somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজো বেঁচে আছে বিষবৃক্ষ

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতার কিছু আগে অবিভক্ত ভারতবর্ষে বৃটিশরা পুঁতেছিল বিষবৃক্ষের বীজ ।কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের হর্তাকর্তারা কতক বুঝে আর কতক না বুঝেই পরিচর্যা করেছিল সেই বিষবৃক্ষের ।তারপর সেই বিষবৃক্ষের সাম্প্রদায়িকতার ফ্লেভার মেশানো বিষাক্ত ফল গলাধঃকরণ করল তামাম ভারতবর্ষ ।সাম্প্রদায়িকতার নিশান উড়িয়ে উন্মাদ হল জনতা ।হিন্দুর খাঁড়ায় বলি হল ম্লেছ মুসলমান আর মুসলমানদের রেতির চোটে জবাই হল মালাউন হিন্দু। ভারতবর্ষের মাটি যেন পরিণত হল নরবলির যূপকাষ্ঠে ।১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ৭২ ঘন্টায় নিহত হয় চারহাজারের বেশি সাধারণ জনতা , গৃহহারা হয় একলক্ষ লোক ।বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালীতেই ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসের দাঙ্গায় হত্যা করা হয় ৫০০০০ হিন্দুকে।
প্রত্যন্ত গ্রামাবাসী, রাজনীতির সাথে যাদের প্রত্যক্ষ কোন যোগাযোগ ছিলনা তারাও সাম্প্রদায়িকতার উস্কানিতে মেতে ওঠে বীভৎস হত্যালীলায় ।হিন্দু মুসলমানদের স্বতস্ফূর্ত সহানুভূতিশীল সম্পর্ক নিদারূন তিক্ততায় বদলে দিল বিষবৃক্ষের ফল । ফলবতী বিষবৃক্ষের সাফল্যে গর্বিত কৃষকের আনন্দ বুকে নিয়ে মদের গ্লাসে ঠোকাঠুকি করল বৃটিশ সরকার ।
স্বাধীনতা অর্জিত হলেও সেই বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাটিত হয় নি ।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও নিজ নিজ ধর্ম-ধ্বজা নিয়ে একে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে কত-কতবার !এইতো কয়েক বছর আগের গুজরাট দাঙ্গায় নিহত হয়েছে দুইহাজারের বেশি মুসলমান।গুজরাট দাঙ্গার নারকীয় চিত্রের কিছুটা পাওয়া যায় কবি দিলওয়ারের ‘গুজরাট দিচ্ছে ডাক’ প্রবন্ধে-
“সব জায়গা থেকে গনধর্ষণের খবর আসছে । নারীদেরকে তাদের পরিবারের সামনে ধর্ষন করা হয়েছে। তারপর নানাভাবে তাদেরকে মারা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে, নয়ত ভোঁতামাথা অস্ত্র দিয়ে ছেঁচে , একটি ক্ষেত্রে স্ক্রু ড্রাইভার ছিল হত্যাস্ত্র।”
আমরা অতীত কিংবা ইতিহাস থেকে কখনই শিক্ষা নেই না ।বিষবৃক্ষের ফলটির মদিরতাময় গন্ধ তাই এখনও পাওয়া যায়।
ফেসবুক আর ব্লগে কিছুদিন আগে ক্লাস সিক্সের পাঠ্যবইয়ের সত্যেন সেনের একটি গল্প -‘লাল গরুটি’ নিয়ে বেশ মাতামাতি দেখলাম ।গল্পের নিধিরাম তার বৃদ্ধ গরুটিকে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়।কিন্তু গরুটির প্রতি নিজের এবং পরিবারের অন্যান্যদের তীব্র ভালবাসা অনুধাবন করে গরুটিকে আবার কসাইয়ের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনে নিধিরাম।
অবাক লাগে দেখে, এ গল্পে শিশুমনে পশুপ্রেম সৃষ্টির প্রয়াস দেখতে পাচ্ছেন না কেউ কেউ।তারা দেখেন মুসলমান শিশুদের যাতে ভবিষ্যতে গোমাংসে আসক্তি না জন্মে সেই পাঁয়তারা করছেন সত্যেন সেনের মত মালাউনরা ।
যতদূর মনে পড়ে ২০০২ এর ক্লাস ফাইভের পাঠ্যবইয়ে পুটু নামের একটি গল্প ছিল যেখানে বাড়ির কর্ত্রীর ভালবাসার কারণে পুটু নামের ছাগলটিকে কোরবানী ঈদে জবাই করতে পারেন না কর্তা ।
শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পের গফুর মুসলমান হয়েও মহেশকে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করতে পারে নি।
পুটু এবং মহেশ গল্পের কথা মনে হয় ভুলেই গিয়েছেন সাম্প্রদায়িকতার চাদর গায়ে দেওয়া সেই নামকেওয়াস্তে ধার্মিকরা, ভুলে গেছেন ক্লাস ফাইভে জসীম উদ্দিনের সংকলিত মহামানব মহানবী সাঃ এর বিদায় হজের শেষ লাইনকটি ।
“ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না ।নিজের ধর্ম পালন করবে ।যারা অন্য ধর্ম পালন করে তাদের উপর তোমার ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।”
মাঝে মাঝেই শওকত ওসমানের দুই ধার্মিক গল্পের মত ধার্মিকদের দেখতে পাই।
“(গলির এপার হইতে)হিন্দু কা মা কা ,বহেনা কা…………নারায়ে তাকবীর।
(গলির ওপার হইতে)মুসলমান কা মা কা বাহেনকা……….বন্দে মাতরম।”
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৩৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বন্ধ করা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৪১


সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বহুল আলোচিত "ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন" বন্ধ করা নিয়ে অনেককেই উদ্বিগ্ন দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমাদের মতো সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তার কারণ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনা প্রধানের ভুমিকা আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ!

লিখেছেন আহলান, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:০৮




বর্তমানে দেশে সেনা প্রধানের ভুমিকা নিয়ে অনেকের মনেই নানা রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রতি সাধারণ জনগনের যে আস্থা বিশ্বস্ততা তৈরী হয়েছিলো, তাতে বেশ ভাটা পড়তে শুরু করেছে। আমার কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বিশেষ ভূমিকা পালনকারী দল। দলটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫১

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

বিএনপি জানে তাদের মূল প্রতিপক্ষ কারা.....
ছাত্রসমন্বয়করা জানে রাজনীতিতে তাদের দৌড় কতদূর...

তারেক রহমানের যখন দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে তখনই হাসনাত গং নানান কাহিনী শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৮

পিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের একটা জরীপের ফলাফল নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। পিউ রিসার্চ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সামাজিক জরীপ এবং গবেষণা সংস্থা। এই জরীপের বিষয় ছিল, ২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×