বিষয়টা নিয়ে লেখা ইচ্ছে অনেক দিন ধরে। তার পরে ইউটিউবের একটা ভিডিও দেখে এতটাই ভাল লেগেে গেল যে আর না লিখে পারলাম না। প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাদের অনেকেরই অজানা এবং অনেক তথ্য বের করতে আমাকে রিতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে পৃথিবীর এক্সট্রিম পয়েন্টগুলোর সম্পর্কে জানতে।
১) গভিরতম হ্রদ - Lake Baikal
বৈকাল হ্রদ রাশিয়ার দক্ষিনাঞ্চলের সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এই হ্রদটি হচ্ছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ মিস্টি পানির হ্রদ। এটি একটি Continental rift lake টাইপ লেক বা খাদ টাইপের হ্রদ। দুটি কন্টিেন্টেন্ট এর প্লেটের মধ্যে যে খাদ সৃস্টি হয়েছিল সেই খাদটিই পানি পুর্ন হয়ে লেকটি সৃস্টি হয়েছে। এটি বর্তমানে পৃথিবীর ২০ ভাগ মিস্টি পানির ধারক। এর এত পানি ধারন করার কারন হচ্ছে এর গভিরতা।
গরে প্রায় ৭৪৪ মিটার বা ২৪৪০ ফিট গভির এই লেকটি। সর্বোচ্চ ১৬৪২ মিটার বা প্রায় দের কিলোমিটার গভির। জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে এই বিশাল লেখটি সম্পুর্ন বরফাচ্ছাদিত অবস্থা থাকে। তখন যে কেউ পুরো লেকটির উপরে ঘুরে বেরাতে পরবে বরফ গারি দিয়ে। এই লেকটি সরাসরি মহাকাশ থেকে দেখাযায়। এটি একই সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে স্বচ্ছ পানির লেক। এর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে বরজমে গেলে সেই বরফের মধ্যে দিয়ে একেবারে নিচ পর্যন্ত দেখা যায়।
এত গভির হওয়ার কারন হচ্ছে Continental rift এর কারনে। আমরা জানি পৃথিবী অনেকগুলো ছোট বড় টেকটনিক প্লেট এর টুকরো দিয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো যখন একটা থেকে আর একটা সরে যায় বার ঘর্ষন হয় তখনই তাদের মধ্যে একটা গর্তের মতন সৃস্টি হয়। এই গর্তগুলোই পরবর্তিতে বিভিন্ন অদ্ভুৎ সব স্থানের সৃস্টি করে। বৈকাল এই ধরনের একটা ঘটনার ফলে বিশাল খাদের মতন সৃস্টি হয় আর সেখানে হাজার বছর ধরে পানি জমতে জমতে হ্রদের সৃস্টি হয়েছে।
প্রচুর সিল মাসের দেখা পাওয়া যায় এই লেকে। সবচেয়ে মারাত্মক চিত্র হচ্ছে এর শীত কালে। এত অসাধার হয় যে বেশির ভাগ মানুষই শীতকালে এই লেকটি ভ্রমন করে। কারন বিশাল এই লেকটির পুরোটাই একটা সলিড বরফে রুপ নেয়। এবং পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ হওয়াতে বরফ খন্ডগুলো কাচের মত পরিস্কার হয়ে যায়। এতটাই সুন্দর লাগে যে যারাই ওখানে শীত কালে একবার গিয়েছে মুগ্ধ হয়ে এসেছে।
