নিয়ে এই জটিলতা কাটানো যায়। জানি এটারও পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি থাকবে, বাইরে থেকে অনেক কথাই বলা যায় কিন্তু আপনি ওই পদে থাকলে এর থেকে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। বরং অন্যান্য মন্ত্রীর চেয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদে যিনি আছেন, এই পদের জন্য তার চেয়ে যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।
অফটপিকঃ গ্রামীনের ইন্টারনেট দিয়ে সামুতে ঢুকা যাচ্ছে না!