My Country! In the days of Glory Past
A beauteous halo circled round thy brow
And worshipped as deity thou wast,
Where is that Glory, where is that reverence now?
আপনাদের মধ্যে যারা কোলকাতায় গিয়েছেন, তারা জানেন যে কোলকাতায় এনটালি নামে একটা জায়গা আছে। ডিরোজিওর জন্ম সেখানেই হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৮০৯ সালে। বাবার নাম ফ্রান্সিস ডিরোজিও। সে সময়টায় কোলকাতায় বাস করত ড্রুমন্ড নামে একজন স্কটিশ। তিনি ছিলেন দারুন প্রগতিশীল এক মানুষ। তাঁর সম্বন্ধে লোকে বলত, "a dour Scotsman, an exile and a 'notrious free thinker'" তিনি কোলকাতার ধর্মতলায় একটি স্কুল দিয়েছিলেন। স্কুলের নাম ছিল ধর্মতলা আকাদেমি স্কুল। সেখানেই ভর্তি হয়েছিল বালক ডিরোজিও। ড্রুমন্ড মুক্তচিন্তা ডিরোজিওর ভিতর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাতে করে বালকের মন কুসংস্কারমুক্ত হয়ে ওঠে। ড্রুমন্ড বালককে পাঠ দিতেন ইতিহাস দর্শন ও ইংরেজী সাহিত্যে।
ড্রুমন্ড-এর উৎসাহে বালক ডিরোজিও পড়ত ফরাসী বিপ্লব নিয়ে: The causes of the French Revolution are a subject of significant historical debate. France in 1789, although facing some economic ( especially taxation) difficulties and simplicities, was one of the richest and most powerful nations in Europe; further, the masses of most other European powers had less freedom and a higher chance of arbitrary punishment.
পড়ত কবি রবার্ট বার্নসের কবিতা।
I see amid the fields of Ayr
A ploughman, who, in foul and fair,
Sings at his task
So clear, we know not if it is
The laverock's song we hear, or his,
Nor care to ask.
ডিরোজিওর তখন চৌদ্দ বছর বয়েস। বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য স্কুলের পড়া ছাড়তে হল। ডিরোজিও ভাগলপুর চলে যান। জায়গাটি বিহারে। সেখানে গঙ্গার রুপ দেখে বিস্মিত। কবিতা লিখতে শুরু করলেন। পরে সেসব কবিতা কিছু প্রকাশিত হয়েছিল।
নানা বিষয়ে পড়াশোনা চলছিল। ইম্মানুয়েল কান্ট ছিলেন জার্মান দার্শনিক। তাঁর কড়া সমালোচনা করে নিবন্ধ লিখলেন। তখন ডিরোজিওর বয়স মাত্র ১৭। বছরের তরুণের লেখায় কোলকাতায় বুদ্ধিজীবি মহলে আলোরন উঠল।
১৮২৮। কবিতা ছাপতে কোলকাতায় এলেন ডিরোজিও।
সেই সময় কোলকাতায় বাস করতেন ডেভিড হেয়ার নামে এক ঘড়ি ব্যবসায়ী। (বিস্তারিত দেখুন Click This Link) ঘড়ির ব্যবসা করে প্রভূত ধন অর্জন করেছিলেন হেয়ার। হেয়ারের বাড়ি ছিল স্কটল্যান্ডে। সেখানেই ফিরে যাওয়ার কথা। গেলেন না। কেননা, ততদিনে কোলকাতার মানুষের দুঃখদুর্দশা (যার অন্যতম কারণ ঔপনিবেশিক শাসন) দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন হেয়ার। ঔপনিবেশিক শাসনে নিষ্পেষিত মানুষের জন্য কী করা যায় ভাবছিলেন। হেয়ার সম্ভবত ভেবেছিলেন, কোলকাতার মানুষ শিক্ষিত হলে কর্ম সংস্থান হবে। কাজেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা ভাবলেন হেয়ার। তখন ১৮১৭ সাল। হেয়ারের বয়স ৪২ বছর। তখন কোলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের কথাটা হেয়ার তাঁকে বোঝালেন। ফল হল। অতপর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা। যার পিছনে হেয়ারের অবদান অসামান্য।
ডিরোজিও শুনলেন-হিন্দু কলেজে পদ খালি আছে-আবেদন করলেন। তাঁকে নেওয়া হল।
ঔপনিবেশিক বাংলার বাতাসে তখন পরিবর্তনের সুর।
ডিরোজিও সে বাতাসের বিদ্রোহ আরও উশকে দিলেন।
১৮২৬। মে মাস। ১৭ বছর বয়েসে
ডিরোজিও ইতিহাস ও ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে হিন্দু কলেজে যোগ দিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী পাঠদানের কারণে ছাত্ররা তাঁর প্রতি আকর্ষন বোধ করল। ছাত্রদের সঙ্গে খোলাখুলি মিশতেন ডিরোজিও। শ্রেণি কক্ষের বাইরেও যোগাযোগ রাখতেন। অনেকে ছাত্রই তাঁর বাড়ি যেতেন। সেখানে আড্ডা চলত। তখন বলছিলাম ডিরোজিও নিজেকে বাঙালি ভাবতেন। বাঙালিমাত্রেই আড্ড ভালোবাসে। আড্ডায় ডিরোজিও উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন-
Expanding like the petals of young flowers
I watch the gentle opening of your minds…
এভাবে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তীতে পরিনত হলেন ডিরোজিও।
বিস্তর পড়াশোনা ছিল ডিরোজিওর। ছিলেন আপাদমস্তক যুক্তিবাদী। ছাত্রদের টমান পেইন পড়তে বলতেন; বিশেষ করে, “রাইটস অভ ম্যান।” ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। ধর্মবিশ্বাসীদের প্রশ্ন করে করে বিব্রত করতেন। ছাত্রদেরও হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে তাই করতে বলতেন। চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী অযৌক্তিক ধর্মীয় আচরণকে অবজ্ঞা করতেন। সেই সঙ্গে জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল প্রবল। জ্ঞানের আলোয় যেন সমস্ত অন্ধকার কুসংস্কার ছাড়খার করে ফেলবেন!
হিন্দু কলেজ ঘিরে ডিরোজিওর জ্ঞানচর্র্চা আলোরণ তুলেছিল তৎকালীন কোলকাতাকেন্দ্রীক বঙ্গীয় সমাজে। তাঁর ছাত্রদের বলা হত “ডিরোজিয়ানস”। নানা বিষয়ে ছাত্রদের নিয়ে বির্তক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন ডিরোজিও। ১৮২৮ সালে ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের নিয়ে “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন” গড়ে তোলেন। লক্ষ্য-সাহিত্যচক্র ও বির্তক অনুষ্ঠান আয়োজন। “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন”-এর তরফ থেকে “পার্থেনন” নামে একটি পত্রিকাও বের করে। সে পত্রিকায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে লেখা হয়:
১) নারী স্বাধীনতা। (লক্ষ করুন)
২) ধর্মের অযৌক্তিকতা।
৩)ব্রিটিশ শাসনের কুফল।
ডিরোজিওর ছাত্রদের মধ্যে কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ী, এবং রসিক কৃষ্ণ মল্লিক ছিলেন অন্যতম। এঁদের মধ্যে ডিরোজিওর উদারনৈতিক প্রভাব ছিল গভীর। রামতনু লাহিড়ী পৈতা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্রই যোগ দিয়েছিলেন ব্রাহ্মসমাজে। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় খ্রিস্টান হয়ে যান। প্যারি চাঁদ মিত্র নামে তাঁর এক ছাত্র ছিল । বাংলায় প্রথম উপন্যাস লেখার কৃতিত্ব এঁরই।
ছাত্রদের সাংবাদিকতায় উৎসাহ দিতেন ডিরোজিও। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় ‘দি ইনকোয়ারার’ নামে ইংরেজী সাপ্তাহিক বার করলেন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও রসিক কৃষ্ণ মল্লিক বার করলেন বাংলা পত্রিকা ‘জ্ঞানান্বেষন।’
২
ডিরোজিওর হিন্দু ধর্মাচারে কঠোর সমালোচনার ফলাফল তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন বঙ্গীয় সমাজে হয়েছিল দুঃখজনক।
ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়।
তারপরও ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর।