তবে ভুলেও ওখানে শীত কালে খালিপায়ে নামতে যাবেন না। কারন কয়েক মিনিট লাগবে আপনি নিজেই লেকের পানি সাথে জমে বরফ হয়ে যেতে।
২) সর্বোচ্চ চুরা - Mauna Kea ( বেইজ থেকে চুরা পর্যন্ত হিসাবে)
মাউন্ট কেয়া এর অবস্থান আমেরিকার হাওয়াই দ্বিপপুঞ্জে। এই পর্বতটি একটি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানিদের মতে এটিতে সর্বপ্রথম অগ্নিউৎপাত হয়েছিল আজথেকে আরো ৫ হাজার বছর আগে। এই পর্বতটি বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চুরা বলা হয়। তবে একটু অন্যভাবে। সমুদ্রপৃস্ঠ থেকে ইটর উচ্চতা ৪২০৫ মিটার।
সাধারন আমরা সবচেয়ে উচু পর্বত হিসাবে জানি মাউন্ট এভারেস্টকে। লক্ষাধিক বছর আগে এশিয়া মহাদেশের মুল ভুখন্ডে সাথে ভারতিয় প্লেটটি যখন সংঘর্ষ বাধে তখনই এই পর্বত শ্রেনির সৃস্টি হয়েছে। কিন্তু এটির উচ্চতা হিসাব হয় সমুদ্র লেভেল থেকে।
কিন্তু Mauna Kea পর্বতটি একটি দ্বিপরে মধ্যে অবস্থিত তারমানে এর বেইজ হচ্ছে একেবারে পানির নিচে। তাই যদি আপনি সমুদ্র লেভেল থেকে হিসাব করেন তবে সামান্য ভুল হবে। কারন পর্বতটির আসাল বেইজ হচ্ছে একেবারে সেই সমৃদ্র পৃস্ঠে। তো সেখান থেকে এই উচ্চতা 9,330 m বা প্রায় ৯ কিলোমিটার। যেখানে এভারেস্ট এর উচ্চতা ৮ কিলোমিটার এর মতন। তবে যেহেতু আমাদের পানির নিচে যাওয়া লাগে না এটাতে চরতে তাই আর সেই হিসাবটাও হয় না।
এই পর্বতের উপরে Mauna Kea Observatories নামে একটি বিশাল টেলিস্পোপ সেন্টার বসানো আছে। এখানে মহাকাশ অবজারভেশন করার জন্য বিজ্ঞানিরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। এটার কারন হচ্ছে এই এলাকার বাতাস শুষ্ক হওয়াতে এর আকাশ সবসময় ফকফকা পরিস্কার থাকে। যার কারনে মহাকাশের প্রত্যেকটা তারাকে দেখতে পাওয়া যায় চমৎকার ভাবে।
৩) পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা - Mount Chimborazo
এই পর্বতটি দক্ষিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর এ অবস্থিত। আন্দিজ পর্বতমালার একজন গর্বিত সদস্য হচ্ছে ৪১২৩ মিটার বা ৪ কিলোমিটার উচ্চতার এই পর্বতটি। বর্তমানে এটি পৃথিবীর ১৭ তম উচু পর্বত। কিন্তু একটা দিকদিয়ে এটি প্রায় ৮ কিলোমিটার উচু এভারেস্ট পর্বতকে হার মানিয়ে দিয়েছে। আর সেটি হচ্ছে এটি পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভুপৃস্ঠের সর্বোচ্চ বিন্দু। কিন্তু কেন?
