জাপানে থাকাকালীন নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা নিয়ে আমার এই সিরিজ লেখা। মাঝে অনেকদিন লেখা হয়ে ওঠেনি। শারিরীক অসুস্থতার কারনে বাসায় রেষ্টে আছি, এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করছি।
মানুষ অনুকরনপ্রিয়, সেটা অবশ্যই ভালো কিছু হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা মনে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপটা অনুসরন করি। উদাহরন মনে হয়, আশেপাশের জ্বলজ্বল করছে। জাপানীজদের যে ব্যাপারগুলি দৃষ্টি কাড়ে, এর অন্যতম হল নিচু স্বরে কথা বলা। ১০জন জাপানীজ একসাথে থাকলেও কোন হইচই নাই, কথা বলছে অথচ কত নম্র আর নিচু স্বরে, কিন্তু ভাবুন আমাদের কথা। আমাদের দুইজন একসাথে হলেই, আর কিছু লাগে না, মোটামুটি মাইক বাজার মত অবস্থা।
আবার সৌন্দর্য্য সচেতনতা জাপানীজদের মাঝে ব্যাপক। বিশেষ করে প্রকৃতিকে নিয়ে। সবকিছু ঝকঝকে তকতকে। কেউ কোথাও ইচ্ছামত নোংরা ফেলছে না, নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলছে। একটা ছোট বাচ্চাও চকলেট খেয়ে সে প্যাকেটটি নিজের পকেটে রাখে, পরে বাসায় বা রাস্তায় গোমির জায়গা পেলে সেখানে ফেলবে। আর আমাদের? আমরা বুড়ারাই বাপদাদার পৈত্রিক জায়গার মত যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছি, পানের পিক ফেলছি, সেখানে ছোটদের দোষ দিয়ে কি হবে?? সাধারন মানুষের কথা বাদই দিলাম, ভাবুন নিজের কথা। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে কি সুন্দর রাজকীয় স্টাইলে পা দিয়ে গল্প করে, দেওয়ালের চেহারাই বদলে দিয়েছেন??? অথচ আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যদি একটু করে বদলানোর চেষ্টা করি, তাহলেই সন্মিলিত প্রয়াসে পরিবর্তন আসবে। আগে দরকার নিজেকে বদলানো, এরপরতো নিজের উদাহরন দেখিয়ে, অন্যকে বলা যাবে, আসুন বদলে যাই? সিগারেট নিজে খাওয়া বন্ধ না করে, কাউকে কি বলা যায়, প্লিজ সিগারেট খাবেন না, সিগারেট খেলে অনেক ক্ষতি হয়???
সকালে জাপানের রাস্তার বের হলে দেখা যাবে, অনেকেই হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ আর অন্যহাতে আংটা জাতীয় একটা লড়ি নিয়ে ঘুরছে। সকালের প্রাতঃভ্রমনের সাথে রাস্তায় থাকা টুকটাক ময়লা পলিথিনে ভরছে। নিজের বাড়ির চারপাশের রাস্তা এরা নিজেরাই পরিস্কার রাখে। শুধু তাই না, সন্মিলিতভাবে পার্কগুলিতে স্বেচ্ছা শ্রমে পরিস্কার করে।বিশ্বাস না হলে নিচের ছবিগুলি দেখুন, আজকের তোলা।
আমাদের কি এমন সম্ভব? বাস্তবায়ন দুরে থাক, আমরা চিন্তাও করতে পারবো না। কেউ ভাববে আমি এ্ত বড় ব্যবসায়ী/ডেলিগেট/কর্মকর্তা/সমাজপতি,, এসব করলে প্রেস্টিজ পাঙ্চার হয়ে যাবে। সেই ব্রিটিশরা দেশ ছেড়েছে '৪৭ এ, কিন্তু আমাদের মাঝে বপন করে গেছে মিথ্যা জৌলুশ ভাবনা....