আগের পর্বঃ জাপানের ডায়েরীঃ প্রবাসে বাংলাদেশকে খোঁজা।
একজন রোগী যদি ডাক্তারের কাছে বন্ধুসূলভ ব্যবহার ও মানসিকভাবে সাপোর্ট পায়, রোগীর রোগ ৫০% কমে যায়। ডাক্তারী একটা সন্মানিত পেশা, যা শুধু সেবার চাদরে মোড়ানো। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু কিছু ডাক্তার নামক *******(স্টার দিলাম, আপনারা নাম বসায়ে নেন) এই মহান পেশাকে কসাই এর পেশায় নামিয়ে ফেলেছে। দেশের বাহিরে বেশি টাকা খরচ করেও মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত হচ্ছে, কারন আমাদের দেশীয় বেশিরভাগ ডাক্তারেরই ব্যবসায়িক মানসিকতা। যেখানে উচিত পরম মমতায় একজন রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেয়া, সেখানে তাদের মাথায় থাকে কত দ্রুত সময়ে কত বেশি রোগী দেখা যায়, নগদ নারায়নের তড়িৎ ব্যবস্থার জন্য। দূর্ভাগা আমরা, একে আমরা পাচ্ছি অবহেলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা আবার নেই কোন জবাবদিহীতা। যেন মগের মুল্লুক।
যাহোক আজ জাপানের ডায়েরীতে থাকছে, জাপানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতার বিবরনী।
যদিও জাপানে ইংরেজী প্রচলন একেবারে কম। তারপরও চিকিৎসাক্ষেত্রে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়, কারন ডাক্তাররা একটু হলেও ইংরেজী পারে, মোটামুটি উতরে যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো লাগার দিক হলো, ডাক্তার থেকে শুরু করে হাসপাতাল/ক্লিনিকের সব স্টাফদের অমায়িক ব্যবহার। সিরিয়াল নেবার কোন ঝামেলা নাই, ক্লিনিকে গিয়ে কাউন্টার এর সামনে মেশিন থেকে সিরিয়াল নিলেই হলো, এরপর সিরিয়াল আসলে রোগ অনুসারে (অনেক সময় প্রথমবারের মত হাসপাতালে গেলে, একটা ফরম পুরুন করতে হয়, দেহে কি সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা দেখে ওরা ঠিক করে কোন স্পেশালিষ্ট ডাক্তারকে দেখাতে হবে) নিদিষ্ট ডাক্তারের সাথে আলাপন। ডাক্তারের মাঝে নেই কোন তাড়াহুড়া, যে একজনকে পার করে দিলেই আর একজন রোগী আসবে। একজন রোগী যদি মনখুলে সময় নিয়ে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে না পারে, সুচিকিৎসা অসম্ভব, যা আমাদের দেশে সম্ভব না, এক দুলাইন শুনেই আমাদের দেশে ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দেয়া শুরু করেন, কিন্তু জাপানে ডাক্তাররা বেশি দায়িত্ববান, মন দিয়ে রোগীর কথা শুনবে, দরকার হলে যথাযথ টেষ্ট দেবে, কিন্তু আমাদের দেশের মত কমিশন খাওয়ার লোভে দরকার না হলেও আজাইরা টেষ্টের ফাঁদ না। কোন কিছু শিওর না হয়ে, কখননই ব্যবস্থাপত্র দেবে না।
আর জাপানে যেকোন ক্লিনিক/হাসপাতালে প্রথমবার গেলেই একটা আইডি কার্ড করে দেয়, আর সাথে আইডি নাম্বারের অধিনে ওদের কম্পিউটারে রোগীর রোগের ইতিহাস ও সাথে কি ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে, কি টেষ্ট করেছে, ফলাফল কি, সবই আপডেট থাকে, ফলে বারবার হাসপাতালে গেলে ফিরিস্তি গাইতে হয় না। [আমাদের দেশে এমন যে কবে হবে, ডিজিঠাল বাংলাদেশ )
ছিমছাম পরিবেশ দেখেই মনটা ভালো হয়ে যাবে চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে, এখানে কমপক্ষে ৩০জনের মত লোকজন রিসেপশনে অপেক্ষা করে, অথচ কোন হইচই নাই, পিন পতন নিরবতা প্রায়, আর আমাদের দেশের কোন হাসপাতালের কথা চিন্তা করুন, পুরা হাট-বাজার।
ছিমছাম রিকভারি রুম
কোন টেস্টের জন্য যখন স্পেশাল ড্রেস পরতে হয় রোগীকে, সেক্ষেত্রে রোগীর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য বিশেষ সিকিউরড ব্যবস্থা। ছোট লকার থাকে, যেখানে রোগী নিজেই তার সবকিছু রেখে লক করে নিজের কাছেই চাবি রাখতে পারে, পরে নিজেই বের করে নিতে পারে, টেষ্টের পরে। যদিও চুরির কোন সম্ভবনাও নেই।
আমাদের দেশে যেখানে এটা কল্পনাও অবাস্তব। ১টাকার কয়েন রাস্তায় পড়ে থাকলেও সেটা নিমিষেই ঊধাও হয়ে যাবে।
অবাক লাগে, সাথে কষ্টও লাগে আমাদের রাজনীতিবিদদের বড় বড় কথা শুনে, কিন্তু আসল কাজে কেউ এগিয়ে আসে না, নেই কোন জবাবদিহীতা, যে যেমন পারছে চিকিতসার নামে কতিপয় ডাক্তার লুটে খাচ্ছে আমাদেক, আর গোটা চিকিতসক গোষ্ঠিকে কলংকিত করছে, সেই সাথে মাঝে মাঝেই অকালে ঝড়ে পড়ছে জীবন, বাড়ছে অনাকাংখিত মৃত্যু।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫১