somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিড হেয়ার: বাঙালির প্রিয় একজন মানবতাবাদী স্কটিশ।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেভিড হেয়ার। আজও ইনি কোলকাতাবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কেননা, একজন প্রকৃত সমাজহিতৈষী ডেভিড হেয়ার ছিলেন ঔপনিবেশিক কোলকাতায় শিক্ষা বিস্তারে পথিকৃৎ । ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্যন করেছিলেন হেয়ার, তবে ব্যবসার ভার অন্যকে দিয়ে জনকল্যাণে ব্রতী হয়েছিলেন। নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে হয়ে পড়েছিলেন ঋণগ্রস্থ। চিরকুমার এই মানবতাবাদী মানুষটির স্মরণে কোলকাতায় সড়ক ও স্কুলের নামকরণ করা হয়।

ডেভিড হেয়ারের জন্ম স্কটল্যান্ডে। ১৭৭৫ সালে। তিনি যে পরিবারে জন্মেছিলেন সে পরিবারটি ঘড়ি তৈরি করত। আমরা জানি, সে সময়- অর্থাৎ সপ্তদশ শতকে অনেক ইউরোপীয়ই জীবিকার তাগিদে ভারতবর্ষে এসেছিল । ডেভিড হেয়ারও তেমনি এসেছিলেন-কোলকাতায়; সময়টা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ। হেয়ার তখন ২৫ বছর বয়েসি যুবক। কোলকাতায় থিতু হয়ে ঘড়ির ব্যবসা শুরু করলেন। মানুষটি ছিলেন অন্য রকম; কাজেই বাঙালিদের সঙ্গে মিশতেন, ভালো বাংলা শিখেছিলেন; বাংলায় কথা বলতেন দেশি খাবার খেতেন ও ধুতি-পাঞ্জাবি পড়তেন। শুধু তাই নয়, হেয়ার হয়ে উঠেছিলেন নেটিভ ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে যোগসূত্র।
ঘড়ির ব্যবসা করে প্রভূত ধন অর্জন করেছিলেন হেয়ার। স্কটল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার কথা। গেলেন না। কেননা, ততদিনে কোলকাতার মানুষের দুঃখদুর্দশা (যার অন্যতম কারণ ঔপনিবেশিক শাসন) দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন হেয়ার। ঔপনিবেশিক শাসনে নিষ্পেষিত মানুষের জন্য কী করা যায় ভাবছিলেন। হেয়ার সম্ভবত ভেবেছিলেন, কোলকাতার মানুষ শিক্ষিত হলে কর্ম সংস্থান হবে। কাজেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনই হবে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। তখন ১৮১৭ সাল। হেয়ারের বয়স ৪২ । তখন কোলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন হাইড ইষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের কথাটা হেয়ার তাঁকে বোঝালেন; ফল হল। অতপর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা। যার পিছনে হেয়ারের অবদান অসামান্য।
১৮৫৫ সাল থেকে হিন্দু কলেজের নাম হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ।
বাংলার সমাজজীবনে হেয়ার কর্তৃক হিন্দু কলেজ স্থাপনের ফলাফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। কেননা, বাংলার মুক্তিবুদ্ধির ‘ইয়াং বেঙ্গল’ আন্দোলন এ কলেজ ঘিরেই গড়ে উঠেছিল। কলেজের ছাত্রদের বলা হত ইয়ং বেঙ্গল; এরা প্রত্যেকেই ছিল মুক্তমনা এবং উদার শিক্ষক ডিরোজিওর (১৮০৯-১৮৩১) ছাত্র। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ছিলেন পর্তুগিজ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। মাত্র ১৭ বছর বয়েসে ডিরোজিও হিন্দু কলেজে যোগ দেন। ডিরোজিও ছিলেন উদার ও মুক্তমনা। “তিনি তাঁর ছাত্রদের জীবন ও সমাজ-প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তিসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করা শিক্ষা দিয়েছিলেন।” ডিরোজিওর সঙ্গে হেয়ারের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ট।
ইয়ং বেঙ্গলের একটি সংগঠন ছিল। ‘সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অভ জেনারেল নলেজ’। হেয়ার সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক হন।
১৮১৮ সাল। ‘স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করলেন হেয়ার। এটি বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় বই প্রকাশনা সংস্থা; উদ্দেশ্য সহজে বোধগম্য- কোলকাতাবাসীর কাছে সুলভে বাংলা ও ইংরেজী বই পৌঁছে দেওয়া।
আমি যখনকার কথা বলছি-সেই সময়টায় রাজা রামমোহন রায় সামাজিক সংস্কারে নেমেছিলেন। রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গেও হেয়ারের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ট।
এবার হেয়ারের অন্যান্য সামাজিক আন্দোলনের দিকে তাকানো যাক। ঔপনিবেশিক আমলের প্রচলিত আইনগুলি উৎপীড়নমূলক এবং অমানবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছিল হেয়ারের কাছে। আমি যে সময়ের কথা বলছি সে সময়টায় শ্রম আইনের আওতায় ভারতীয় শ্রমিকদের দাস হিসেবে ইউরোপের প্লানটেশন কলোনিগুলিতে পাঠানো হত। ঐ শ্রম আইনটি ছিল নিষ্ঠুর ও অমানবিক। হেয়ার ঐ শ্রম আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। কলোনিয়াল আইনের সংস্কার সাধনের জন্য ব্যাপক প্রচার করেছিলেন হেয়ার। এমন কী, দেশিয় সংবাদপত্রের ওপর থেকে সমস্ত রকম বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। দেশের সকল জেলা আদালতে জুরির মাধ্যমে বিচারব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে তিনি জোরালো যুক্তি প্রদর্শন করেন। এর আগে ব্যবস্থাটি কেবল কোলকাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
আগেই বলেছি, নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে হেয়ার ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে ঋণমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৮৪০ সালে মাসিক ১০০০ রুপি বেতনে তাঁকে কোলকাতার শেরিফ নিযুক্ত করা হয়।
১৮৪২ সালের ১ জুন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে হেয়ার মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন,Irrespective of caste and creed, religion and race, all mourned his death. The Calcutta public raised a memorial statue of him by public subscriptions. The Memorial Statue (1847) reads that Hare 'having acquired an ample competence cheerfully relinquished the prospect of returning to enjoy it in his native land in order to promote the welfare of that of his adoption'. (বাংলাপিডিয়া)

সূত্র: বাংলাপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×