যা হোক। কলেরা রোগটি সে সময়টায় ছিল প্রায় অনিরাময়যোগ্য ও প্রাণঘাতি। কলেরায় আক্রান্ত হলেন ডিরোজিও। ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১। মাত্র ২২ বছর বয়েস মারা যান ডিরোজিও। তখন একবার বলেছি ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। কোলকাতায় তখন খ্রিস্টানদের কবরখানা ছিল পার্কস্ট্রিটে। খ্রিস্টান পুরুতরা তাঁকে পার্কস্ট্রিটের কবরখানার ভিতরে সমাহিত করতে অস্বীকার করল। পরে তাঁরে গোর দেওয়া হলো পার্কস্ট্রিটের সিমেট্রির বাইরে রাস্তার ওপর।
৩
আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিরোজিও নামটি আজও তাৎপর্যময়। যেহেতু উনিশ শতকের বাংলার রেঁনেসায় ডিরোজিওর অবদান ছিল গভীর। এবং যেহেতু আমরা একটি রেঁনেসার অপেক্ষায় রয়েছি।
আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, বাংলায় রেঁনেসা হলেও বাংলাদেশে আজও রেনেঁসা হয়নি। এবং সেই মানসিক বিপ্লবটি বাদ দিয়েই আমরা ব্যাপক পরিবর্তনের কথা ভাবছি।
যা হোক। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই যে কারণে আজও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী মানুষদের জন্য বাংলাদেশে এক বিপদজনক ও কঠিন স্থান। এখানকার ডিরোজিওদের (হুমায়ূন আজাদ) হত্যা করা হয় কিংবা এখানকার ডিরোজিওদের (আহমেদ ছফা) অবজ্ঞা করা হয়। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই আজও ধর্মীয় কুসংস্কারগ্রস্থ ইসলামিক টিভি এদেশে এত জনপ্রিয়, বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই হাজার হাজার তরুন সহজেই মওদুদীপন্থি হয়ে ওঠে; এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ কর্মীদের চিন্তাচেতনা আদিম ও অপরিচ্ছন্ন এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই তসলিমা নাসরিনরা এদেশে জন্মেও নির্বাসনের দুঃখ ভোগ করেন।
অপরদিকে উনিশ শতকে ডিরোজিওদের মুক্তিবুদ্ধির আন্দোলনের ফলে কোলকাতা আজও স্বাধীন চিন্তার পীঠস্থান বলে বিশ্বময় খ্যাত। এবং আমাদের মনে রাখতে হবে কোলকাতা সত্যজিৎ রায়ের শহর। ভালো হোক মন্দ হোক আজও কোলকাতাকেন্দ্রীক পশ্চিমবঙ্গে মার্কবাদীরা অধিষ্ঠিত- যেটি অনিবার্যভাবেই প্রগতিশীলতার চিহ্ণ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চার আন্দোলন শক্তিশালী ভিতের ওপর কখনোই দাঁড়াতে পারেনি। যে কারণে এদেশে ভাস্কর্য শিল্পের ওপর আজও সহজে আঘাত আসে, যে কারণে আজও এদেশে উগ্র ডানপন্থি দলের এত হা হা বিস্তার, তারা ক্ষমতা আসামাত্রই আরম্ভ হয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম পীড়ন, এরাই অবলীলঅয় উচ্চারণ করে 'উপজাতী'-র মতো ঘৃন্য শব্দ। উগ্র ডানপন্থি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল। এদের সদস্যদের চিন্তাচেতনায় এত ব্যাপক অন্ধকার মধ্যযুগ; এরা জানে না যে উগ্র মুসলিম জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাতে নেই, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করতে নেই-এই সামান্য শিক্ষাটুকুও তাদের নেই। একুশ শতকে বেঁচে থেকেও এরা কেউই ভাবে না যে উনিশ শতকে যে সব প্রশ্ন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল সেই একই প্রশ্ন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও তোলা যায়!
৪
আজকাল আমরা যে বাংলাদেশের সমাজজীবনে ব্যাপক এক পরিবর্তনের কথা বলছি, সেটি প্রবল এক মানসিক বিপ্লব (রেঁনেসা) ব্যতীত সম্ভবপর নয়।
কাজেই-হে ডিরোজিও ...
তথ্যসূত্র:
Click This Link
http://banglapedia.search.com.bd/HT/D_0121.htm