‘আমার ছেলে যে কলঙ্ক বয়ে এনেছে, তা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ লজ্জায় গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পারছি না।’
আক্ষেপ করে এসব কথা বলেছেন দিল্লির আলোচিত মেডিকেলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার সেই ছেলেটির মা, বয়স নির্ণয়ে যার পরীক্ষা চলছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ছেলের প্রতি এই ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
নগরসভ্যতা থেকে অনেক দূরে, উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এক প্রত্যন্ত গ্রামে নিজ ভিটায় মাটিতে বসে এই মা যখন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তাঁকে খুব দুর্বল দেখাচ্ছিল। সবুজ একটা চাদর গায়ে তীব্র শীতে কাঁপছিলেন তিনি।
কঠোর দারিদ্র্যে জর্জরিত এই মা আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া দূরের কথা, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নামই শোনেননি কখনো। বড় জোর গ্রামের কাছের শহরের বাজার, এর বাইরে কখনো পা পড়েনি তাঁর। মানসিক রোগী স্বামী আর ছোট ছোট পাঁচ সন্তান নিয়ে তাঁর টানাপোড়েনের সংসার। অন্যান্য কৃষিজীবীর সঙ্গে আলুখেতে মজুরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন তিনি।
আলাপকালে এই মা জানান, টানা কয়েক দিন উপোস রয়েছেন তিনি। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি মূর্ছাও যান।
গত ১৬ ডিসেম্বর ওই ফিজিওথেরাপির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এই মায়ের ছেলেটি সবচেয়ে ছোট। মায়ের দাবি অনুযায়ী বয়সে ছেলেটি কিশোর হলেও পুলিশের দাবি, সে কিশোর নয়, তার বয়স ১৮ বছরের বেশি হবে। এ ব্যাপারে তার শারীরিক পরীক্ষা চলছে। কিশোর বলে প্রমাণিত হলে পৃথক আদালতে তার বিচার হবে।
মায়ের ভাষ্য, আজ থেকে ছয় বছর আগে, ১১ বছর বয়সে উন্নত জীবনের আশায় রাজধানী নয়াদিল্লির পথে বেরিয়ে পড়ে তাঁর ছেলে। সেখান থেকে প্রথম এক বছর কিছু অর্থ বাড়িতে পাঠালেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। মা প্রথমে ভেবেছিলেন, তাঁর ছেলে কোথাও গোলামির বাঁধনে আটকা পড়েছে। পরে ধরে নেন, সে আর বেঁচে নেই।
মেডিকেলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার কয়েক মাস আগে ওই মা এক হিন্দু সন্ন্যাসীর কাছে ছেলের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, তাঁর ছেলেকে কেউ জাদুটোনা করে আটকে রেখেছে। তবে সে একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। কিন্তু ছেলে আর ফিরে আসেনি। এর পর নয়াদিল্লির ওই ঘটনাই দিয়েছে তাঁর ছেলের খোঁজ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নয়াদিল্লিতে এক বাস স্টেশনে গাড়ি ধোয়ামোছা আর বাসচালকদের ফুট-ফরমাশ খাটার কাজ করেছে ছেলেটি। একপর্যায়ে ওই বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ জোটে তার। ছেলেটির কাজ ছিল সুর করে যাত্রীদের ডেকে বাসে তোলা।
ওই ঘটনার অন্যতম শিকার মেডিকেল ছাত্রীর বন্ধুটি জানান, এই ছেলেটিই তাঁদের ডেকে বাসে তুলেছিল। তাঁর বান্ধবীকে বলেছিল, ‘আসুন বোন, এই সিটে বসুন।’ তিনি বলেন, ‘এই ছেলেটিই আমাকে প্রথম আক্রমণ করে।’ রয়টার্স।