মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বে জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাস ১ম পর্ব
মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বে জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাস ২য় পর্ব
জোসিওন যুগের গোড়ার দিকে ইসলামি বর্ষপঞ্জি বিদ্যমান চৈনিক নির্ভর বর্ষপঞ্জিসমূহের উপর তার উচ্চতর নির্ভুলতার কারণে বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতো। হুইহুই লিফার কোরিয়ান অনুবাদ জামাল আদ-দীনও ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী । আর তার ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত রচনার সাথে চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংমিশ্রনের এক পাঠ্য, ১৫ শতকে সেজোং-এর সময়ে জোসিওন রাজবংশে কোরিয়ায় পঠিত হয়। ১৯ শতকের গোড়ার আগ পর্যন্ত কোরিয়ায় চৈনিক-ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথা টিকে ছিল।ইসলামে প্রথম শৃঙ্খলাবদ্ধ পর্যবেক্ষণ আল-মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটার বিবরণ পাওয়া যায়। দামাস্ক থেকে বাগদাদ পর্যন্ত আরও অনেক ব্যক্তিগত মানমন্দিরে, মাধ্যাহ্নিক মাত্রা পরিমাপ করা হয় সৌর স্থিতিমাপ স্থাপন করা হয়, এবং সূর্য, চাঁদ আর গ্রহসমূহের বিশদ পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করা হয়।
দশম শতাব্দীতে, বুওয়াহিদ রাজবংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিস্তৃত কাজ সম্পন্নে উৎসাহ প্রদান করে, যেমন একটি বিশাল-পাল্লার যন্ত্র গঠন যা দ্বারা ৯৫০ সালে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সম্পর্কে আরো জানা যায় জিজ-এ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যেমন ইবনে আল-আলম দ্বারা লিপিবদ্ধ বিবরণী থেকে। মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবদ আল-রহমান আল সুফি রাজকুমার আদুদ এবং-দৌলেহের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন যিনি টলেমীর তারার তালিকা শৃঙ্খলাবদ্ধ পুনঃনিরীক্ষণ করেন। শারাফ আল-দৌলাও বাগদাদে একই রকম মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এবং টলিডো এবং করডোবা’য় ইবনে ইউনুস এবং আল-জারকালের বর্ণনা তাদের সময়ে কৃত্রিম যন্ত্রের ব্যবহারের ইঙ্গিত করে।তিনি ছিলেন প্রথম মালিক শাহ যিনি সর্বপ্রথম বিশাল মানমন্দির স্থাপন করেন, সম্ভবত ইসফাহান-এ। সেটা এখানেই ছিল যেখানে ওমর খৈয়াম আরও অনেক সহকর্মীর সাথে একটি জিজ নির্মাণ করেন এবং ফার্সি সৌর বর্ষপঞ্জি ওরফে জালালি বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করেন। আর সেই বর্ষপঞ্জির আধুনিক এক রুপ এখনও বর্তমানে ইরানে দাপ্তরিকভাবে ব্যবহার হয়।সবচেয়ে প্রভাবশালী মানমন্দির যদিও স্থাপিত হয় হেলেগু খান দ্বারা ১৩শ শতকের সময়। এখানে, নাসির আল-দীন আল-তুসি মারাগায় এর প্রযুক্তিগত নির্মাণ তদারকি করেন। স্থাপনাটিতে ছিল হেলাগু খানের বিশ্রামাগার, সেই সাথে একটি গ্রন্থাগার এবং মসজিদ। সেইকালের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কয়েকজন সেখানে একত্র হতেন, এবং তাদের সহায়তায় টলেমীয় ব্যবস্থার গুরুত্মপূর্ণ অদলবদল উৎপন্ন হয় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। সমরকন্দের উলুগ বেগ মানমন্দির।
১৪২০ সালে, রাজকুমার উলুগ বেগ, নিজে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ, সমরকন্দে আরেকটি বিশাল মানমন্দির নির্মাণ করেন যার ভগ্নাবশেষ ১৯০৮ সালে রাশিয়ান দল দ্বারা খনন করা হয়।এবং অবশেষে, অটোম্যান ইস্তাম্বুলে ১৫৭৭ সালে তাকি আল-দীন মুহাম্মদ ইবনে মা’রুফ এক বিশাল মানমন্দির স্থাপন করেন, যা মারাগা এবং সমরকন্দের গুলোর মত বিশাল ছিল। মানমন্দিরটি যদিও ক্ষণস্থায়ী ছিল, মানমন্দিরের বিরোধীরা ছিল এবং নিয়তির পূর্বলক্ষণ প্রাদুর্ভূত হল এবং মানমন্দিরটি ১৫৮০ সালে ধ্বংস হয়ে যায়।যদিও অটোম্যান পাদ্রীরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিজ্ঞানের বিরোধিতা করতেন না, মানমন্দিরটি প্রধানত জ্যোতির্বিদ্যার জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল, যার বিরোধিতা তারা করেন, এবং সফলতার সাথে এর ধ্বংস অন্বেষণ করেন। ত্বকি আল-দিনের মানমন্দিরের কাজ
মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের উৎস দুটিঃ প্রথমত বর্তমানের ব্যক্তিগত এবং জাদুঘরে অবশিষ্ট সংগ্রহ থেকে এবং দ্বিতীয়ত মধ্যযুগের সংরক্ষিত গ্রন্থ এবং পাণ্ডুলিপি। স্বর্ণযুগের মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের সময়ে্র আগে থেকে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহের প্রচুর উন্নতিসাধন করেন যেমন নতুন পাল্লা বা বিবরণ যোগ।আকাশ সংক্রান্ত বিশ্ব এবং আরমিলেয়ারি গোলকসমূহ সাধারণত আকাশ সংক্রান্ত গোলকসমূহ জ্যোতির্বিজ্ঞানে সমস্যাসমূহ সমাধানে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে, এমন ১২৬টি যন্ত্র পুরো পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে ।আর সবচেয়ে পুরনোটি ১১দশ শতাব্দী থেকে। সূর্যের উচ্চতা, অথবা তারকারাজির সঠিক উদয় বা বিনতি এসব দ্বারা হিসেব করা যায় পর্যবেক্ষকের অবস্থান গোলকের চরম বলয়ে প্রবেশ করে।
একটি আরমিলেয়ারি গোলকের প্রয়োগও একই রকম। প্রাচীন কোন ইসলামি আরমিলেয়ারি গোলক বিদ্যমান নেই কিন্ত বলয়যুক্ত যন্ত্রের উপরে বেশ কিছু গ্রন্থ লেখা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গেও একটি ইসলামি উন্নয়ন আছে, গোলাকার এস্ট্রোলোব যার মাত্র একটি সম্পূর্ণ যন্ত্র ১৪দশ শতাব্দীর বিদ্যমান আছে।তামার এস্ট্রোলোবসমূহ ছিল একটি গ্রীক আবিষ্কার। এস্ট্রোলোব প্রস্তুতকারী প্রথম ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হচ্ছেন মুহগামাদ আল-ফাজারি । স্বর্ণযুগে ইসলামি বিশ্বে এস্ট্রোলোব জনপ্রিয় ছিল প্রধানত কিবলা খোঁজার সহায়ক হিসেবে। সবচেয়ে প্রাচীন জ্ঞাত উদাহরণ হল ৯২৭/৮ বা হিজরি পরবর্তী ৩১৫।যন্ত্রগুলো ব্যবহৃত হত সূর্য এবং স্থায়ী তারাগুলোর উদয়ের সময় জানার জন্য। আন্দালুসিয়ার আল-জারকালি এ ধরণের এক যন্ত্র তৈরি করেন যা, তার পূর্বসূরিদের বিসদৃশ পর্যবেক্ষকের অক্ষাংশের উপর নির্ভর করত না এবং যে কোন স্থানে ব্যবহার করা যেত। ইউরোপে যন্ত্রটি সাফিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫৪