ব্রেন এমন একটা জিনিষ যেটা কিছু না করে থাকতে পারে না। আপনাকে যদি আমি বলি আপনার কোন কাজ করা লাগবে না আপনি শুধু এক জায়গাতে বসে থাকবেন, আপনাকে প্রতিদিন যা খেতে চান দেয়া হবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে আপনাকে কোন বিনোদনের ব্যবস্থা দেয়া হবে না। মানে আপনার কাছে মোবাইল থাকবে না। আপনার কাছে টিভি থাকবে না। আপনি শুধু সারাদিন বসে থাকবেন আর একটু পর পর খাবেন। আমরা যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি তাদের অনেকের কাছে প্রথম দিকে এটা খুবই মজার বলে মনে হবে। কারণ, আমরা কাজ করে করে ক্লান্ত, আমাদের একটু অবসর দরকার (যদিও আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে মোবাইল ছাড়া কে কতক্ষণ থাকতে পারবে!)। কিন্তু সবার জন্য বিষয়টা এমন না।
এবার আমাদের আগের জেনারেশনগুলোর কথা ভাবি। আগের জেনারেশন মানে আমাদের নানী-দাদীর জেনারেশন না, তাদের আগের জেনারেশন। তাদের সময় যৌথ পরিবার ছিল, গৃহস্থালি কাজে তাদের প্রচুর সময় লাগত। মোবাইল বা টিভি লাগত না, সারাদিন কাজ করে তাদের সময় কেটে যেত। রাতে সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া, বাড়ির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা, এসব করে তাদের হাতে আর সময় থাকত না।
এবার আমাদের নানী-দাদীর জেনারেশনের দিকে আসি। বেশিরভাগই কিন্তু হাউজওয়াইফ। তাদের সময় দেখা গেছে তারা ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে, তাদের নাতী-নাতনী আছে কিন্তু তারা সবাই শহরে থাকে। তাদের এত সময় নাই যে এরা নানী-দাদীকে দিবে। এরা জীবনের শেষ দিকে এসে চরম অসুখী জীবন-যাপন করে। সত্যি কথা তাদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নাই। তারা সারাজীবন শুধু ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা করে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাদের ধারণা, তারা মরতে পারলে বাঁচেন!
এবার সবাই নিজের মায়ের দিকে তাকান। আপনার মা যদি গৃহিণী হয় আর তার যদি কোন কাজ না থাকে। তিনি কিভাবে বেঁচে আছেন? কখনও চিন্তা করেছেন? আপনি নিজে সারাদিন মোবাইল টিপেন, মুভি দেখেন। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়ান। বিয়ে করলে নিজের বউ নিয়ে ঘুরে বেড়ান। আর আপনার মা, তিনি কী করেন? আপনার বাবা যদি রিটায়ার করে থাকে, তো তিনি কী করেন? মহীলারা হিন্দি সিরিয়াল দেখে বলে আপনি হাসাহাসি করেন। আরে আপনি যেসব আজগুবি মার্ভেল আর ডিসি মুভি দেখেন সেটা হাস্যকর না? তারা তো স্মার্ট-ফোনটাও ঠিক মত ব্যবহার করতে পারে না। আর আপনার কাছে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতেও তাদের লজ্জা লাগে। এই যে এত হাসাহাসি, এত ট্রল, সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকা, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করবেন কিভাবে বিনোদন ছাড়া আপনার মা-বাবা বেঁচে আছে। তারা আসলে খুবই অসুখী। আপনাদের মানুষ করতে গিয়ে তারা সেভাবে বন্ধু-বান্ধব বানানোর সুযোগও পান নাই। শেষ বয়সে এসে কী করে দিন পার করবেন সেটা তারা খুঁজে পান না। অনেকেই কবে মরবেন সেই দিন গুনতে থাকেন!
এবার আমার পোস্টের শুরুর লাইনগুলা আবার পড়েন। বাবা-মাকে একটু সময় দেন। ফ্রেন্ডদের নিয়ে ‘চিল’ করার থেকে বাবা-মার সাথে রাতে একটু গল্প করেন। আর মহীলারা হিন্দি সিরিয়াল কেন দেখে, এটা নিয়ে হাসাহাসি করার আগে নিজে আজগুবি মার্ভেল/ ডিসি মুভি দেখা ছাড়েন। টিভিতে যা দেখায় সেটা বিনোদন, সেটা বুঝার চেষ্টা করেন। আপনি আধুনিক হইছেন, বাপের টাকায় দামী মোবাইল ব্যবহার করেন, ফেসবুকে মার্ভেল/ডিসি মুভি নিয়ে পক-পক করেন, সারাদিন মেটাল শুনেন। আপনার কাছে ট্র্যাস মেটাল যতই ভাল লাগুক, অনেকের কাছে হয়ত সেটা ষাঁড়ের মত চিৎকার ছাড়া আর কিছুই না! তাই, আবার বললাম, বাবা-মাকে সম্মান করেন। তাদের সময় দেন।