সাধারন হিসাব করলে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ চুরা থাকার কথা প্রায় ৮ কিলোমটিারের থেকেও উচু এভারেস্ট পর্বত। কিন্তু সেটা হয়নি। কারন হচ্ছে পৃথিবী সম্পুর্ন গোলাকার নয়। একেবারে কেন্দ্র থেকে মাউন্ট এভারেস্ট এর দুরত্ব হচ্ছে ৬৩৮২ কিলোমিটার। আর এই পর্বতটির দুরত্ব হচ্ছে ৬৩৮৪ কিলোমিটার। প্রায় দুই কিলোমটিার পার্থক্য।
প্রথিবীর আকার কিছুটা কমলালেবুর মতন। সেটাও আবার সব স্থানে একই সকম নয়। তাই আপনি যদি উত্তর মেরুর দিকে যেতে থাকেন সেন্টারের দিকে কাছাকাছি যেতে থাকবেন। কিন্তু বিষুবরেখার দিকে আসতে থাকলে দুরে যেতে থাকবেন। এখানেই এভারেস্ট মার খেয়ে গেছে। এটি বিষুব রেখা থেকে মাত্র একডিগ্রি দক্ষিনে অবস্থিত।
এর মানে হচ্ছে আপনি আর আমি যদি একই সাথে সাথে পৃথিবীর কেন্দ্রথেকে পর্যায়ক্রমে এই পর্বতটি এবং এভারেস্টের দিকে রওয়ানা দেই। তবে আপনি যখন এই পর্বতের পাদদেশে এসে দারাবেন তখন আমি অলরেডি এবারেস্টের ৬ কিলোমিটার উপরে উঠেগেছি। আর আপনি যখন এই পর্বতে চুরায় তখন আমি এভারেস্টের চুরায় থাকার পরেই আপনার তেকে দুই কিলোমিটার নিচে আছি। অদ্ভুৎ এই পৃথিবীর ততধিক তার কাজকারবার।
৪) পৃথিবীর গভিরতম স্থান - Challenger Deep
সমুদ্র কতটুকুন গভির হতে পারে এই প্রশ্ন করলে অনেকেই উল্টা পাল্টা উত্তর দেয়। আবার আমি যদি বলি জাপানে সাগরের মারিয়িানা দ্বিপপুঞ্জের পাশেই চ্যালেঞ্জার ডিপ নামক একটি স্থানে পানির গভিরতা প্রায় ১১ কিলোমিটার তাবে তারা কিছুতেই বিষয়টা বিশ্বাস করতে চায় না। আসলে প্রথম যখন বিজ্ঞানিরা বিষয়টি আবিস্কার করেন তখন তারাও বিশ্বয়ে হতবাক হয়ে যান কিভাবে একটা এলাকা এতটা গভির হতে পারে।
মুলত এর রহস্য বের করার জন্য বিজ্ঞানিরা পুরো পৃথিবীকে কম্পিউটারের মধ্যে থিডি ম্যাপিং করালেন। তার পরে কম্পিউটারের সাহার্যে পৃথিবীর সবগুলো সমুদ্রের পানি বের করে দিলেন। এইবার দেখা গেল কেন এই ঘটনা ঘটল। এই রহস্য মুলত লুকিয়ে আছে প্রশান্ত মহাসাগরের অপর প্রান্তে East Pacific Rise নামক সমুদ্রতলের একটি পর্বত শ্রেনির ভিতরে। বিজ্ঞানিরা প্রচুর গবেষনা চালিয়ে দিখেলেন আস থেকে দের কোটি বছর আগে পৃথিবীর এই প্রশান্ত মহাসাগরের নিচের টেকটনিক প্লেটটি তার পাশের প্লেটের সাথে মারাত্মক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এই সংঘর্ষের ফলে প্লেটের এক প্রান্ত মানে ম্যারয়ানা অঞ্চলে মাটি ঠেলে উপরের দিকে উঠে গিয়ে ম্যারিয়ানা দ্বিপপুঞ্চ গঠিত হয়। আর তার পাশেই সাগরের প্লেটটি স্লোপের মতন পিছলে গিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। এতে ওই অঞ্চলে মারাত্মক একটা গর্তের সৃস্টি হয়। আর এই ঢুকে যাওয়া মাটিগুলো আবার অপর অঞ্চল মানে East Pacific Rise এর গিয়ে পর্বতের আকারে ঠেলে বের হয়ে আসে।
মারাত্মক এই ঘটনায় ম্যারিয়ানা অঞ্চলে গর্তটা গভির হতে হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার এর মতন গভির হয়। কিন্তু চ্যালেঞ্জার ডিপ এলাকাটাতে হঠাৎ করে মাটি ভেঙ্গেগিয়ে আরো গভিরে পরে যায়। ফলে সেটি ১১ কিলোমিটারের মতন ডেবে যায়। আর অপর দিকে আস্তএকটা দ্বিপ সৃস্টি হয়ে যায়। পৃথিবীর যেহেতু গোলাকার তাই এই বিষয়টি আরো চমৎকার ভাবে ঘটে যায়। চিন্তা করে দেখেন যখন এই ঘটনা ঘটছিল কি ভয়ানক ভুমিকম্প আর অগ্নুৎপাতের সৃস্টি হয়েছিল ওই অঞ্চলগুলোতে।
কিছুদিন আগে সম্ভবত ২০১২ সালে হলিউডের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক জেমস ক্যামেরুন এই মারাত্মক স্থানে ডাইভ দিয়েছিলেন সাবমেরিন দিয়ে। এই স্থানটা মারাত্মক এই কারনে যে এই তলদেশে প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে পানির চাপ থাকবে ৭২৫ কেজি। এই চাপে সাধারন স্টিলের প্লেটই চিরে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার কথা। এর আগে Bathyscaphe Trieste নামক একটা expedition জাহাজ এই নিচে ডাইভ দেয়। তবে তারা তখনও অত নিে যেতে পারেন নি যতটা জেমস ক্যামেরুনগিয়েছেন।
৫) সর্বোচ্চ ঝরনা - Angel Falls
এটি ভেনেজুয়েলার Bolívar State নামক এলাকায় অবস্থিত। মুলত Auyán-tepui পর্বত শ্রেনি থেকে আসার পানি সংকিন্য ধারাটি এই খারা প্রান্ত থেকে সরাসরি পতিত হয়ে এই ঝর্নাটির সৃস্টি করেছে। এর নামকরন করা হয়েছে আমেরিকান বিমান চালক Jimmie Angel এর নামানুসারে। যিনি প্রথম এই ঝরনাটার উপর দিয়ে বিমান চালনা করেন। পরবর্তিতে তার মৃত্যুর পরে তার দেহবশাষেস এর ছাই এই ঝরনাতেই উরানো হয়।
মোটামুটি ৯৮০ মিটার বা প্রায় এক কিলোমিটার উপর থেকে পানি কোন বাধা ছারাই নিচে পরে। এর আবার সেই পানি গরিয়ে আরো ৪০০ মিটার বা ১৩০০ ফিটের মতন গরিয়ে Gauja নদীতে গিয়ে পরে। এই সময়ে বেশিরভাগ পানিই কুয়াশা হিসাবে চারিদিকে ছরিয়ে পরে। কারন এত উপর থেকে পরার সময় পানির কনাগুলো আলাদা হয়ে যায় ফলে সেগুলো ভর হারিয়ে বাতাসে ভাসতে শুরু করে।
এই ঝরনাটি এভাবে সৃস্টিহবার কারন হচ্ছে দুটি। এক পর্বতটি এই স্থানে এছে একবোরে প্রায় ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে খারা হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত লক্ষাধিক বছর আগে বড়ধরনের কোন ভুমিধ্বসে খারা ভাবে এটির সৃস্টি হয়েছে। আর দ্বিতিয়ত পুরো পর্বতের মাথাট প্রায় সমতল এবং ঠিক এই স্থানে হালকা একটু ঢাল রয়েছে। ফলে সমস্ত পর্বতের পানি চুইয়ে এখানে এসে জমা হয় এবং একেবারে হঠাৎ করে পতিত হয়।
লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবছর এই ঝরনাটি দেখতে এই অঞ্চলে যায়। অসাধারন এই পাহারি অঞ্চলটি ভেনেজুয়েলার অন্যতম একটি টুরিস্ট অঞ্চল।
এই পর্বটার মাত্র শুরু হইলো। এখনো প্রায় ৫ টা পর্ব বাকি আছে। প্রায় ২৫ টার মতন বিষয় আছে। অনেক কিছু শিখছি আমি এই বিষয়গুলোর উপরে স্টাডি করে। আশা করি আপনাদের কাছে বিষয়গুলো আরো ভালো লাগবে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০