নিজের এক ড্রাম কোকাকোলা থাকা। কোকাকোলা তখন আমার জীবনে খুবই দুর্লভ বস্তু। কাচের বোতলের ৩৩০ মিলি আর ১ লিটারের কোকাকোলা পাওয়া যেত তখন। স্বাদ ছিল অমৃতের মত। সারা বছরে দু তিন বার সৌভাগ্য হত ৩৩০ মিলির এক বোতল কোক খাওয়ার। মাঝে মাঝে ৩৩০ মিলির বোতলের কোক আধাআধি ভাগ করতে হত ছোট বোনের সাথে। তাড়াতাড়ি যাতে শেষ হয়ে না যায় সেজন্য একটু একটু করে চুমুক দিতে খেতাম। এক ঘন্টা লাগিয়ে আধা বোতল কোক খাওয়া হত। কোকের পরিমান বাড়ানোর জন্য পানি মেশানো ছিল আবশ্যক। একটু করে পানি ঢালতাম আর চুমুক দিয়ে দেখতাম স্বাদ খুব বেশী পানসে হয়ে যাচ্ছে কিনা। পানসে হবার সম্ভাবনা যখন দেখা দিত পানি মেশানো বন্ধ করে দিতাম। কোক খাবার আনন্দময় মূহুর্ত যতটা প্রলম্বিত করা সম্ভব ছিল করতাম। আফসোস ছিল যে নিজেদের ফ্রীজ ছিল না। নিজেদের ফ্রীজ থাকলে ঠান্ডা পানি মেশাতে পারতাম। সাধারন তাপমাত্রার পানি মেশানোতে কোকের শীতলতা রক্ষা করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিত। তাছাড়া ফ্রীজ থাকলে দুই চুমুক খেয়ে বাকিটুকু ফ্রীজে সংরক্ষিত করতে পারতাম। ফলে আধাবোতল কোক এক সপ্তাহ ধরে খাওয়াও অসম্ভব কিছু হত না। কোক খাবার পরে আবশ্যাম্ভিক একটি বিষয় ছিল মুতু করা। কারণ কোক আর এর সাথে মেশানো পানি ছোট মুত্রথলি বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারত না। কল্পনা করতাম নিজের একড্রাম কোক আর একটা ফ্রীজ। কল্পনা করতাম তপ্ত দুপুরে শুষ্ক জিহ্বায় ইচ্ছেমত কোকাকোলার স্বাদ নেবার দৃশ্য। আহা! যদি আমার বিশাল পরিমানে কোকাকোলার সাপ্লাই থাকতো!
চিপস! বোম্বে সুইটসের সবুজ প্যাকেটের চিপস। লাল প্যাকেটের পটেটো ক্র্যাকার্সও ভাল ছিল, তবে সবুজ প্যাকেট ভর্তি সেই চিপস আজও আমায় তাড়া করে বেড়ায়। বহু কোম্পানীর বহু নামী দামী চিপস খেয়েছি। কিন্তু আজও আমি বোম্বে সুইটসের সবুজ প্যাকেটটাকেই ভালা পাই। মুদির দোকানে সাদা পলিথিনের বড়ি বস্তায় করে চিপসের ছড়া আনা হত। চেয়ে চেয়ে দেখতাম আর ভাবতাম, যখন আমি বড় হব তখন আমিও এইরকম বিরাট এক বস্তা চিপসের গাট্টি কিনব। তারপরে ইচ্ছামত চিপস খাব। আপনারা "হ্যারল্ড আর কুমার" মুভিটি দেখেছেন কিনা জানিনা। মুভিটিতে একটা দৃশ্য থাকে যেখানে কুমার এক বস্তা গাঞ্জার কল্পনা করে। কল্পনায় সে বিশাল বস্তাটার সাথে এতটাই যুক্ত থাকে যে গাঞ্জার বস্তাটাকে সে মেয়েবন্ধুর সাথে বিছানায় নিয়ে যায়, বস্তাটাকে বিয়ে করে, বস্তাটার সাথে ঘর সংসার করে। এখনই ঐ দৃশ্যে প্রাপ্ত বয়ষ্ক কুমারের জায়গায় অপ্রাপ্তবয়ষ্ক একজন বালক আর গাঞ্জার বস্তার জায়গায় চিপসের বস্তা কল্পনা করুন। হ্যা চিপসের বস্তা নিয়ে আমার ঐরকমই আকাঙ্ক্ষা ছিল। বড় দৃড়মনষ্ক ছিলাম, একদিন একবস্তা চিপসকে আমি নিজের করে নিয়ে নেব। আচ্ছামত খাব চিপস, প্যাকেটের পর প্যাকেট, প্যাকেটের পর প্যাকেট। আমাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না এই ভেবে যে চিপসের প্যাকেট খালি হয়ে গেল বলে!
এক ড্রাম কোক অবাস্তব হিসেবে মনে করলেও চিপসের বস্তাটাকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলেই মনে করতাম। ছয় টাকা বোতলের কোক ছিল আমার পরিমীত জীবনের ক্ষরতাপে এক পশলা বৃষ্টির মত।
পরবর্তী পর্বে থাকবেঃ
বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
রোদের মাঝে বৃষ্টি হওয়া।